বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. বশির আহমদ : বিগত ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সরকারি কর্মচারীদের ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধি করে আকর্ষণীয় বেতন স্কেল ঘোষণা ও কার্যকর করার কারণে সরকারি কর্মচারীগণের কাছে একটি যুগোপযোগী উৎসাহমূলক মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারের এটা একটি বড় কৃতিত্ব যা দীর্ঘদিন ধরে কোনো সরকার সাহস করেনি। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। এটা দেশের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বে এর প্রতিফলন এ দেশকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে, যা অন্যান্য দেশের জন্য রোল মডেল। আগামীতে এ সরকার আরো অনেক চমক দেশের জন্য বয়ে আনবে এই বিশ্বাস যোগ্যতার প্রমাণ আরো অনেক দিক দিয়ে, যাকে সংক্ষেপে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হয়। এসব আমাদের উন্নয়নের সাক্ষীস্বরূপ।
অন্যদিকে আমরা যারা এখন অবসর গ্রহণ করেছি তারা গত ৩০-৩৫ বছর থেকে এ দেশের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করে স্বল্প বেতনে সরকারি দায়িত্ব পালন করে এসেছি। আমরা দেশকে দেওয়ার চেষ্টাই করেছি সর্বোচ্চ, তাই দেশ বর্তমান প্রজন্মকে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দিতে পারছে। এতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।
পেনশনারদের/পারিবারিক পেনশনারদের যথেষ্ট সম্মান ও উন্নত জীবনযাপন করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে বলে প্রমাণ হয়েছে। যেখানে সংযোজন হয়েছে পেনশনারদের ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট। ১০০ শতাংশ পেনশন সমর্পণকারীদের ১ জুলাই ২০০৪ থেকে ১০০ শতাংশ সমর্পণ না করলে যেভাবে উৎসব ভাতা প্রাপ্য হতেন, তা বকেয়াসহ পাবেন। ১০০ শতাংশ পেনশন সমর্পণকারীদের মূল পেনশনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতার প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে পাওয়ার আশায় আছি। স্বামী/স্ত্রী মারা গেলে একে অন্যের পারিবারিক পেনশন, চাকরিকালীন আহত/নিহত হলে যথাক্রমে ২ লাখ টাকা ও ৫ লাখ টাকা কল্যাণ ভাতা পাবেন। চাকরির ৫ বছর থেকে ধাপে ধাপে ২০ বছরে স্বেচ্ছায় পেনশন। উত্তরাধিকারীদের পেনশন প্রাপ্তির জন্য ২১ ঊর্ধ্বে হলেও ১৫ বছর পর্যন্ত পেনশন। প্রতিবন্ধী হলে পেনশন উত্তরাধিকারীদের আজীবন পেনশন সুবিধা। গ্র্যাচুইটি প্রতি ১ টাকার স্থলে ২০০ টাকার পরিবর্তে ২৩০ টাকা। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পেনশন সুবিধা। সরকারি চিকিৎসালয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা। চাকরিরতদের শিক্ষা ভাতা এবং পরিকল্পনাধীন আবাসন ব্যবস্থা চিকিৎসার জন্য গ্রæপ ইন্স্যুরেন্স তহবিল গঠন, কল্যাণ ভাতা ইত্যাদি নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
১ জন সরকারি কর্মচারীর বেতন ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে যেমনÑ মূল বেতন ১০০ টাকা হলে উনার বেতন ১ জুলাই ২০১৫ থেকে রিভাইজ স্কেল প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০০ টাকা হয়েছে। এখানে বেতন বৃদ্ধি হয়েছে ১০০ টাকা। অপরদিকে ১ জন পেনশনারের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মূল বেতন হিসেবে বেতন বৃদ্ধি হয়েছে ১৬/২৫ টাকা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ভাতাগুলো পাবেন না। শুধুমাত্র চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা পাবেন। এখানে ১০০ টাকার স্থলে হয়েছে মূল পেনশনের ৫০ শতাংশ। চলমান কর্মচারীদের মূল বেতন ১০০ টাকা হলে এখানে হয়েছে ২০০ টাকা। আর পেনশনারদের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হিসেবে বাড়ছে ১৬/২৫ টাকা। উপরে উল্লিখিত বিষয়গগুলো যাচাই-বাছাই করলে পেনশনাররা তুলনামূলকভাবে চলমান কর্মচারীদের চেয়ে অত্যন্ত স্বল্প হারে সুবিধা লাভ করছেন। কিন্তু পারিবারিক জীবন-জীবিকা/দায়দায়িত্ব প্রবীণ পেনশনারদের ওপরই বেশি পড়ে। কারণ আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান। বয়সের সাথে সাথে চিকিৎসা ভাতা কর্মরতদের চেয়ে প্রবীণ পেনশনারদের দ্বিগুণ থেকে ত্রিগুণ খরচ লাগে। নি¤œ মধ্যবিত্ত পেনশনার/পারিবারিক পেনশনারদের সংখ্যা বেশি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীগণ অপর কারো হাতের দিকে তাকানোর বা চাওয়ার অবকাশ থাকে না। কারণ প্রশ্ন আসে এতদিনের চাকরির জমানো টাকা হয়তো অনেক আছে, কিন্তু আগের সেই বেতন দিয়ে কি সহজে সংসার চালানো যেত? এটা দেশেরই বিজ্ঞ পেনশন অনুমোদনকারী নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিবেচনার জন্য আবেদন রইল।
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট প্রণয়নের আগে এ দেশের পেনশনার/পারিবারিক পেনশনারদের দিকে দৃষ্টি দিলেই তাদের দুরবস্থা উপলব্ধি করতে দেরি হবে না যে তারা কেমন আছে। আজকে যারা এর নীতিনির্ধারক আগামীতে তারাই ওই রকম পেনশনার হবেন। পেনশনারদের ৬০ ঊর্ধ্ব, ৬৫ ঊর্ধ্ব, ৭০ ঊর্ধ্ব এভাবে কমপক্ষে ৩টি অবসর ধাপ তৈরি করে মূল পেনশনের ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি ও চিকিৎসা ভাতা যথাক্রমে ৩০০০ টাকা, ৪০০০ টাকা ও ৫০০০ টাকা করে দিতে পারলে পেনশনার/পারিবারিক পেনশনারগণ পরনির্ভরশীলতা ও অবহেলিত জীবনযাপনের কবল থেকে কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি পাবেন।
তাদের কাছ থেকে সুস্থ অবস্থায় কর্মজীবনে সরকার যতটা অবদান পেয়েছেন বৃদ্ধকালে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটাও না হয় সম্মান দিয়ে জীবন চলার ব্যবস্থা করে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। অভিজ্ঞ পেনশনারদের জ্ঞানকে কাজে লাগালে কর্ম উপযোগীদের পুনরায় চুক্তিভিত্তিক, খালি পদে, অস্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ করে দিলে এ ধরনের পরিকল্পনা অবসরভোগীদের যেমন বেকারত্বমুক্ত করবে তেমনি অভিজ্ঞ লোকদের সহযোগিতায় সাময়িকভাবে জনগণের সেবাদানে সরকারের ঘাটতি পূরণ হবে।
সর্বোপরি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বিরাট একটি সংখ্যা যদিও শূন্য পদে অস্থায়ী/সাময়িকভাবে পুনঃনিয়োগ করার ব্যবস্থা, কর্মচারীদের পোষ্য কোটা সকল বিভাগের জন্য সমানভাবে সুযোগ করে দেওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হলে কর্মকাÐে কর্মচারীদের শূন্য পদের অভাবে অফিস কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। জনগণের উন্নতি আরো ত্বরান্বিত হবে, দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে, জনগণের সেবা প্রাপ্তিতে সুবিধা হবে।
ষ লেখক : যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, সিলেট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মশিউর রহমান ৫ জুলাই, ২০১৮, ২:৫৫ পিএম says : 2
আমি 100 % সমথর্ণ করেছি এখন মহার্ঘ পাবো কিনা ?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন