শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিতে জুভেন্টাস

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : অলৌকিক কোনোকিছু সাধারণত একইসাথে দুইবার ঘটে না। জুভেন্টাসের সাথে গোলশূন্য ড্র করে সেটাই প্রমাণ করল বার্সেলোনা।
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রক্ষণের সামনে যে দেয়াল জিওর্জিও কিয়েল্লিনি-লিওনার্দো বোনুচ্চিরা তুলেছিলেন ১৮০ মিনিটেও সেই দেয়াল হয়ে থাকল অভেদ্য। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতেছিল সেরি আ চ্যাম্পিয়নরা, দুই লেগ মিলেও ব্যবধানটা তাই-ই থাকল। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালের আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হল লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের।
এর আগে শেষ ষোলর প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে হারের পর বিদায়ের সুর উঠেছিল লুইস এনরিকের দলের। কিন্তু ইউরোপিয়ান আসরে প্রত্যবর্তনের রেকর্ড গড়ে ন্যু ক্যাম্পে লেগে ৬-১ গোলে জিতে শেষ আটে পা রাখে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা। সেদিনের সেই অতিদানবীয় প্রত্যাবর্তনই আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছিল কাতালান ভক্তদের। কিন্তু বিশ্বের সেরা রক্ষণ ভাবা হয় যাদের, তাদের বিপক্ষে এবার কিছুই করে দেখাতে পারলেন না মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা।
ক্যাম্প ন্যুতে এদিন জুভেন্টাস রক্ষণের প্রাণ হয়ে ছিলেন কিয়েল্লিনি ও বোনুচ্ছি। তাদের যে ‘এমএসএন’ ত্রয়ী একেবারেই ফাঁকি দিতে পারেননি ব্যাপারটা এমন নয়। প্রত্যেকের সামনেই এসেছিল সুযোগ, কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি কেউই। বিরতির কিছু সময় আগে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সুয়াজেরে শট বাধা পেয়ে ফিরে আসে, ১২ গজ দূর থেকে মেসির ভলি উড়ে যায় বারের উপর দিয়ে, নেইমারের ভলিও জাল খুজে পায়নি। তাছাড়া যেমন জায়গা থেকে ফ্রি-কিকে মেসি হরহামেশ গোল করে থাকেন, তেমন জায়গায় দু’বার ফ্রি-কিক পেয়েও ব্যর্থ আর্জেন্টাইন তারকা। শেষ চার ম্যাচে নিজেদের মাঠে ২১ গোল করা দলটিও তাই পারল না গোলমুখ আবিষ্কার করতে।
সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় হতাশা প্রকাশ পেয়েছে কোচ এনরিকের ভাষাতেও, ‘জুভেন্টাস অনেক সুযোগ দিয়েছিল। আমরা গোল করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আরেকটু তৎপর হয়ে আমাদের গোল করা উচিত ছিল। ১৩-১৪টা মত শটও নিয়েছি কিন্তু কোনটাই লক্ষ্যে ছিল না।’ তবে প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাতেও ভোলেননি স্প্যানিশ কোচ, ‘জুভেন্টাস এগিয়ে যাওয়ার যোগ্য। তারা এমন একটা দল যারা নিখুঁতভাবে রক্ষণ সামলাতে জানে। আমরা গোলের অনেক সুযোগ তৈরি করেছিলাম কিন্তু পারিনি।’
এনরিকের কথা ঠিকই। মেসিদের ব্যর্থতার চেয়ে জুভা রক্ষণভাগের সাফল্যই চোখে পড়েছে বেশি। ৬৫ শতাংশ বলের দখল রেখে একের পর এক আক্রমণ করেছে বার্সা। গোলের উদ্দেশ্যে তারা শটও নেয় ১৯টি। কিন্তু মেসিদের কোন শটই সফলভাবে নেয়ার সুযোগ দেননি বোনুচ্ছি-কিয়েল্লিনিরা। মাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দলের শেষ দেয়াল ‘বুফন’ পর্যন্ত পৌঁছায় মাত্র একটি আক্রমণ। মেসির সেই শট প্রতিহত করেন ৩৯ বছর বয়সী ‘তরুণ’ গোলরক্ষক।
পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি করেছিল সফরকারীরাও। কিন্তু মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগেন ব্যর্থ করে দেন গঞ্জালো হিগুয়েইনকে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি কাদরাদোও। তবে এসব কিছুই তাদের আনন্দ আটকে রাখতে পারেনি। ২০১৫ সালে বার্লিন ফাইনালের প্রতিশোধ নিয়ে সেমিফাইনালের উল্লাসে মাতে জুভেন্টাস।
ম্যাচ শেষে কান্না আটকে রাখতে পারেননি নেইমার। তাকে সান্ত¦না দেন জাতীয় দলের সতীর্থ দানি আলভেস। সাবেক বার্সা সতীর্থ এখন প্রতিপক্ষ দলে। তাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় নেইমারকে। এবারো যে অধরা থেকে গেল ইউরোপ সেরার ট্রফি। ওদিকে লা লিগায়ও তার দল পিছিয়ে ৬ পয়ন্টে। উঠেছে কেবল কোপা দেল রের ফাইনালে।
পরে নেইমারকে আস্বস্থ করেছেন ক্লাব সতীর্থ ইভান রাকিটিচ। ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার বলেন, নেইমারের জন্যই ‘এল ক্ল্যাসিকো’ জিততে চায় বার্সা, ‘আমরা নেইমারকে দেখাতে চায় তাকে ছাড়াই আমরা ভালো কিছু করতে পারি, এবং আশা করি নেইমারকে আমরা সেটা করে দেখাতে পারব।’ কাল দিন বাদেই বার্নাব্যুতে লা লিগার সেই মহারণ। নিষিদ্ধ থাকায় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না নেইমার।
অ্যালেগ্রি এটাকে বলেছেন, ‘কার্ডিফের পথে সবচেয়ে বড় বাধা অতিক্রমকারী পদক্ষেপ।’ আগামী ৩ জুন কার্ডিফের সেই ফাইনালের আগে পেরুতে হবে আরেকটি বাধা। সেখানে মাদ্রিদের দুই দল ও জুভেন্টাসের সঙ্গী ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দল মোনাকো। জার্মান প্রতিপক্ষ বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ৩-১ গোলে (দুই লেগ মিলে ৬-৩) হারিয়ে প্রায় এক যুগ পর আসরের সেমিতে উঠেছে রাদামেল ফ্যালকাওয়ের দলটি। শেষ চারে কে কার মুখোমুখি হবে সেটা নিষ্পত্তি হবে আজ সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের নিয়নে অনুষ্ঠেয় ড্র অনুষ্ঠানে।

এক নজরে ফল
বার্সেলোনা ০ : ০ জুভেন্টাস
(দুই লেগ মিলে জুভেন্টাস ৩ : ০ গোলে জয়ী)
মোনাকো ৩ : ১ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
(দুই লেগ মিলে মোনাকো ৬ : ৩ গোলে জয়ী)

এক নজরে
 টানা দ্বিতীয় বারের মত সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হল বার্সেলোনা।
 ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (২০০৭-০৮) ও বায়ার্ন মিউনিখের (২০১২-১৩) পর তৃতীয় দল হিসেবে বার্সার বিপক্ষে দুই লেগেই গোলপোস্ট অক্ষত রাখল জুভেন্টাস।
 এ নিয় আসরে ৪৬ ম্যাচে নিজের পোস্ট অক্ষত রাখলেন বুফন। এই তালিকায় তার উপরে আছেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ও বর্তমান পোর্তোর স্প্যানিশ গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস (৫৪) ও আয়াক্সের সাবেক ডাচ গোলকিপার এডউইন ফন ডার স্টার (৫০) ও সাবেক চেলসি ও বর্তমান আর্সেনালের চেক গোলরক্ষক পিটার চেক (৪৭)।
 চলতি মৌসুমে সাত ম্যাচে বল বুফনকে ফাঁকি দিয়েছে মাত্র দুইবার।

শেষ চারে যারা
রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন)
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (স্পেন)
জুভেন্টাস (ইটালি)
মোনাকো (মোনাকো)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন