পঞ্চায়েত হাবিব ও সাদিক মামুন : নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রভাব, প্রশাসনিক চাপ, ধরপাকড়, গুম আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতপুষ্ট আচরণের রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে দেশে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্নের মধ্যদিয়ে সেই রেওয়াজের পতন ঘটিয়ে কুমিল্লা থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার যাত্রায় সফল হলেন নতুন নির্বাচন কমিশন। ভোটের আগের দিন রাতে কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের বিষয়টি সিদ্ধহস্তে নিয়ন্ত্রণ করে কমিশন ভোটারদের মন থেকে সকল উৎকণ্ঠা দূর করে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। আর সেই পরিবেশের পথ ধরে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। লক্ষাধিক ভোটারের রায়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কুমিল্লা নগর অভিভাবকের আসনে বসার অধিকার পেলেন সাক্কু। নির্বাচনে ১০৩টি কেন্দ্রের ফলাফলের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। আর আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। নির্বাচনে মোট ২লাখ ৭হাজার ৫৬৬জন ভোটারের মধ্যে ১লাখ ৩২ হাজার ৬৯০জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যেখানে ভোটারের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৯২ভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় টায় কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল কুসিক নির্বাচনের এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থী সাক্কুকে ঘিরে টাইনহলের বাইরে অপেক্ষমান বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী সমর্থক এবং সাক্কুর নানুয়াদিঘী বাসভবনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে বিএনপি সমর্থকরা আনন্দ উল্লাস করে। টানা দ্বিতীয় জয়ে দলের নেতাকর্মী ও নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকলকে সাধুবাদ জানান সাক্কু। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৪জন এবং মেয়র পদে ৪জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
শেষ পর্যস্ত আশা-আশঙ্কার দোলাচলে থাকা কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হলেন। পাঁচ বছর আগে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আফজল খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সাক্কু। আর এবারে সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে সেই আফজল খানের কন্যা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করার মধ্যদিয়ে ভোটাররা আবারও প্রমাণ করলো তৃণমূলের সাক্কুই সেরা। নজীরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের হাত ধরে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সারা দেশবাসীর কাছে এক যুগান্তকারি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রই তাদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। সকাল সাড়ে ৮টায় ২৪নম্বর ওয়ার্ডের শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দখলে নেয় এবং সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে বিএনপির কোন এজেন্ট প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর নির্বাচনী সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রিংকু ওই কেন্দ্রে গিয়ে এজেন্ট বের করে দেয়ার ঘটনা প্রিজাইডিং অফিসারকে জানালে তিনি এজেন্ট নিয়ে আসার জন্য বলেন। এজেন্ট নিয়ে আসলে কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওসি মশিউর ও সাব-ইন্সপেক্টর এনামুল বাধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে প্রিজাইডিং অফিসার নিজে এসে এজেন্টদের ভোটকক্ষে নিয়োগ দেন। এরপরেই ওই কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বেলা সাড়ে এগারটায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাকতলা স্কুল কেন্দ্র ও বিউবো স্কুল কেন্দ্র আওয়ামী লীগের লোকজন দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ওই কেন্দ্র দুইটিতে বিএনপি প্রার্থীর কোন এজেন্ট ছিলনা। আধঘন্টা পর একই ওয়ার্ডের সিটি সরকারি কলেজ কেন্দ্রে জালভোট ও কেন্দ্র দখল করলে বিএনপির অভিযোগের ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। এছাড়াও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর মডার্ণ স্কুল কেন্দ্র, গোবিন্দপুর স্কুল কেন্দ্র, রামকৃষ্ণ স্কুল কেন্দ্র, পুলিশ লাইন স্কুল কেন্দ্র, হারুন স্কুল কেন্দ্র, ফরিদা বিদ্যায়তন স্কুল কেন্দ্র, সুজানগর নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, নেউরা এমআই স্কুল কেন্দ্র, বল্লবপুর স্কুল কেন্দ্র ও ধনাইতরি স্কুল কেন্দ্রসহ অন্তত ৩০টি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রভাব বিস্তার করে জাল ভোটের মহোৎসব চালায়। এদিকে বিকেল সোয়া তিনটায় মডার্ণ স্কুল কেন্দ্র দখলের খবর পেয়ে সেখানে নিজে এসে উপস্থিত হন বিএনপির প্রার্থী সাক্কু। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে পরে নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে কেন্দ্রে কিছুটা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসে। অন্যদিকে কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও এক্ষেত্রে বিএনপির তেমন নেতা কর্মী চোখে পড়েনি। তবে অনেকেই বুকে নৌকা প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা এবং আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তারের মাঝেও নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবী করেছেন নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণের আগের দিন বায়বীয় নানা খবরে সাধারণ ভোটারদের মাঝে কিছু মহল আতঙ্ক ছড়ালেও নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে। শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে ভালো অভিজ্ঞতার কথা শোনা গেছে অনেক ভোটারদের মুখ থেকে। তাদের মধ্যে ভোট দেয়ার উচ্ছ¡াসও ছিলো। কেবল তাই নয়, ছেলে বা নাতির কাঁধে শতবর্ষী ভোটারও এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি পরিবেশ বর্ণিল করে তুলে। নতুন প্রজন্মের ভোটারের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। জীবনে প্রথমবারে মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ৬নম্বর ওয়ার্ডের নারী ভোটার নাসরিন আক্তার বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র মারামারি হয়, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয় এমনটিই এতোদিন শুনেছি। ভোট দেবো কী দেবোনা এনিয়ে মনের ভেতর একটা ভীতি কাজ করছিল। কিন্তু আজকে ভোট দিতে এসে কেন্দ্রের পরিবেশ দেখে সেই ধারণা পাল্টে গেছে। আমরা চাই দেশের প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে হোক। ভোট দেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার যেনো কখনো হরণ না হয়।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল কুমিল্লা হয়ে ওঠে ভোট উৎসবের নগরী। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ। দুই লাখের বেশি ভোটারের ভোটগ্রহণের বিশাল কর্মযজ্ঞে নগরীর ৫৩ দশমিক ৪বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কিছু বিছিন্ন ঘটনা ঘটলেও কোথাও বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশে প্রার্থী ও ভোটাররা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা সকাল ৯টায় ৮নম্বর ওয়ার্ডের মডার্ণ প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। এসময় তিনি ভোটগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে নৌকা প্রতীকের জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন সীমা। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ১২নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চর্থার হোচ্ছাম হায়দার হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন সকাল সাড়ে ৯টায়। ভোট প্রদান শেষে সাক্কু মিডিয়া কর্মীদের কাছে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ধনাইতরি ও শাকতলা কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হবেন। এদিকে কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ১১নম্বর ওয়ার্ডের রাণীর দিঘীপাড়ের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট হাইস্কুল কেন্দ্রে বেলা আড়াইটায় ভোট দেন। ভোট দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোন প্রশ্ন না ওঠে। তবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জেনেছি সব ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। শেষ পর্যন্তও নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হবে বলে আমি আশা করছি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোথাও প্রভাব বিস্তার করছে না।’
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ব্যবস্থা হাতে নিয়ে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন করছে। ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে বেশ কটি কেন্দ্র আমি ঘুরে দেখেছি। ইনশাল্লাহ সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। ভোটারদের মাঝে কোনও আতঙ্ক নেই। তারা স্বস্তিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে সবকটি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য স্থানীয়, জাতীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের প্রায় ৫শতাধিক সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সংস্থার অসংখ্য পর্যবেক্ষক ভোটগ্রহণের আগের দিন থেকেই কুমিল্লায় অবস্থান নেয়। প্রতিটি কেন্দ্রই স্থানীয়, জাতীয় সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল ও বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকদের ভিড়ে মুখরিত ছিল। আলোকচিত্রী সাংবাদিকরা ক্যামেরা তাক করে এদিক সেদিক ছুটে বেড়িয়েছে। বেশ কটি টেলিভিশন চ্যানেল বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে। দলীয়ভাবে ও দলীয় প্রতীকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এটিই প্রথম। তার আগে গত বছরের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে এরকম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিñিদ্র নিরাপত্তায় উৎসবমুখর পরিবেশে ২৬ প্লাটুন বিজিবি, ৩৪টি র্যাবের টিম, থানা পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গতকাল সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। নিরাপত্তার দিক থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কুমিল্লার জনগণ আর কখনো দেখেনি। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভীষণ খুশি ভোটাররা। সকাল থেকেই ১০৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যরা প্রতি ভোটকক্ষে দুইজন করে ভোটারকে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছেন। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা একজনকে ভোট প্রদানের গোপন কক্ষে পাঠিয়ে অন্যজনের যাবতীয় কাজ শেষ করে তাকে গোপন কক্ষে পাঠিয়েছেন। এভাবে প্রতিটি কেন্দ্রেই সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যদিয়ে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণ করেছেন। ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার পর কঠোর নিরাপত্তায় কেন্দ্রগুলোতে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও প্রার্থীদের নিয়োজিত পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়। তারপর সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে ভোট গ্রহণকারি কর্মকর্তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধীন কুমিল্লা টাউনহলে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে আসতে থাকেন। টাউন হলকে ঘিরে শেষ বিকেলে প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের মাঝে প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে কে হচ্ছেন সিটি মেয়র। নগরীর লিবার্টি মোড় থেকে পূবালী চত্বর পর্যন্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে। সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় টাউন হল এলাকায়। ফলাফল ঘোষণার জন্য টাউনহলে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করায় এই কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়।
চূড়ান্ত ফলাফলের খবর জানতে সন্ধ্যা সাতটায় বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু টাউনহলের কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা আসেননি। এমনকি টাউনহলে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীকেও দেখা যায়নি। রাত নয়টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বহুল আলোচিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ আইনশৃঙ্খলা জনিত কারণে স্থগিত করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে নির্বাচনী ফলাফল মাইকে ঘোষণা করা হয়। ফলাফলের খবর শুনে টাউন হলের বাইরে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ উল্লাসে মেতে ওঠে। এসময় সিটির দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এ বিজয় কুমিল্লার জনগণের। এবিজয় গণতন্ত্র রক্ষার বিজয়। যারা আমাকে সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাদের বিজয়। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন যে কাজ করেছি তার প্রতিদান ভোটাররা আমাকে দিয়েছে। আমি আরও অনেক বেশি ভোট পেতাম। আমার কর্মীরা পুলিশের ভয়ে কাজ করতে পারেনি। অনেকে ভোট দিতে আসিনি। যাই হোক আমাকে আবার নগরবাসী সম্মানের আসনে বসিয়েছে। আমি সবাইকে নিয়ে বিশ্বমানের একটি পরিকল্পিত নগরী গড়তে কাজ করে যাবো। আমার নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রæতি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চাই।’
এদিকে স্থগিত হওয়া কেন্দ্র দুটি হলো ২১নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা সিটি কলেজ ও ২৭নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা। কেন্দ্র ২টিতে মোট ভোটার রয়েছে ৫ হাজার ২৫৫জন। ঘোষিত ১০১টি কেন্দ্রে সাক্কু তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সীমা থেকে এগিয়ে রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার ভোটে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আজ সকাল ১১টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে বেসরকারিভাবে মনিরুল হক সাক্কুকে আনুষ্ঠানিক বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন