শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় সম্ভব হয়নি

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : অটিজম শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা। ১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার প্রথম মনস্তাত্তি¡ক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা যেখানে ব্যক্তির মধ্যে বাইরের জগৎ সম্পর্কে সামান্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ পরিচালিত হয় তাতে দেশে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হচ্ছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
আজ ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই দিনটি পালন করে আসছে। এবারে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ হয়েছে ‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়য়ের পথে’। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বিশেষ এই শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং আজ নীল বাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। অটিস্টিক শিশুর বিকাশ তিনটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা, অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কী করছে তা নিয়ে কৌত‚হল না থাকা, অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা। যোগাযোগ স্থাপনে বাধা, কথা বলতে না শেখা, কোনোমতে কথা বলা, কথা বলতে পারলেও অন্যের সাথে আলাপচারিতা করতে সমর্থ না হওয়া। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে আচরণের ভিন্নতা লক্ষ্য কার যায়। অনেকে পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে। অর্থাৎ একই কাজ বারবার করে। অন্যের সাথে যোগাযোগ ও আচরণের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া, কারো আদরও পেতে না চাওয়া, বিশেষ আচরণ বারবার করা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, অটিজমের পেছনে দু’টি কারণ রয়েছে- জিনগত সমস্যা ও পরিবেশগত সমস্যা। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ডিএনএ জিনে ‘কপি নম্বার অব ভেরিয়েন্ট’ নামক ত্রæটি বহন করে। পরিবেশের বিষাক্ত উপকরণ জিনের স্নায়ুকোষ ধ্বংস করে। যেসব রাসায়নিক দ্রব্য অটিজমের জন্য দায়ী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কারি, লেড, কীটনাশক। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি একটি নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিস্কের সমস্যা। কারণ কখনো কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে মস্তিষ্কের কোনো রূপ গঠনগত ত্রæটি, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়া, মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যালের অসামঞ্জস্যতা, অন্তক্ষরা অটিস্টিকদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: গোপেন কুমার কুন্ডু বলেন, অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিৎসা নিওরোবিহেভিওরাল থেরাপি। অতিরিক্ত আচরণগত সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিক্যাল চিকিৎসা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা প্রদান। দেখা গেছে স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার অটিজম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা গেলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা ও শিক্ষা পেলে রোগের উপসর্গ অনেকাংশ কমানো যেতে পারে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচন্ড দক্ষতা থাকে।
অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে পরবর্তীতে সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারে। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস)-প্রকাশিত এক প্রবন্ধে অটিজম মোকাবেলায় পরিবারগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনব্যাপী অধিকতর সাশ্রয়ী, টেকসই ও সহায়ক আন্তঃখাত কর্মসূচি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অটিজম মোকাবেলায় এমন কোনো সহজ সমাধান নেই যার মাধ্যমে বিদ্যমান চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত করা যায়। এর পরিবর্তে পরিবারগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনব্যাপী অধিকতর সাশ্রয়ী, টেকসই ও সহায়ক আন্তঃখাত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন