স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হানিফ মৃধার মৃত্যুর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার যুবকের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। কোনটি সত্য? র্যাবের ব্যাখ্যা সত্য, নাকি তার পরিবারের সদস্যের ব্যাখ্যা সত্য। তিনি আরও বলেন, যদি পরিবারের কথা সত্য হয়ে থাকে, আমরা কোন দেশে বাস করছি? আমি দাবি করছি, সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার জন্যও ফের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিশ দলীয় জোট শরিক এনপিপির আলোচনা সভায় দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব দাবি তোলেন। ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ জিয়ার ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট শীর্ষক’ এ আলোচনা সভা হয়। হানিফ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা নয়, অসংখ্য ঘটনা এ রকম ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছে এক কথা, পরিবার বলছে তুলে নেয়া হয়েছে। পরিবারগুলোর দাবি যদি সঠিক হয়, তাহলে কি আমরা এই দাবি করতে পারি যে, একটা অত্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই লোকগুলোকে তুলে নিয়ে গিয়ে পরবর্তী সময়ে তাদের জঙ্গি বানিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বা জঙ্গিবাদকে প্রকাশ করার জন্য তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে? এটা কিন্তু খুব গুরুতর প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর গ্রেপ্তার আব্দুল হানিফ মৃধা অসুস্থ হয়ে মারা যান বলে র্যাবের দাবি। অন্যদিকে হানিফের পরিবারের দাবি, গত মাসে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়া হয়। হানিফের সন্ধান চেয়ে গত ৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তার ভাই আব্দুল হালিম মৃধা। তাতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হানিফ মৃধা ও তার এক বন্ধুকে নারায়ণগঞ্জের কাচপুর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। গত শনিবার বিকালে হানিফের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গেলে তার মৃত্যুর খবরটি জানাজানি হয়। তার আগের দিন র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানায়নি। লাশ মর্গে যাওয়ার পর র্যাব জানায়, শুক্রবার আশকোনায় আত্মঘাতীর বিস্ফোরণ ঘটানোর পর বিকালে ওই এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে হানিফকে গ্রেপ্তার করেছিল তারা। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। এদিকে, হানিফ নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবার যে জিডি করেছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি রবিবার গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।
হানিফের প্রসঙ্গ তুলে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে জঙ্গিবাদ ব্যবহার করার অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এই সরকার একটা গভীর ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে, সেই খেলা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে আমরা জানি না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান-এই উপমহাদেশের তিনটি রাষ্ট্রকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আমরা মনে করি, জঙ্গিবাদকে এই সরকার ব্যবহার করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। আন্তরিক নয় তারা জঙ্গিবাদের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য। বাংলাদেশকে আজ জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু হয়ে গেছে।
সরকার জঙ্গিবাদকে বিরোধীদল দমনের হাতিয়ার করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে খেলবেন না। এর সুষ্ঠু তদন্ত করুন। কোথায় এর মূল কারণ, সেটা বের করুন। কোথায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে, এটা বের করতে হবে এবং এর সমাধান করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সীজার হত্যার পরে আমরা বলেছিলাম, এই আগুন নিয়ে খেলবেন না। জঙ্গিবাদের আগুন ভয়াবহ আগুন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো লেশমাত্র নাই। সুফীবাদের মধ্য দিয়ে, শান্তির মধ্য দিয়ে এদেশের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, পরস্পরের সহনশীলতার মধ্য দিয়ে এদেশ গড়ে উঠেছে। এখানে ধর্মপ্রিয়তা আছে, ধর্মান্ধতা নেই। আমরা সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জঙ্গিবাদকে নিয়ে খেলবেন না। এর সুষ্ঠু তদন্ত করুন। কোথায় এর মূল কারণ, সেটা বের করুন। কোথায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে, এটা বের করতে হবে এবং এর সমাধান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে জনগণের প্রত্যাশা নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা তিস্তা নদীর পানি চাই। আমরা ফারাক্কা বাঁধে যে সর্বনাশ হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমাদের সীমান্তে যেন অন্যায়ভাবে হত্যা করা না হয় এবং অন্যান্য যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়, দেশের স্বার্থের বিপরীতে যায়, ভারতের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি না করতে সরকারকে হুশিয়ার করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। তার মানে এই নয়, বাংলাদেশ তার নিজস্ব সত্তা বিলিয়ে দিয়ে মিলে যাবে। আমরা যুদ্ধ করেছি রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করব।
নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবি আবারও জানান বিএনপি মহাসচিব। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। কারণ দেশের মানুষ মনে করে একমাত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিরাজমান সংকট নিরসন সম্ভব। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন চায়। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাই।
তাঁত শিল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁত শিল্প শেখ মুজিবুর রহমান চলে যাওয়ার পরে ধ্বংস হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক সত্যটা কী? শহীদ জিয়াউর রহমান তাঁত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তাঁত বোর্ড গঠন করেছিলেন, সেই বোর্ড গঠন করার মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে তাঁত শিল্পে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে। পোশাক শিল্পসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন শহীদ জিয়া। একদিকে কৃষিতে বিপ্লব এনেছিলেন, অন্যদিকে শিল্প বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন।
এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন