মো. আলতাফ হোসেন : আমাদের সবারই নিজের আত্মরক্ষার কৌশল জানা উচিত। যদি সেটা খালি হাতে করা যায় তাহলে তো কথায় নেই। অনেক অনুশীলনকারীদের জন্য কারাতে হলো একটি গভীরতম দার্শনিক অনুশীলন। কারাতে নৈতিক মূলনীতি শেখায়। কারাতে একটি আঘাতের কৌশল। যেটি ঘুষি, লাথি, হাঁটু এবং কনুইয়ের আঘাত ও মুক্তহস্ত কৌশল যেমন ছুরিহস্ত ব্যবহার করে। কারাতে শব্দটি জেনেরিক পন্থায় সব ওরিয়েন্টাল মার্শাল আর্টে ব্যবহৃত হয়েছে।
শশিন নাগামিনে বলেছিলেন, ‘কারাতকে দীর্ঘস্থায়ী সহ্যশক্তির দ্ব›েদ্বর পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যেখানে জিততে হলে নিজেকে আত্মশাসন, কঠোর প্রশিক্ষণ এবং নিজের সৃজনশীল প্রচেষ্টার মাধ্যমে এগোতে হবে।’ গিছিন ফুনাকশি (আধুনিক কারাতের জনক) তার কারাতে দো আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন যে, ‘কারাতে চর্চা স্থানান্তকরণের প্রকৃতির পরিচিতির মধ্যে মধ্যে আমার জীবনের পথ। বর্তমানে কারাতে অনুশীলন করা হয় শুধু মাত্র স্ব-পরিপূর্ণতা, সাংস্কৃতিক, আত্মরক্ষা এবং খেলা হিসেবে।’ শেগেরু এগামি (শোতোকান দোজোর প্রধান প্রশিক্ষক) বলেছিলেন ‘দেশ-বিদেশে কারাতে অনুশীলনকারীদের অধিকাংশ শুধুমাত্র এর যুদ্ধ কৌশল অনুশীলন করে চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন কারাতকে মারামারির রহস্যময় উপায় হিসেবে দেখায় যেখানে একটি একক ঘায়ে মৃত্যু বা আহত করতে সক্ষম গণমাধ্যম আসল জিনিস থেকে একটি ছদ্ম শিল্প উপস্থিত করে।’
প্রিয় পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের নবম পর্বে আজ থাকছে কিক বা লাথির ব্যবহার। কারাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি কিক বা লাথি রয়েছে। ইতিঃপূর্বে আমরা কিঙ্গারী ও উসাঠাকিরী সম্পর্কে জেনেছি। আজ আমরা শিখব উল্কাগীরি।
উল্কাগীরি........
অন্যান্য দিনের মতো লেসন শুরু কার পূর্বে ছালাম, বো, কিবাডাসী, পজিশনে গিয়ে কিছু ওয়ার্মআপ করে নেবো। ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওয়ার্মআপ। ওয়ার্মআপের মাধ্যমে শরীর ও মন দু’টোকেই ব্যায়ামের জন্য তৈরি করা যায়। এর মাধ্যমে ব্যায়ামের ফলে ইনজুরি, মাসল পুল, হার্ট এটার্ক ইত্যাদির হাত থেকে দূরে থাকা যায়। অন্যান্য সুবিধাগুলির মধ্যে আছে- শরীরে ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো, শ^াস-প্রশ^াস বাড়ানো, সর্বোপরি শরীরে হঠাৎ কোনো চাপ না দেযা। মাসলের তাপমাত্রা বাড়লে মাসেল ঢিলা ও স্থিতিস্থাপক হবে ফলে মাসেলে অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ করে। তাছাড়া মাসলের কাজ করায় গতিও বাড়ে ওয়ার্মআপ করার ফলে। অনেকেই ব্যায়াম করার আগে ওয়ার্মআপ করেন না, কিন্তু এটি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক। মনে রাখবেন, আপনি যদি ঠিকমতো ওয়ার্মআপ না করে ব্যায়াম করেন, তবে আপনার শরীরে ব্যায়াম ঠিক মতো কাজ তো করবেই না, উপরন্তু আপনার শরীরের ক্ষতি হবে।
ব্যায়াম শুরু করার আগে কিভাবে ওয়ার্মআপ করবেন তা ভালো মতো জানুন, বুঝুন। আপনার ট্রেইনারকে জিজ্ঞাসা করুন, তারপর সেইভাবে ব্যায়াম করুন। আর মনে রাখবেন প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্মআপ কিন্তু ভিন্ন রকম হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। তাই কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য।
উল্কাগীরি প্রশিক্ষণের শুরুতে সালাম, বো ও কিবাডাসি পজিশনে থেকে অনুশীলন শুরু করতে হবে। প্রথমে পূর্বের লেসনগুলো করে নিলে ভালো হয়। কারণ প্রতিটি নতুন লেসন শেখার পূর্বে পুরাতন লেসনগুলো বার বার করে নিলে তা সহজেই রপ্ত হয়। যত বেশি অনুশীলন করা হবে ততো বেশি আয়ত্বে আসবে তার প্রতিটি লেসন। একজন ভালো ক্রীড়াবিদ মার্শাল হিরো হতে হলে চাই কঠোর অনুশীলন। কঠোর অনুশীলন ব্যতিরে একজন ভালো কারাতে ম্যান বা কোচ হওয়া যায় না। গত লেসনে ছিল ওসাঠাকিরী। আজ থাকছে উল্কাগিরী অর্থাৎ সাইড কিক বা লাথি। যেকোনো লাথি বা কিক মারার সময় মনে রাখতে হবে কিবাডাসী পজিশনে থাকবে এবং হাত দুটি কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এরপর যখন উল্কাগিরী অর্থাৎ সাইড কিক মারবে তখন একই সাথে হাত দুটি সামনে বুক বরাবর ক্রস অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ ডান পায়ে উল্কাগিরী মারার সময় ডান হাত উপরে থাকবে। ক্রস অবস্থায় একই সাথে ডান পাটি হাটু ভেঙ্গে বাম পায়ের হাটুর পাশে নিয়ে আসতে হবে। তারপর সজোরে উল্কাগিরী মারতে হবে। মারার সময় মনে রাখতে হবে ডান পা টি যে বাঁকা না থাকে অর্থাৎ সাইডে হোইস শব্দ করে মারতে হবে। এরপর টান দিয়ে হাটুটি একটু ঘুরিয়ে আবার কিবাডাসি পজিশনে চলে যেতে হবে। উল্কাগিরী মারার সময় ডান হাত এবং বাম হাত আর্টফুল অবস্থায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে হাতও পা কিবাডাসী অবস্থায় চলে যাবে। এরপর বাম পায়ে ঠিক একই কায়দায় ডান পায়ে যেভাবে মারা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই মারতে হবে। বাম পায়ে যখন উল্কাগিরী করা হবে কিবাডাসী পজিশন থেকে একই সঙ্গে হাত ও পায়ের ব্যবহার হবে অর্থাৎ এবার বাম হাত উপরে যাবে ক্রস অবস্থায় সেই সাথে বাম পাটি হাটু ভেঙ্গে ডান হাটুর পাশ থেকে সজোরে উল্কাগিরী অর্থাৎ সাইড কিক মারতে হবে। শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে হবে উল্কাগিরী মারার সময় যেনো হাত দুটো আর্টফুল ও বাম পাটি সোজা ও সমান্তরাল থাকে। এভাবে একবার ডান পায়ে ও আরেক বার বাম পায়ে উল্কাগিরী করা যেতে পারে। অধিক সংখ্যক করলে ভালো হয়। কারণ যত বেশি অনুশীলন করা হবে ততো বেশি আয়ত্বে আসবে তার প্রতিটি লেসন। নতুন লেসন পেতে হলে তাকে পূর্বের লেসনসহ বর্তমান লেসনগুলো ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। উল্কাগিরী অর্থাৎ সাইড কিক অনুশীলনের মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষণার্থী তার হাত ও পায়ের নৈপুণ্যতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে পায়ের নৈপুণ্যতা ও জোর বৃদ্ধি করে এ উল্কাগিরীর প্রাক্টিজ এর মাধ্যমে। এছাড়াও ফাইট করার সময় উল্কাগিরীর ব্যবহার খুবই ফলপ্রসূ। কারণ হাতের চেয়ে পায়ের মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষণার্থী অতি সহজেই তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। ফ্লাইং কিকে ও উল্কাগিরী ব্যবাহার করা হয়। তাই উল্কাগিরী প্রক্ষিণের মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষণার্থী তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে নৈপুণ্যতায় ও শৈল্পিক মনোভাব সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে হয়ে ওঠে একজন সৃজনশীল ফাইটার।
লেখক ঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও
চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ গ্রীণ ক্লাব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন