শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মাদ ফাত্হুল বারী ফাইয়্যাজ, খেজুরবাগ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : রাসূল (সা.)-এর নূরানিয়াত ও বাশারিয়াত সম্পর্কে জানতে চাই?

জবাব : রাসূল (সা.)-এর নূরানিয়াত ও বাশারিয়াত নিয়ে এক শ্রেণীর আলেমরা প্রায়ই কথা উঠায়। আফসোস্ ওরা রাসূল (সা.)-কে একেবারে ওদের মত মানুষভাবে। আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট এসেছে একটা নূর ও সুষ্পষ্ট কিতাব’ (সূরা. মায়েদা)।
এখানে নূর দ্বারা রাসূল (সা.)-কে বুঝানো হয়েছে। রাসূল (সা.) ও বলেছেন, “আমি আল্লাহর নূরে এবং সমুদয় সৃষ্টি আমার নূরে।” (হাদীসে কুদসী) বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফে লিখেছেনÑ “আল্লাহ তা’য়ালা আপন জাতি নূরের জ্যোতি দিয়ে নবীজীর নূর পয়দা করেছেন। মোজাদ্দেদ-ই-আলপেসানী (র.) বলেছেন ঃ আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে স্বীয় নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।” জুরকানী শরীফ ৪র্থ খন্ডে আছে ঃ “সূর্য-চন্দ্রের আলোতে নবী করীম (সা.)-এর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন আপাদ মস্তক নূর।” ইমাম কাজী আয়াজ শিফা শরীফের ১ম খন্ডে লিখেছেন ঃ নবূয়তের নিদর্শন ও দলীল হিসাবে যে রেওয়াতটি পেশ করা হয় তা হচ্ছে ঃ ‘দিনের সূর্যের আলো, কিংবা রাত্রে চাঁদের আলোতে হুজুর (সাঃ) এর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না, কেননা তিনি ছিলেন আপাদ মস্তক নূর।” এ প্রসঙ্গে ১২ শরীফের ইমাম (র.) বলেছিলেন, “প্রচলিত বই কিতাবে বলা হয়েছে যে, তাঁকে মেঘে ছায়া দিত যাতে তিনি কষ্ট না পান। আসলে কি তাই? তাঁর জীবনে তিনি কোন কষ্ট পান নাই। তাঁর যে ছায়া নেই এটা যাতে সময়ের পূর্বে প্রকাশিত হয়ে পড়লে তাঁর জীবনের ক্ষতি হতো তাই। যখন চল্লিশ বছর বয়সে নব্যুয়ত প্রাপ্তি হন তখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেনÑ “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই আর মোহাম্মদ তার রাসূল।” তখন মেঘ সরে যায়।
আরবের অধিবাসী ও অবিশ্বাসীরা কোন মানুষ নবী হতে পারে তা স্বীকার করতো না। তাই, রাসূল (সা.) তাদের কথার উত্তরে বলেছিলেনÑ “আমি হচ্ছি কেবল একজন মানুষ রাসূল (“সূরা. বনী ইসরাইল) আল্লাহও তাঁকে নির্দেশ দেনÑ “আমি তোমাদের মতই মানুষ, পার্থক্য শুধু এই যে; আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়, আর তোমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ”। (সুরা. কাহাফ)
রাসূল (সা.) নূর এবং বশর উভয়টি ছিলেন। তাঁর হাকিকত অর্থাৎ সৃষ্টিগত মূল নূর এবং আকৃতি বলার মানুষ। জিব্রাইল (আ.) বহুবার মানুষের আকৃতিতে রাসূল (সা.) এর কাছে এসেছেন। মানব আকৃতি ধারণ করার জন্য তাঁর নূরানিয়াত চলে যায়নি। নূরানিয়াত ও বাশারিয়াত পরস্পরের পরিপন্থী নয়। এটা স্বতসিদ্ধ যে বাশারিয়াত এর সূচনা হযরত আদম থেকে। মানুষ বা বাশার হিসাবে যদি মোহাম্মদ (সা.) প্রথম হতেন তাহলে আদম (আ.) মানব জাতির পিতা হতেন না। তাই এ কথা অবশ্যই মানতে হয় যে হুজুর (সা.) সৃষ্টির সূচনা থেকে নূর এবং শারীরিক দিক থেকে বশর। আর পৃথিবীর সম্পর্ক ঐ দেহের সাথে সম্পর্কিত।
তাই মি’রাজ রজনীতে তাঁর হাকিকী ছুরত দেখে জিব্রালীন বলেছিলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ, দুনিয়াতে মানুষের রাজ্যে আপনাকে দেখেছি বসার” (মানুষ্য এর ছুরতে, আসমানে ফেরশতাদের রাজ্যে দেখছি ফিরশতাদের ছুরতে, আর এখন ‘ছিদ্রাতুল মুনতাহায় দেখছি অন্য এক ছুরতে, যা আগে কখনো দেখিনি।” এসব কথা ঐসব ওহাবী আলেমরা কেন বুঝে না যে, বিদ্যুৎকে তারের আবরণেই প্রকাশ করতে হয়।
আল্লাহর নূর যেমন জ্যোতির্ময়, নূরে মোহাম্দী ও তেমনি জ্যোতির্ময়। আল্লাহর নূরের যেমন কোন ছায়া নেই, নূরে মোহাম্মদীর ও তেমনই কোন ছায়া নেই। এই দুই নূরই সম্পূর্ণ অতিন্দ্রিয়, একটা জালালী, অপরটা জামালী। তাই তিনি মানুষ ও নূর-নবী উভয়ই।
একজন মানব বা মহামানবকে বেঁচে থাকার জন্য বাতাস, পানি, আলো, খাদ্য অপরিহার্য। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম মাটি, আর পানির সাথে মিশ্রিত হননি।” তখন তিনি ছিলেন “নূর-নবী। তাই তাঁর এক উপাধি “নূরুল্লাহ”। কি অবস্থা ও পরিবেশের প্রেক্ষিতে রাসুল কি কথা বলেছেন এর সানে নাযুল জানতে হবে। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত শরীয়ত জ্ঞান এর সাথে সাথে মারেফাত জ্ঞান অর্জনে দয়া করুন। উত্তর দিচ্ছেন : নাজির আহাম্মদ জীব

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন