বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আইটি এন্ড টেলিকম

কর্মক্ষেত্রে হুমকি নাকি সম্ভাবনা

রোবট

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শওকত আলম পলাশ : আধুনিক কালের রোবটের মধ্যে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবটিরও হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের এমন নিখুঁত কোন কম্বিনেশন নেই যা থেকে মনে হতে পারে এই সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট মানব সমাজের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করবে, বিভিন্ন প্রজেক্টে একান্ত সচিবের দায়িত্বও নিতে পারে, কিন্তু অবশ্যই সেটা কর্মসংস্থান দখল করার মতো পর্যায়ে পৌঁছবে না এবং সেটা মানুষের বিকল্প হিসেবেও নয়। বাস্তবতা হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট মানবিক উপাদানগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখেই তৈরি করা হয়, যাতে করে তারা সদা পরিবর্তনশীল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মানুষকে সর্বোচ্চ এনার্জি দিয়ে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া, ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতে রোবট আমাদের জন্য আশীর্বাদ বলা যায়। যেমন, হঠাৎ কোথাও আগুন লেগে গেলে উদ্ধার কাজে এদের ব্যবহার করা যায়, এছাড়াও অনুকরণমূলক বিভিন্ন কাজে রোবট খুব ইফেকটিভলি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই রোবট মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে এই ধারণা অলীক এবং অনেকটাই অসম্ভব বলা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রগুলো নিয়ে তাই ভয়ের কিছু নেই বরং এই সকল রোবটগুলোকে আমরা আমাদের সঙ্গী কিংবা কাজের সহযোগী হিসেবে স্বাগত জানাতে পারি। তারপরও কোন জড়তা বা অস্পষ্টতা থাকলে নিজেই ঘেঁটে দেখতে পারেন, এখন পর্যন্ত সাইন্স ফিকশন অনুকরণে নয় বরং বাস্তবতার কথা, মানব কল্যানের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে এ সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট।

চীনা কারখানাতে মানুষের কর্মসংস্থান দখল করছে রোবট। গুদামঘরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কমলা রঙের ছোট ছোট পিঁড়ি আকৃতির রোবট। একজন লোক এগুলোর উপর প্যাকেট রাখছে আর সেটি প্যাকেটের গায়ে বারকোড পড়ে জায়গামতো নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন পণ্য ও গন্তব্যের জন্য প্যাকেটগুলো আলাদা করা হচ্ছে। আর এই কাজটি নিখুঁতভাবে করছে রোবটগুলো। চীনের ঝেজিং প্রদেশের হাংঝু এলাকায় ডেলিভারি পাওয়ার হাউজ শেনতং (এসটিও) এক্সপ্রেসের ভেতরের দৃশ্য এটি। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা পিপলস ডেইলি গত ৯ এপ্রিল সোসাল মিডিয়ায় এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৭৬ লাখ ভিউ এবং ৯০ হাজার শেয়ার হয়েছে। হিকভিশনের এই রোবটগুলো সম্পূর্ণ স্বনিয়ন্ত্রিত। নিজে থেকেই চার্জ হতে পারে। দৈনিক দুই লাখ প্যাকেট বাছাই করতে পারে। কোম্পানির মুখপাত্র সাইথ চায়না মর্নিং পোস্টকে জানিয়েছেন, রোবট ব্যবহারের ফলে তাদের অর্ধেক শ্রমিক কম লাগছে। একই সাথে কর্মক্ষমতাও বেড়েছে ৩০ শতাংশ, বাছাই করার নির্ভুলতাও সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, তারা এখন হাংঝুতে দুটি কেন্দ্রে এই রোবট ব্যবহার করছেন। দেশব্যাপীই তাদের ওয়্যারহাউজগুলোতে চালু করার পরিকল্পনা আছে। মেশিনগুলো ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে সক্ষম। তবে আপাতত তারা সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা কাজ করান।
চীনের শিল্পকারখানাগুলোতে রোবটের ব্যবহার দ্রæত বাড়ছে। এসব রোবট মানব শ্রমিকের জায়গা দখল করছে। গত বছর চীনে শিল্পরোবটের ব্যবহার ৩০.৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সরকার এই ধরনের রোবটের বার্ষিক উৎপাদন এক লাখ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অ্যাপলের হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকন গত বছর ৬০ হাজার কর্মী ছাটাই করে রোবট নিয়োগ দিয়েছে। তাইওয়ানের এই কোম্পানির চীনজুড়ে বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক বার্ট সেলমান বলেন, আগামী দু-তিন বছরে স্বচালিত বা প্রায় স্বচালিত ব্যবস্থা সমাজে চালু হয়ে যাবে। সহযোগী বুদ্ধিমান যন্ত্রব্যবস্থাই মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে বিষয়টা উদ্বেগের। কারণ, যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা কতটা বাড়বে এবং তারা কতটা চালাক হয়ে উঠবে, তা কেউ জানে না। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিশাস্ত্রবিদ ওয়েনডেল ওয়ালাচ মনে করেন, যন্ত্রের ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ বিপদের বিষয়ে বিশ্ববাসীর সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তিকে মানুষের উত্তম সেবকের পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একে মানুষের বিপজ্জনক প্রভুতে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন