বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ব্যারিস্টার আনিসের দাবি-এরশাদ জেল থেকে বাঁচতে আমাকে দলের দায়িত্ব দেন

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : পানিসম্পদমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেছেন, ১/১১-এর সময় এরশাদ জেলের হাত থেকে বাঁচতে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, এটা না করা হলে ‘মাইনাস থ্রি’ হতো। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মতো এরশাদকেও জেলে যেতে হতো।
গ্রেফতার এড়াতে এইচ এম এরশাদই ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তখন এরশাদের ‘নির্দেশে’ তাকে ‘রক্ষা’ করতে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
আনিসুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলেন, খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলেন, এরপর তার (এরশাদ) পালা আসে।
তখন তিনি সমঝোতা করেন যে, তিনি স্টেপ ডাউন করবেন, যাতে তাকে গ্রেপ্তার না করা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নিতে তখন প্রথমে এরশাদের ভাই ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জি এম কাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি বলে তিনি দাবি করেন। ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে কাদের সাহেব মইন উ আহমেদের সেমিনারগুলোতে অংশ নিচ্ছিলেন, যেন তারা সরকার গঠন করলে তার একটা সুযোগ থাকে।
তিনি বলেন, আমি এরশাদ সাহেবের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিই। ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। দুই বছর আমি দায়িত্বে ছিলাম, একটা সিদ্ধান্তও তার সঙ্গে পরামর্শ না করে নিইনি। সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া আনিসুল দলীয় চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যে ‘দুঃখ’ পেয়েছেন বলে জানান। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাকে কিছু বললে বা গত নির্বাচনের সময়কার কথা নিয়ে কিছু বললে আমার আপত্তি ছিল না।
এরশাদের বক্তব্যের জবাব দিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। তার প্রায় ৫৫ মিনিটের বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ছিল জি এম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা। তিনি দাবি করেন, জি এম কাদের নির্বাচন, সংসদ ও সরকারকে অবৈধ বলছেন। আবার পীরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে উপনির্বাচন করতে চেয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ারও চেষ্টা করেছেন। ওনার কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। এই একজনের জন্য জাতীয় পার্টির মতো একটি দল ভুগবে কেন? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, জাপার গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যানের কোনো পদ নেই। অথচ এরশাদ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করে উত্তরাধিকার করার ঘোষণা দিলেন। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। আমি সাত বছর এরশাদের মন্ত্রী ছিলাম। যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করেছি। তাই ওনার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কিছু বলিনি। আজ বলতে বাধ্য হয়েছি। উনি আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তা সত্য নয়। যদিও উনি বলছে, গণমাধ্যমে সঠিকভাবে তার বক্তব্য আসেনি। কিন্তু রেকর্ডে শোনা গেল, তিনি এভাবেই বলেছেন।
সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সখ্য ছিল কি না সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে সামরিক শাসক এরশাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ব্যারিস্টার আনিসুল তা নাকচ করেন। কীভাবে সখ্য বলবেন, আমি কি তাদের সাথে কোনো মিটিং করেছি? ব্রিগেডিয়ার বারীর সঙ্গে মিটিংটাও তিনি (এরশাদ) নিজে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ করে ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ২০ হাজার ডলার নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার চাপ এসেছিল। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার বারী আমাদের অবর্তমানে এরশাদ সাহেবকে এসে বলেছিলেন, তাকে একটা আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল, ‘হি মাস্ট লিভ দ্য কান্ট্রি উইথ টুয়েন্টি থাউজেন্ড ডলারস।’
পানিসম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর তিনি (এরশাদ) আমাদের (আমি, জিয়াউদ্দিন বাবলু, গোলাম মসিহ ও রেজা) ডেকে নিয়ে জানান কী ঘটেছে। তিনি নিজে বললেন, আমি যেতে চাই না, গেলে আমি মরে যাব। তখন শীতকাল ছিল। আমরা বললাম, আপনার যাওয়ার কোনো দরকার হবে না। আমরা কিছু একটা করছি। এর পরদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুর বাড়িতে অবস্থান নেন। এটা আমরা কয়েকজন ছাড়া কেউ জানতেন না। ১৬ ও ১৭ তারিখ সেখানে ছিলেন, পরিবারের কেউ ছাড়া সেটা জানতেন না। এরপর ১৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে তিনি যান। মহাজোট গঠনের জন্য আমি আগেই জলিল (তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে চুক্তি করি। সেদিন এরশাদ সাহেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমি মুক্ত বিহঙ্গ। এর মধ্যে মার্শাল ল, এটা হবে, ওটা হবে Ñ নানা জল্পনা। ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আমি মনে করি তা বন্ধ করার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির যথেষ্ট ভূমিকা ছিল,’ দাবি করেন আনিসুল। তিনি আরও জানান, ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন জনসভায় এরশাদ সাহেব বক্তৃতা দেন এবং হরতালসহ কিছু কর্মসূচি দেওয়া হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি ইয়াজউদ্দিন সাহেব জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন