শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

গরমের তীব্রতা বাড়ার আগেই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে গরমের তীব্রতা বাড়ার আগেই বেড়েছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। গ্যাস সংকটে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকট বেড়ে গেছে। রাতে-দিনে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কল-কারখানায় উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎ সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে পিডিবির কর্মকর্তাদের দাবি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমলেও লোডশেডিং নেই। সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি ও উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় অনেক এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে উৎপাদন কমলেও জাতীয় গ্রীড থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন পিডিবির কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৩টি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কিছুদিন আগেও প্রায় ১১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে গড়ে ৬৭০ থেকে ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামে পিকআওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৯শ’ মেগাওয়াট। ঘাটতি মিটাতে জাতীয় গ্রীড থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিন পিকআওয়ারে দেড়শ থেকে দুইশ’ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
পিডিবির প্রকৌশলীরা জানান, গ্যাস সঙ্কটের কারণে ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিট বন্ধ। বন্ধ রয়েছে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও। চট্টগ্রামের গ্যাসভিত্তিক ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭০২ মেগাওয়াট। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, গ্যাস সঙ্কটে এখানে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে মাত্র ১৩০ মোগাওয়াট। তাতে সক্ষমতার পাঁচভাগের একভাগ বিদ্যুৎও উৎপাদন হচ্ছেনা এখানকার গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে।
কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ৩টি। দিনের বেলায় বন্ধ রেখে শুধুমাত্র পিকআওয়ারে কয়েক ঘণ্টার জন্য ওই ৩টি ইউনিট চালু রাখা হচ্ছে। খরচ কমাতে দোহাজারী-হাটহাজারী ও জুলধায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি একশ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রও দিনের বেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামে রাতের চেয়ে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সংকট বেশি হচ্ছে।
গরমের মওসুম আসার আগেই এই সংকট বাড়িয়ে তুলেছে জনদুর্ভোগ। কারণ, কোন কোন এলাকায় বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ সংকটের সাথে যোগ হয়েছে সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ চলছে। আর এ কারণে ক্ষণে ক্ষণে বিকল হচ্ছে সঞ্চালন ব্যবস্থা। ট্রান্সফরমার বিকলের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। উন্নয়ন কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার (শাটডাউন) কারণেই অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এতে করে জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
পাশাপাশি এর প্রভাব পড়েছে শিল্প উৎপাদনে। তাই সামনে শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তবে গ্যাস সংকটে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছে পিডিবি। পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, গ্রীষ্মকালে সংকট মোকাবেলায় ফার্নেস অয়েলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক চালুর ব্যবস্থা রাখা হবে।
গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে সার কারখানা বন্ধ রেখে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান পিডিবির প্রকৌশলীরা। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে বর্তমানে জাতীয় গ্রীড থেকে দু’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বলে জানান পিডিবির কর্মকর্তারা।
পিডিবি চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিট ও শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। পানি সংকটের কারণে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের দু’টি ইউনিট বন্ধ। আর এ কারণে উৎপাদন কমেছে। তবে চট্টগ্রামে কোন লোডশেডিং নেই। ঘাটতি পূরণে জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন