জিএম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে : আশাশুনি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক বইতে শুরু করেছে। কোন প্রকার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটলে উপজেলায় ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর আশাশুনি উপজেলার উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছিল ৪০৫০ হেক্টর এবং হাইব্রিড ২২৫০ হে. মোট ৬৩০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এ বছর কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল উফশী ৩৯১৫ হেক্টর ও হাইব্রিড ২৬৬৫ হেক্টর মোট ৬৫৮০ হেক্টর জমিতে। সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আবাদ হয়েছে গত বছরের তুলনায় ১২০ হেক্টর বেশি জমিতে। অর্থাৎ উফশী ৪০৭০ হেক্টর ও হাইব্রিড ২৩৫০ হেক্টর মোট ৬৪২০ হেক্টর জমিতে। ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল উফশী পার হেক্টরে ৩.৮৬ মেঃ টন হিসাবে ১৫১১২ মেঃ টন এবং হাইব্রিড পারহেক্টরে ৪.৭৫ মেঃ টন হিসাবে ১২৬৫৯ মেঃ টন। মোট ২৭৭৭১ মেঃ টন। সেখানে ফসল কর্তন শুরু হওয়ায় প্রাথমিক হিসাবে ধারণা করা হচ্ছে (ইনশাল্লাহ) উফশী ৪.০০ মেঃ টন হিসাবে ১৬২৮০ মেঃ টন এবং হাইব্রিড ৪.৮ মেঃ টন হিসাবে ১১২৮০ মেঃ টন ধান উৎপাদিত হতে পরে। যা বিগত যে কোন বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার কাদাকাটি ও দরগাহপুর ইউনিয়নে বøাস্ট আক্রমণ দেখা দেয়ার পর কৃষি বিভাগ কর্তৃক হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে দ্রæত কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া, মসজিদ ও বাজারে রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রাখার ব্যবস্থা করে রোগের আক্রমণ দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ফলে ভয়াবহতার হাত থেকে কৃষকরা রেহাই পেয়েছিল। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শামিউর রহমান জানান, ঝড়ো বাতাস, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করায় বøাস্ট রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মত হ্যান্ডবিল প্রকাশ ও প্রচার, মসজিদ-মন্দিরে এ সংক্রান্ত তথ্য ঘোষণা করা, দলীয় মিটিং ও বাজার-দোকানে মতবিনিময়ের মাধ্যমে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে বøাস্ট দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফলে বøাস্ট আক্রমণ বাড়তে পারেনি এবং আক্রান্ত এলাকার ক্ষতি নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে। আগামীতে যাতে বøাস্ট আক্রমণ না হয় সেজন্য আক্রান্ত জমির নাড়া পুড়িয়ে দেয়া, আক্রান্ত ও তার পাশের জমির বীজ সংরক্ষণ না করা, বীজ শোধন করে (ছত্রাক নাশক ব্যবহার) পরবর্তীতে বীজ ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ¦ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও আশাশুনিতে বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ জন্য আমরা হাইব্রিড আবাদ বৃদ্ধি, ১০০% উফশী জাতের ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, লাইন-লোগো, পার্চিং এবং গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার করতে কাজ করেছি। এছাড়া অতন্ত্র জরিপ, আলোর ফাঁদ ব্যবহার, সুইপিং নেট ব্যবহার, কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। সর্বোপরি কৃষিবান্ধব সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে আজকে আমরা বোরো আবাদে সফলতার হাসি দেখতে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন