স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান সংশোধন করে তাতে পুনরায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা বর্তমান সরকারকেও অবৈধ বলে দাবি করেছেন।
গতকাল পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দেয়া রায়টি যে অবৈধ ছিল, তা বর্তমান প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হয়েছে। তাই সংবিধান সংশোধন করে পুনরায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে।
সন্ধ্যায় গুলশানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে শুধু খায়রুল হকের রায়ই নয় অবৈধ রায়ের ভিত্তিতে গঠিত সরকারও অবৈধ। বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান একই কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার প্রধান বিচারপতি হিসেবে বর্ষপূতি উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, অবসরের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত সভায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে (বুধবার) দেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন ‘অবসর গ্রহণের পর যে রায় লেখা হয় তা বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।’ তাহলে বিচারপতি খায়রুল হক অবসর গ্রহণের পর যে রায় লিখেছেন তা বেআইনি। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ। বাংলাদেশের জনগণও সেটা চায়। দলীয় পদ্ধতিতে নির্বাচন করাও অবৈধ।
জিয়ার রহমানকে পাকিস্তানের চর বলে আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ মুজিবকে অপমান করছেন উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে নিজে বীর উত্তম খেতাব নেননি। শেখ মুজিবই জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতারা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে নিজের নেতাকে অপমান করছেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজকে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার অবিশ্বাস করা হচ্ছে। আমরা সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই। উৎপাদনের রাজনীতি চাই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে। আর সেটা করতে পারলে নাগরিক অধিকার রক্ষা পাবে। রাজনৈতিক নেতাদের আত্মগোপনে থাকতে হবে না।
বাংলাদেশের মানুষ আপসকে সমর্থন করে নাÑ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে সমর্থন করে। এ সরকার একটার পর একটা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশের খ্যাতনামা এই শ্রমিক নেতা বলেন, সরকারি দল বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধিতা করে। জিয়াউর রহমান ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পদ্ম সেতুর চেয়েও বড় তিস্তা ব্যারেজ তৈরি করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের তা চোখে পড়ে না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম পটু, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন এডভোকেট খন্দকার মাহবুব বলেন, ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা বলে আসছিলাম, এখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহার বক্তব্যর মাধ্যমে এটি আরো স্পষ্ট হয়েছে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতিগণের নিয়োগপ্রাপ্তির পর সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথ গ্রহণপূর্বক তার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়। বিচারক হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের যে শপথ বিচারক হিসেবে গ্রহণ অবসরের পর তিনি আর ওই শপথের আওতায় থাকেন না।
এডভোকেট মাহবুব বলেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের পরিপন্থী বলে যে রায়টি দিয়েছিলেন তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন তার অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর। তাই ওই রায়ের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই এবং তা অবৈধ। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ওই অবৈধ রায়ের সুযোগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্তি করে। বাংলাদেশে আজকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে যে সঙ্কট, অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক হানাহানি চলছে, তার একমাত্র কারণ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন। আর এই বাতিলের পেছনে এ বি এম খায়রুল হকের সংবিধান পরিপন্থী অবৈধ ওই রায়।
তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সঙ্কট নিরসন করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ, এডভোকেট ওয়ালীউর রহমানসহ আইনজীবী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন