বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রশাসনিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত

রাবি ভিসি প্রো-ভিসির পদ পূরণ হলো না এক মাসেও

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছরুল ইসলাম নাবিল, রাবি থেকে : এক মাস পার হলেও নিয়োগ হলো না রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে। গত ১৯ মার্চ বিশ^বিদ্যালয় ভিসি ও প্রো-ভিসি মেয়াদ শেষ হয়। এরপর এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেননি বিশ^বিদ্যালয় চ্যান্সেলর। বিগত এক মাসে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদে কেউ না থাকায় বিপর্যস্ত ও অচল হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপিঠটির কার্যক্রম।
এদিকে ভিসি পদে কে বসছেন এনিয়ে চলছে সরব আলোচনা-সমালোচনা। ওই আকর্ষনীয় পদের জন্য শুরু হয়েছে নানা ধরনের লবিং ও গ্রæপিং। চলছে রাজনৈতিক তদবীর। জানাগেছে ঢাকামূখী হয়েছেন অনেক সিনিয়র প্রফেসর ও শিক্ষক সমিতির নেতা। তারা আঞ্চলিকতা ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকেও কাজে লাগাচ্ছেন বলে অনেকেই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। বলেছেন, দল যেহেতু ক্ষমতায় তাই একটু সুযোগ নেয়াটা দোষের কিছু নয়। এদের মধ্যে বিতর্কিত কয়েকজন শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ওই দুই পদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষককের ন্যায় সম্মানিত পদে থেকেও কারো কারো তদবির তৎপরতা অনেক নিচু মানের। যা শিক্ষকদের মানায় না। ক্যাম্পাস জুড়ে গুণজন রয়েছে অতীতের সব রের্কড ভেঙ্গে এবার মোটা অংকের টাকা নিয়ে তদবিরে নেমেছে। যার পরিমাণ নাকি ১০ কোটি টাকারও বেশি। এ নিয়ে সরস মন্তব্যও কম নয়। এতো সামান্য টাকা। পদ-পদবির সাথে নিয়োগ বাণিজ্য আর উন্নয়নের ৩৬৪ কোটি টাকার বিষয়। বিনিয়োগ সহজেই উঠে আসবে। পদ প্রত্যাশীরা স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছনে ছুটছেন। নিজেদের যোগ্যতার বিষয়গুলো ইনিয়ে বিনিয়ে তুলে ধরছেন। ভিসি প্রো-ভিসি পদ নিয়ে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও কালক্ষেপণ অতীতে কখনোই হয়নি। মজার ব্যাপার হলো কেউ কেউ হাই কমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন, এমন কি কারো নাম প্রস্তাবের ফাইল রাষ্ট্রপতির দপ্তরে চলে গেছে এমন প্রচারণাও চলছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এমন ফাইলের কথা তাদের জানা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দাবি প্রশসনে যোগ্য ও সৎ শিক্ষককে ওই দুই শীর্ষ দায়িত্বে দেয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে আলাপ হলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ পদ দুটিতে দক্ষ মানুষ দেয়া না হলে নিয়োগ ও টেন্ডার বানিজ্য নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। তারা আশা করেন সরকার সব দিক বিবেচনা করে পদ দুটি পূরণ করবে এবং অন্তত বর্তমান স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। নইলে স্বার্থের সংঘাতে অশুভ চক্র ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলবে। যা কারো জন্যই সুখকর হবেনা। ভিসি প্রো-ভিসি নিয়োগে বিলম্বের ব্যাপারে তারা বলেন, নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। সব দিক খতিয়ে দেখেই যোগ্য ব্যক্তি দ্বয়কেই বসানোর সুপারিশ করবেন।
এদিকে মুখিয়ে আছে সরকারি দলের স্থানীয় কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা। বিগত প্রশাসনের আমলে নিয়োগের তালিকা দিয়ে তা না পাওয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ। তারা অপেক্ষায় আছেন নতুন ভিসি প্রো-ভিসির। প্রচারণা রয়েছে ভিসি প্রো-ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে থাকা ক’জন তাদের নাকি প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তাদের তালিকা অনুয়ায়ি নিয়োগ দেয়ার। এজন্য আর্শীবাদও নিয়েছেন। অবস্থা এমন দেখে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, নিয়োগের তালিকা নিয়ে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট দিয়ে, কেউ কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে আর পেছনের মেহেরচন্ডী গেট দিয়ে ঢোকার অপেক্ষায়। এমনটি হলে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই সুখকর বিষয় হবেনা। নিয়োগের পাশাপাশি নজর রয়েছে ৩৬৪ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যের দিকে।
এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্শীষ দুটি পদ খালি থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাÐ মারাত্বকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ থেকে মূল সনদপত্র উত্তোলন, ভর্তি কার্যক্রম থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন সবকিছুই থমকে আছে। গত এক মাসে যাবৎ হচ্ছেনা সিন্ডিকেট সভা, একাডেমিক কমিটির সভা, ফাইনান্স কমিটির সভা। দেশের বাইরে যে শিক্ষকগণ গবেষণাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাবেন তাদের নো অবজেকশন (এনওসি) সার্টিফিকেট আটকে আছে।
সংস্থাপন-শিক্ষক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৩০ শিক্ষক গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার আবেদন করেছেন। দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. শেখ সাদ আহমেদ বলেন, ভিসির স্বাক্ষর ব্যতিত তাদেরকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারছেন না তারা।
এভাবে বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশ দফতরগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অফিসে সময় দিলেও হয়, না দিলেও হয়, এটা ইচ্ছা স্বাধীন হয়ে গেছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। চায়ের দোকানের আড্ডায় ব্যস্ত তারা। অফিসটা যেন চায়ের দোকানেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ^বিদ্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের দুই পদে না থাকলে চাপ কম থাকে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। এজন্য আড্ডায় সময় কাটানো ব্যাপারটা বাস্তব সত্য। নিজেও চায়ের দোকান থেকে এসেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. এন্তাজুল হক বলেন, আমাদের যতটুকু কাজ তা আমরা শেষ করছি। ভিসি ও প্রো- ভিসির যে কাজ সেগুলো করা যাচ্ছে না। কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন