তৈমুর আলম খন্দকার : বাংলাদেশকে যুগে যুগে বিভিন্ন গোষ্ঠী, পরদেশী শাসনের পাশাপাশি শোষণ করেছে নির্বিচারে। চন্দ্র বংশীয় রাজার পর পাল বংশ, অতঃপর সেন বংশীয় শাসনামল, পরে তুর্কী ও আফগান শাসক, ইলিয়াস শাহী আমল, হোসেন শাহী শাসন আমল, আবার আফগান শাসন আমল, মোগল অধিপত্য, সিরাজ-উদ্-দৌলার নবাবীর পর ব্রিটিশের আগমন, অতঃপর পাকিস্তান। পূর্ববাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ভ‚খÐকে নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। গোটা পাকিস্তান পাক-ভারত উপমহাদেশের অংশ হিসাবে যুগ যুগ ধরে একত্রীভ‚ত ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যখন পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রশ্ন দেখা দিল তখন ১২০০ মাইল দূরত্বের ব্যবধানে কেন পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্রীভ‚ত করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল? বিষয়টি অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে। পাকিস্তানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ টু নেশন থিউরি বিরোধিতা করলেও এ ফর্মুলার উপর ভিত্তি করেই ভারত থেকে আলাদাভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে মিলিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করা হয় যা পৃথিবীর অন্য কোথাও এতো দূরত্বের ব্যবধানে একটি রাষ্ট্র গঠনের নজির নেই। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় যার রাষ্ট্রীয় সীমানা সম্পর্কে সংবিধানের ২(ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, “১৯৭১ খ্রিস্টাবদের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে যে সকল এলাকা লইয়া পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল (খ) যে সকল এলাকা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত হইতে পারে।” ফলে এটাই বাস্তবতা যে পূর্ব পাকিস্তান ভ‚-খÐ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভ‚তি ও মূল্যবোধের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাঙালি জাতি ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন হওয়ার ২৪ বছরের ব্যবধানে পুনরায় কেন স্বাধীন হওয়ার জন্য প্রয়োজন অনুভব করলো? সম্প্রতিকালে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বাধীনতার মূল চেতনা হিসাবে অনেক বুদ্ধিজীবী প্রচার-প্রচারণা করে ‘সাম্প্রদায়িক’ বিরোধী হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের মানুষ যেমন ধর্মভীরু তেমনি অসাম্প্রদায়িক, বিষয়টি যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ধর্মভীরু মানুষদের সাম্প্রদায়িক বানিয়ে ফায়দা লোটার জন্য বক বুদ্ধিজীবীদের অপচেষ্টার উদ্দেশ্যেই বলতে হয়, পাকিস্তানিদের শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে মুক্তি লাভের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন ছিল এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বানানোর দাবিতে বা উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়নি।
‘স্বাধীনতা’ পর্যায়ক্রমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পর একটি চলমান প্রক্রিয়ার ফসল। যথা- ১. রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলন। ২. সম্পদের সুষম বণ্টনের দাবিতে আন্দোলন। ৩. স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন। ৪. ১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় পাকিস্তানিদের ক‚টকৌশলের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণকে দমন করার জন্য বাঙালিদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে বাঙালিদের স্বশস্ত্র প্রতিরোধ। ৫. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ ছিল সময়ের দাবি। ১৯৭০-’৭১ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পূর্ব ও পরে আওয়ামী লীগ যে সকল বক্তব্য প্রদান করেছিল, তা থেকেই স্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয় নাই। আলোচনাটির স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে স্বাধীনতা পূর্ব ৬ দফা দাবি আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন যে, ‘৬-দফা বা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী ইসলামকে বিপন্ন করে তুলেছে বলে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে সেই মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি শেষবারের মতো আহŸান জানাচ্ছি। অঞ্চলে অঞ্চলে এবং মানুষে মানুষে সুবিচারের নিশ্চয়তা প্রত্যাশী কোন কিছুই ইসলামের পরিপন্থী হতে পারে না। আমরা এই শাসনতান্ত্রিক নীতির প্রতি অবিচল ওয়াদাবদ্ধ যে, কোরান সুন্নাহর নির্দেশিত ইসলামী নীতির পরিপন্থী কোন আইনই এ দেশে পাশ হতে বা চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎ সময়ে আরো বলেছেন যে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। একথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী-ইনসাফের ইসলাম। আমাদের ইসলাম হযরত রসূলে করীম (স.) এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের সুবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বরাবর যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান, সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাশের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তাঁরাই যাঁদের ঈমানই আদতে নাজুক আর ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফায়েস্তা করে তোলার কাজে। অতএব আমরা যারা আল্লাহর মজলুম বান্দাদের জন্য সংগ্রাম করছি, তারা ইসলামের বিরোধিতা করাতো দূরের কথা বরং ইসলামের বিধান মতে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠারই উমেদার, আর সে ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হলেন তারাই যারা ইসলাম বিপন্নে জিগির তুলে জনগণকে ধোঁকা দিতে চান।’ সূত্র- বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম সম্পাদিত ‘মুজিবের রচনা সংগ্রহ’ (পৃষ্ঠা ৮৪-৮৫)
উক্ত বইয়ের (মুজিব রচনা সংগ্রহ) ১৬২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, ‘জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের প্রিয় ধর্ম হলো ইসলাম। আওয়ামী লীগ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শাসনতন্ত্রে সুস্পষ্ট গ্যারান্টি থাকবে যে পবিত্র কোরান ও সুন্নায় সন্নিবেশিত ইসলামের নির্দেশাবলীর পরিপন্থী কোন আইন পাকিস্তানে প্রণয়ন বা বলবৎ করা চলবে না। শাসনতন্ত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের পবিত্রতা রক্ষার গ্যারান্টি সন্নিবেশিত হবে। সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য পর্যন্ত বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
১৯৭০ নির্বাচনের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সম্মানিত সদস্যদের শপথ বাক্যের প্রারম্ভেই বলা হয়েছিল যে, ‘আমরা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলীয় নব নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ শপথ গ্রহণ করিতেছি পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার নামে।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ যে সার্কুলেশন জারি করেছিলেন তা নি¤œরূপ, ‘গুজবে কান দেবেন না। গুজব রটাবেন না। নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। মনে রাখবেন আপনার এ সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, সত্যের সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার দুশমন বাঙ্গালী মুসলমান নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা কাউকে হত্যা করতে, বাড়ীঘর লুট করতে, জ্বালিয়ে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। মসজিদের মিনারে আজান প্রদানকারী মুয়াজ্জেম, মসজিদে-গৃহে নামাজরত মুসল্লী, দরগাহ মাজারে আশ্রয়প্রার্থী হানাদারদের গুলী থেকে বাঁচেনি। এ সংগ্রাম আমাদের বাঁচার সংগ্রাম। সর্বশক্তিমান আল্লাহতালার উপর বিশ্বাস রেখে ন্যায়ের সংগ্রামে অবিচল থাকুন। স্মরণ করুন : আল্লাহ প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর, বিশ্বাস রাখুন : আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী’।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু দেশটিতে মুসলমানদের কোন প্রকার ধর্মীয় স্বাধীনতা নাই। আমরা সব সময় শুনে আসছি যে, বৌদ্ধধর্ম একটি অহিংস ধর্ম। তারা নিরামিষ ভোজী। তাদের দৃষ্টিতে প্রাণী হত্যা মহাপাপ। কিন্তু মুসলমান হত্যা পাপ নহে এটাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের হত্যা করে বৌদ্ধারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করছে। ভারতে উত্তর প্রদেশে গরু জবাই করলে যাবজ্জীবন কারাদÐ ও গরুর গোস্ত পরিবহন করলে ১০ বছর কারাদÐ ভোগ করার বিধান করা হয়েছে। ২০১৪ সালে এক বক্তব্যে (উত্তর প্রদেশের বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী) আদিত্যনাথ বলেছিলেন যে, ‘একজন মুসলমান যদি একজন হিন্দু তরুণীকে ফুসলিয়ে নেয়, তাহলে আমরা ১০০ জন মুসলমান মেয়েকে নিয়ে নেব, তারা যদি একজন হিন্দুকে হত্যা করে আমরা ১০০ মুসলমানকে হত্যা করব।’ ভারতের ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং তার রাজ্যে কেউ গরু জবাই করলে তাকে ফাঁসি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ভারতে মুসলমানদের উপর যে জুলুম নির্যাতন ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে তার প্রতিবাদে ভারতের দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইয়েদ আহাম্মদ বুখারি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি দিয়ে মুসলমানদের ভয়ের পরিবেশ দূর করার আহŸান জানিয়েছেন, কিন্তু মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ থেকে এ সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি। অন্যদিকে জীবন রক্ষার তাগিদে মুসলমানদের গরু না খাওয়ার পরামর্শ দিতে বাধ্য হয়েছেন হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রা.)-এর মসজিদের পেশ ইমাম। এ জন্য তাকে বরখাস্ত হতে হয়েছে। কারণ তিনি ইসলাম নীতি বিরোধী কথা বলেছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ রক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে ‘রাব্বি জিদনী এলমা’ (পড় তোমার প্রভুর নামে) আয়াতটি মুছে দেয়া হয়েছে। সলিমউল্লাহ মুসলিম হল থেকে ‘মুসলিম’ কথাটি বাদ দেয়া হয়েছে। এমনি অনেক প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে যেখানে মুসলিম কথাটি সংযোজিত ছিল সেখান থেকে ইসলাম ও মুসলিম কথা বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র আমেরিকার মুদ্রায় লেখা রয়েছে ওঘ এঙউ ডঊ ঞজটঝঞ। ইংলেন্ডে জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইন এঙউ ঝঅঠঊ ঞঐঊ ছটঊঊঘ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র জার্মানি ১০ বছর যাবৎ শাসন করছে যে দল সে দলের নাম ‘ক্রিষ্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’। জার্মানির আরেকটি বড় দলের নাম ‘ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন’। কানাডার একটি বড় রাজনৈতিক দলের নাম ‘ক্রিচিয়ান হেরিটেজ পার্টি অব কানাডা’। নিউজিল্যান্ডের দুইটি রাজনৈতিক দলের নাম ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেট পার্টী অব নিউজিল্যান্ড’ এবং ‘ক্রিশ্চিয়ান কোয়ালিশন অব নিউজিল্যান্ড’। ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রিশ্চিয়ান নামের সাথে যুক্ত করে প্রায় অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করে।
সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি কতটা মানবাধিকার রক্ষা করে। হিটলার, স্টালিন তারা সবাই ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলার ছিলেন। তারা কত মানুষ হত্যা করেছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে প্রায় ৬-৭ কোটি লোক নিহত হয়। তা সেক্যুলার শাসকদের দিয়েই হয়েছে। আমেরিকায় কালোদের ওপর এবং বর্তমানে মুসলিমদের ওপর সেক্যুলার শাসকেরাই অত্যাচার করছে। ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে সেক্যুলার শাসকেরাই অত্যাচার করেছে। ইসলাম নিজেই একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম। তারপরও গোটা বিশ্ব মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক বানাচ্ছে। গত ১৪ মার্চ ২০১৭ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঊর্ধ্বতন আদালত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে যে, ‘দৃশ্যমান ধর্মীয় প্রতিক ধারণ করা যাবে না।’ এক কথা বলে আদালত ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারের পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু এ রায়ের কারণে মুসলমান মেয়েরা এখন মাথায় হিজাব বা বোরকা পরে কর্মস্থলে যেতে পারবেন না। এটাই বিশ্বব্যাপী এখন ধর্মনিরপেক্ষতা(!)
স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল সম্পদের সুষম বণ্টন তথা অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্র। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় সেøাগান দেয়া হতো ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।’ তখন আরো বলা হতো ২২ পরিবার গোটা পাকিস্তানের সম্পদ লুটে খাচ্ছে। এখন ২২ পরিবারের স্থলে সৃষ্টি হয়েছে ২২ হাজার পরিবার। যারা ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করে দেশকে খাচ্ছে গোগ্রাসে। মধ্যবিত্ত দিন দিন গরিব হচ্ছে, অথচ ধনীরা হচ্ছে আকাশছোঁয়া সম্পদের মালিক। যার ১০ শতাংশ জমি ছিল সে বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছে অন্যদিকে যার ২০০ বিঘা জমি ছিল সে হয়েছে ৫০০ বিঘার মালিক।
গণতন্ত্র আজ কোথায় বিরাজমান তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। কারণ অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনা করছে আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখন জেলখানায়। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র’ যেভাবে এগুচ্ছে গিনিসবুকে এর স্থান হওয়া ছাড়া অন্যকোন বিকল্প নেই।
লেখক : কলামিস্ট ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন