শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবন ১৪৩১, ২০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজ পরিচালনে আগ্রহ নেই বিআইডব্লিউটিসি’র

যাত্রী সেবার মান তলানীতে

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : আসন্ন ঈদ উল ফিতরের দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নৌপথে যাত্রী ভীড় সামাল দেয়ার মত এখনো তেমন কোন প্রস্তুতি নেই রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র। অথচ নৌপথে নিরাপদে যাত্রী পরিবহনের দায় রয়েছে সংস্থাটির। দেশের উপক‚লীয় নৌপথের জন্য সংগ্রহকরা ১৩টি সী-ট্রাকের অর্ধেকেরও বেশী এখন অচল বা অলস পড়ে আছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে সংগৃহীত এসব সী-ট্রাক পরিচালন সহ নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে বছরে আরো ৫০ লাখ টাকা নগদ ভর্তুকিও দেয়া হয় সংস্থাটিকে। কিন্তু সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তা ইজারাদারের খোজে এসব সী-ট্রাক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালন থেকে বিরত থাকছেন। এমনকি বরিশাল থেকে ল²ীপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় সী-ট্রাক সার্ভিসটি পর্যন্ত বন্ধ। অথচ এজন্য ‘এসটি খিজির-৮’ নামের একটি সী-ট্রাক বরিশাল ঘাটে অলস পড়ে আছে গত অক্টোবর থেকে। প্রায় ২০ কোটি টাকায় এমবি অঅবদুল মতিন ও এমভি মনিরুল হক নামের দুটি নৌযানের পূণর্বাশন ও ৩৫ কোটি টাকায় ‘এমভি বারো আঊলীয়া’ নামের অপর নতুন নৌযান সংগ্রহ করার পরে চট্টগ্রাম-বরিশাল উপক‚লীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ গত ৬ বছর ধরে। অথচ এজন্য খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রীরও একাধিকবার ওয়াদা রয়েছে।
অপরদিকে পর্যাপ্ত নৌযান থাকার পরেও রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি চলছে যোড়াতালী দিয়ে। এ রুটের জন্য ব্যায় সাশ্রয়ী ৪টি প্যাডেল জাহাজ থাকার পরেও তা বসিয়ে রেখে ব্যায়বহুল স্ক্রু-হুইল নৌযান পরিচালনে আগ্রহী সংস্থাটির বাণিজ্য ও কারিগরি পরিদফতরের কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
বৃটিস যুগে চালু হওয়া ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি ২০১১-এর মধ্যভাগে মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত সিমিত করা হয় মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবার কারনে। গত বছরের আগষ্টে চ্যানেলটি চালু হবার পরে নভেম্বরে সপ্তাহে একদিন রকেটি স্টিমার যাচ্ছে খুলনাতে। তবে তা আড়াইগুন জ্বালানী ব্যায়র ‘এমভি মধুমতি’ বা ‘এমভি বাঙালী’ জাহাজ দুটির মাধ্যমে চালাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপে লোকশান হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। ২০১৪ ও ’১৫ তে প্রায় ৫৭কোটি টাকা ব্যায়ে  নির্মিত এ দুটি নৌযান গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালন লোকশান দিয়েছে প্রায় ৮কোটি টাকা। এর পরেও ব্যায়বহুল এসব নৌযান পরিচালনে যথেষ্ঠ আগ্রহী সংস্থাটির কারিগরি ও বানিজ্য পরিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তা। অথচ এসব নৌযান মোটেই যাত্রী বান্ধব নয়। নৌযানগুলোতে ভ্রমনে যাত্রীদের তেমন কোন আগ্রহও নেই।
অপরদিকে সংস্থাটির হাতে থাকা ব্যায় সাশ্রয়ী ৪টি প্যাডেল জাহাজ পরিচালনে কর্তাদের আগ্রহ যথেষ্ঠ কম। এসব নৌযানের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনও হচ্ছে না। প্যাডেল নৌযানগুলোর পরিচালন যথেষ্ঠ ব্যায় সাশ্রয়ী হলেও প্রতিটি নৌযানেই যথেষ্ঠ অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। তবে অভিযোগ রয়েছে, নৌযানগুলোর কাগুজে মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের নামে ব্যায়ের কোন কমতি নেই। সদর দফতর থেকে ঢাকার বাদামতলী ঘাট পর্যন্ত সংস্থাটির কথিত ‘যাত্রী সেবা ইউনিট’এর সাথে কারিগরি পরিদফতরের একটি চক্র এসব নৌযান মেরামতের নামে ব্যায়ের বহর বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু এর পরেও এসব নৌযানের কারিগরি ত্রæটি যেমনি যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলছে, তেমনি এর যাত্রী সেবার মানও সর্বকালের তলানীতে ঠেকেছে। ১৯৯৫ সালে আধুনিকায়ন ও পূণর্বাশনের পরে ‘পিএস লেপচা, পিএস অষ্ট্রিচ ও পিএস মাহসুদ’ জাহাজগুলো আর ভাড়ি মেরামত হয়নি। এমনকি এর মূল ইঞ্জিন ও প্যাডেলগুলোও ওভারহলিং হয়নি। ২০০২ সালে ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজটিতে নতুন ইঞ্জিন সংজোযনের পরে অদ্যাবধী এর কোন পূর্ণাঙ্গ মেরামত হয়নি। বর্তমানে নৌযানটির প্যডেলের অবস্থা যেমনি নাজুক, তেমনি এর মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার না থাকায় তা আসন্ন ভড়া বর্ষায় ভয়াল মেঘনার তীব্র স্রোত অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান কারিগরি বিশেষজ্ঞ মহল।
‘পিএস অষ্ট্রিচ’ জাহাজটি গত নভেম্বর থেকে যাত্রী পরিবহন থেকে সরিয়ে রাখার পরে গত জানুয়ারিতে নৌযানটি ভাড়ী মেরামতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়। কিন্তু তা ডকিং করা হয় এপ্রিলের মধ্যভাগে। এর পরে ঢিমে তালে নৌযানটির তলার মেরামত চলছে। কিন্তু নৌযানটির ভেতর ও বহির বিভাগ এখনো রং করা হয়নি। উপরি কাঠামোর কিছু কাঠের কাজ করা হলেও তা ডেন্টিং ও পেইন্টিং হয়নি। এমনকি নৌযানটির মূল ইঞ্জিন সহ জেনারেটর ইঞ্জিন ও প্যাডেলর কোন কাজ করা হয়নি এখনো। অথচ রোজা শুরু  হয়ে গেছে। ২০রমজানের মধ্যে এ নৌযানটি সহ সবগুলো যাত্রীবাহী জাহাজ যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে না আনলে আসন্ন ঈদের আগে পরে যাত্রী পরিবহন নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়তে হবে সংস্থাটিকে।
গত বছর ৪ জুলাই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হবার পরে ঘাতক নৌযানটির মালিক পক্ষের অর্থে প্রায় ৮ মাস পের ‘পিএস মাহসুদ’ সচল হলেও এর ভেতর ও বাহিরে কোন রং করা হয়নি। নৌযানটির লোয়ার ডেক থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত সর্বত্রই অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। নৌযানটির লোয়ার ডেকের কোন শৌচাগারে বাতি নেই। এমনকি আপার ডেকে পর্যাপ্ত পাখা পর্যন্ত নেই। প্রথম শ্রেণীর কক্ষগুলো পর্যন্ত  প্রায়ই অন্ধকার থাকছে। প্রথম শ্রেণীর বাতানুকল ব্যবস্থা ত্রæটিপূর্ণ। সেলুনের বাতানুক‚ল ব্যবস্থা প্রায়ই অকার্যকর থাকে। এমনিক দ্বিতীয় শ্রেণীর শৌচাগার থেকে কেবিনে পর্যন্ত আলো ও পাখার অভাব রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর সেলুনের অবস্থা সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে। প্রতিটি নৌযানের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সেলুন থেকে তৃতীয় শ্রেণীর খাবার ঘরগুলোতে প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র থেকে কাটলারিজের সংকট অত্যন্ত দুঃখজনক পর্যায়ে। অথচ রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির নৌযানে যেকোন শ্রেণীর ভাড়া বেসরকারী নৌযানগুলোর তুলনায় বেশী। সেবার মান সর্বকালের তলানীতে।
‘পিএস টার্ণ’ ও ‘পিএস লেপচা’ জাহাজ দুটিতেও এখন আর কোন যাত্রী সেবার মান অবশিষ্ট নেই। এসব নৌযানের কর্মীরা যাত্রী সেবা সম্পর্কে কোন কিছু জানেন বলেও মনে করেন না যাত্রী সাধারন। অথচ এসব বিষয় দেখভালের জন্যই সংস্থাটিতে একটি আলাদা যাত্রী সেবা ইউনিট রয়েছে। একজন ডিজিএম-এর নেতৃত্বে বিশাল জনবল পুষছে সংস্থা।
এসব বিষয়ে সংস্থাটির যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধানের সেল ফোনে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থার পরিচালক-বানিজ্য জানান, আমরা চেষ্টা করছি খুলনা পর্যন্ত প্যাডেল জাহাজ পাঠাতে। এতে অনেক জ্বালানী ও ব্যায় সাশ্রয় হবে। বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষে বিআইডবিøউটিএ’র সাথে একটি টিম ঐ চানেলটি পরিদর্শনে যাবে বলেও জানান তিনি। নৌযানগুলোতে যাত্রী সেবার মান উন্নত পর্যায়ে রাখতে একজন ডিজিএম-এর নেতৃত্বে সংস্থার একটি ‘যাত্রী সেবা ইউনিট’ কাজ করছে বলে জানান তিনি। তবে তাদের কর্মকান্ডে যাত্রীদের তরফ থেকে কিছু অসন্তুষ্টির কথাও পরক্ষোভাব স্বীকার করে বিষয়টি আরো নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হবে বলেও জানান পরিচালক-বানিজ্য। পাশাপাশি আসন্ন ঈদের আগে সংস্থার সবকটি যাত্রীবাহী নৌযান যাত্রী পরিবহনের লক্ষে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে বলেও জানান পরিচালক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন