শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৩ মাস বয়সের অপহৃত শিশু উদ্ধার

টিভি-ফ্রিজ মেরামতের কথা বলে বাসায় ঢুকে শিশু অপহরণ

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : টিভি-ফ্রিজ মেরামতের কথা বলে তিন মাসের একটি শিশুটিকে অপহরণ করে ইলেকট্রিশিয়ান সুমন। এরপর শিশুটির বাবা-মায়ের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি অপহরণকারী। ১৭ মে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। তবে র‌্যাবের তৎপরতায় পরের দিন বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ থেকে শিশু শিনকে উদ্ধার এবং সুমনকে আটক করে র‌্যাব।
গতকাল শুক্রবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসাইন মাতাব্বর এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অপহরণকারী সুমন টিভি-ফ্রিজ মেরামতের কাজ করে। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় তার একটি দোকানও আছে। সেই সূত্রে জিনজিরার মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার শাখাওয়াত হোসেন ও তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয়। ১৭ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাখাওয়াতের বাসায় যায় সুমন। এসময় শাখাওয়াতের স্ত্রী রিতু ইসলাম মিতুকে জিজ্ঞেস করে কোনও কাজ আছে কিনা?  কোনও কাজ নেই জানিয়ে সুমনকে বসতে বলে মিতু পাশের রুমে বাচ্চার কাপড় আনতে যান। ড্রয়িং রুমের খাটের ওপর ৩ মাসের সন্তানটি ছিল। ফিরে গিয়ে দেখেন রুমের ছিটকিনি বাইরে থেকে আঁটকানো। তিনি দরজা খোলার কথা বলতে থাকেন, কিন্তু পাশের ঘর থেকে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে কাঁদতে শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে প্রতবেশী একজন এসে দরজা খুলে দেন। তখন ড্রয়িং রুমে এসে ৩ মাসের মেয়ে ও ইলেকট্রিশিয়ান সুমন কাউকেই পাননি। এরপর সুমনকে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর মুক্তিপণ চেয়ে সুমন ফোন করে বলে জানান র‌্যাব ১০ এর সিও। তিনি বলেন, সুমন মিতুর মোবাইলে ফোন করে বলে, আমি তোর মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি। মেয়েকে ফেরত পেতে চাইলে দুই লাখ টাকা রেডি রাখ। যখন বলবো নিয়ে আসবি। র‌্যাব-পুলিশ কাউকে জানালে তোর মেয়েকে পাবি না। এরপরই সে ফোন কেটে দেয়। রাত ১১টার দিকে সুমন আবার ফোন করে তাড়াতাড়ি টাকার ব্যবস্থা করতে বলে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে আবার ফোন করে শিশুটি সুস্থ আছে জানিয়ে কখন কোথায় টাকা নিয়ে আসতে হবে জানায়। একই সঙ্গে পুলিশকে জানালে মেয়েকে হারাতে হবে বলে হুমকি দেয় সুমন। এদিকে কোন উপায় না দেখে শাখাওয়াত হোসেন র‌্যাব-১০ কে বিষয়টি জানায়।
 শিশু শিনের বাবা সাখাওয়াত হোসেন র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে বলেন, সুমনের সঙ্গে তার সাত থেকে আট মাস আগে আলাপ হয়। মূলত বাসার ইলেক্ট্রনিক পণ্যে ত্রুটি সারানোর জন্য তাকে ডাকা হতো। এজন্য তার পরিবারের সঙ্গে একটি সখ্যও তৈরি হয়।
শিনের মা রিতু ইসলাম বলেন, ওই দিন সুমন বাসায় এসে জানতে চায়, বাসার টিভি বা ফ্রিজের কোনো কাজ আছে কি না। কোনো কাজ না থাকায় বলি, নেই। যেহেতু সে পূর্বপরিচিত সেহেতু ভদ্রতার খাতিরে তাকে ঘরে বসতে বলি। সুমন ড্রইং রুমে বসলে আমি শিনের কাপড় আনতে অন্য রুমে যাই। সেখানে ঢুকে যখন কপড় নিয়ে বের হব তখন বুঝতে পারি, দরজা বাহির থেকে কেউ আটকে দিয়েছে। অনেক ডাকাডাকি করার পর যখন ড্রয়িং রুম থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি, তখন বুঝতে পারি, সুমন হয়তো শিনকে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা আমার কান্না আর চিৎকার শুনে দরজা খুলে দেন। বসার ঘরে এসে দেখি শিন নেই।
শিনের বাবা সাখাওয়াত হোসেন ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন।
র‌্যাব জানায়,অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মে  বিকেল ৪টা থেকে অভিযান শুরু করে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার গোলাম বাজার কাঁচা বাজারের পাশে লাকড়ি ঘরের কাছ থেকে অপহরণকারী সুমনকে গ্রেফতার করে। সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোলাম বাজার হাবিব কলোনি গলিতে দোতলা একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী সুমন শিশুটিকে অপহরণ ও ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে। সে আরও জানায়, অপহরণের কাজটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করেছে। অপহরণের পর তার পূর্ব পরিচিত পারভেজের বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে জানায় শিশুটির মা নেই। শিশুটিকে সে দত্তক নিয়েছে। ১৯ মে তার বোন মাদারীপুর থেকে এসে সেখানে নিয়ে যাবে। এরই মধ্যে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।
কেরানীগঞ্জে সন্দেহভাজন ২৭ তরুণ আটক
এদিকে কেরানীগঞ্জে আঁটিবাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে সমকামী সন্দেহে ২৯ তরুণকে আটক করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ওই কমিউনিটি সেন্টার থেকে তাদের আটক করা হয়।
র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, রাতে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে জড়ো হয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কিছু তরুণ। খবর পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা কমিউনিটি সেন্টারটি ঘেরাও করে। পরে তাদের কাছ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য, যৌন উত্তেজক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
ফেসবুক এবং মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তারা কেরানীগঞ্জের ওই কমিউনিটি সেন্টারটিতে জড়ো হতো। এজন্য কমিউনিটি সেন্টারের মালিককে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতো তারা। এলাকাবাসী জানিয়েছে দেড় থেকে দুইমাস পর বৃহস্পতিবারে তারা জড়ো হতো সেখানে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আটক তরুণদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-১০ এর কেরানীগঞ্জ ক্যাম্পে আনা হয়েছে। এলাকাবাসী অনেক দিন ধরেই তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছিলেন। তাদের সবার বয়স ২০ এর কাছাকাছি। বেশির ভাগই ছাত্র। এক দুইজন অন্য পেশার। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Tania ২০ মে, ২০১৭, ৩:৪৬ এএম says : 0
Deshe je ki suru holo kisue bujtesi na
Total Reply(0)
Abul Kalam Azad ২০ মে, ২০১৭, ৩:১৩ পিএম says : 0
Allah bless them.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন