শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাড়তি নজরে যারা...

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টি-টোয়েন্টির এই যুগে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন সাধারনত ব্যাটসম্যানরাই। ওয়ানডেতে অবশ্য টি-টোয়েন্টির নিয়ম মানলে চলে না। কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ড। ইংলিশ পেসিং কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে নজর রাখতে হবে তাই বোলারদের উপরও। যেমন কিছু ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের উপর নির্ভর করে দলের সাফল্যও তেমনি একই কথা প্রযোয্য কতক বোলারদের ক্ষেত্রেও। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিবেচনায় কিছু দলকেও রাখতে হচ্ছে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। চলুন নজর দেওয়া যাক তেমনি কিছু ব্যাটসম্যান, বোলার ও দলের উপর:

ব্যাটসম্যান
এবি ডি ভিলিয়ার্র্স (দক্ষিন আফ্রিকা) : বর্তমান যুগে ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ভাবা হয় এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। মাত্র ২১৬ ম্যাচে ২৪ সেঞ্চুরিতে ১০০.২৩ স্ট্রাইক রেটে ৯২২০ রানের মালিক প্রোটিয়া অধিনায়কের। দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সাথে যে ‘চোকার্স’ শব্দটি লেগে আছে তা মুছে ফেলাটা অনেকাংশেই নির্ভর করছে ডি ভিলিয়ার্সের পারফরমেন্সের উপর। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেরাটা দিতেই সম্প্রতি টেস্ট ফরম্যাটে খেলেননি ডি ভিলিয়ার্স। তবে বর্তমান ফর্ম ভাবাচ্ছে তাকে। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে ৯ ম্যাচে মাত্র ১টি হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। অবশ্য এমন আসরে একটি বড় ইনিংসই পাল্টে দিতে পারে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সকে। আর সেটি হলে প্রতিপক্ষ বোলারদের দুঃস্বপ্নের নামও হবেন ডি ভিলিয়ার্স।

বিরাট কোহলি (ভারত) : যদিও সাম্প্রতি পারফরম্যান্স তার নামের সাথে একেবারেই বেমানান, তবুও নামটি বিরাট কোহলি বলে বাজি রাখাই যায়। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর থেকেই এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পেয়েছেন বিরাট কোহলি। সেটা ২০১৩ সালের কথা। এরপর আরো শানিত হয়েছে তার ব্যাট। ওয়ানডেতে ১৭৯ ম্যাচে ২৭টি সেঞ্চুরি সহ ৭৭৫৫ রানের রেকর্ড তাকে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতিই দেয়। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির করার তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক। ভারতীয় দলে যদিও পারফর্ম করা ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, তবুও কোহলির পারফরম্যান্সের উপর অনেকটাই নিভর করে দলের সফলতা।

ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া) : সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকার তার নাম উপরের দিকেই থাকার যোগ্যতা রাখে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার, যিনি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ না খেলেই সরাসরি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেই চলেছেন। সর্বশেষ ১০ ম্যাচেই তার শকত ৫টি! ইনিংসগুলোতেও একটু চোখ বুলিয়ে রাখুনÑ ১৭৯, ১৩০, ১৫৬, ১১৯ ও ১৭৩! সাম্প্রতিক এই ফর্মই তার দিকে বাড়তি নজরের তাগিদ দিচ্ছে।তছাড়া সদ্য শেষ হওয়া আইপিলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।

স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া) : মাইকেল ক্লার্কের অবসরের পর চারদিকে বর উঠেছিল এই বুঝি ডুবল অস্ট্রেলিয়া দল। কিন্তু অজি দুর্দান্তভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্টিভেন স্মিথ। এবং সেটা সামনে থেকেই। নিয়মিতই হেসে চলেছে তার ব্যাট।গত মৌসুমে ১৪ ম্যাচে করেছেন ৬৬৭ রান, গড় ৫৫.৫৮! ৯৫ ওয়ানডেতে ৮টি সেঞ্চুরি ও ১৬টি হাফ-সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। অধিনায়ক হিসেবে বড় কোন টুর্নামেন্ট জেতার প্রথম সুযোগ স্মিথের সামনে। নিজেকে প্রমাণের এই সুযোগ নিশ্চয় হাতছাড়া করতে চাইবেন না ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

জো রুট (ইংল্যান্ড) : চলতি মাসের শুরুতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন জো রুট। তারও আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলেন অপরাজিত ৯০* ও ১০১ রানের ইনিস। সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তেন কিছু করতে না পারলেও একঝাঁক ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বাড়তি নজর থাকবে রুটের ওপরই। দেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হওয়ায় সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদি রুট নিজেও। ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে তার ব্যাটিং গড় ৮১.৭৫। ইংল্যান্ডের হয়ে ৮৫ ওয়ানডেতে ৯টি সেঞ্চুরিতে ৩৪৬৬ রান করেছেন রুট।


বোলার
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) : ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনের কথা ভাবলেই প্রথমেই চলে আসে মিচেল স্টার্কের নাম। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে আশার সবচেয়ে বড় ভরসার নামও স্টার্ক। মিচেল জনসনের পর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বোলিং আক্রমণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বাঁ-হাতি এই পেসার। ২৭ বছর বয়সী এ সুয়িং বোলার সাম্প্রতিক সময়ে আছেন দারুণ ফর্মে। বছরের শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দলের সেরা পারফরমারদের একজন ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৬৫ ম্যাচে ১২৯ উইকেট শিকার করে স্টার্ক ইতোমধ্যেই নিজকে একজন বিশ^ মানের বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইনজুরিতে পড়ে বার বার তার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়লেও প্রতিবারই ফিরেছেন আরো বেশি ধারালো ও আত্মনিবেদিত হয়ে। চলতি বছর আইপিএলে অংশ নেয়া কথা থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা মাথায় রেখেই শেষ মুহূর্তে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি।


মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান) : পাকিস্তান দলের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বভার থাকবে মোহাম্মদ আমিরের উপর। পাকিস্তান ক্রিকেটের পরবর্তী ‘বিগ থিং’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো আমিরকে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়ায় আইসিসির পাঁচ বছরের নিষিদ্ধাদেশ কাটিয়ে ২০১৬ সালে পুনরায় খেলায় ফিরে স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। এরই মধ্যে দলে নিজেকে অপরিহায্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ২০১৬ এশিয়া কাপ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান দলের বোলিং বিভাগে বড় ভুমিকা পালন করেন তিনি। ব্যাটিং অর্ডারে সব শেষে মাঠে নেমে ওয়ানডে ক্রিকেটে হাফ-সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের প্রথম খেলোয়াড় তিনি। তবে তার আসল দায়ীত্ব বল হাতে। তার সফলতার উপর নির্ভর করছে দলের সফলতাও।

কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা) : বর্তমানে আইসিসি বোলার র‌্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থনে আছেন কাগিসো রাবাদা। মাত্র দুই বছর আগে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা দলেরঅন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছেন এই পেসার। সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে তার বোলিংয়ের ধার দেখেছে ইংলিশরা। তার বোলিং তোপেই মাত্র ২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত ৩৪ ম্যাচে ৫৭ উইকেট শিকার করে নিজের ধারাবাহিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। বছরের শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তরুণ এ পেসার। সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন তিনি। সদ্য শেষ হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে তেমন পারফরমেন্স না করলেও বল হাতে তিনি ছিলেন সুশৃংখল। ডেল স্টেইনের পর প্রোটিয়া পেস বোলিংয়ের পরবর্তী সুপারহেডের ভূমিকা রাবাদা পালন করবেন বলেই মনে করা হয়।

ভুবনেশ^র কুমার (ভারত) : ইংলিশ কন্ডিশনে ভারতের সাফল্যে মুল হাতিয়ার হতে পারেন ভুবনেশ^র কুমার। ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ডেথ ওভারের বোলিং। এ সমস্যার সমাধান হতে পারেন ভুবনেশ^র। গত কয়েক বছর ধরে ¯øগ ওভারে ভারতীয় দলকে সাহায্য করছেন তিনি। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট শিকারি তিনি। ইকোনোমি রেটেও ছিলেন বাকিদের চেয়ে এগিয়ে।

মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ) : অভিষেকের পর থেকে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন বাংলাদেশ দলের নতুন পেস বোলিং সেনশেসন ২১ বছর বয়সী মুস্তাফিজুর রহমান। ঘরের মাঠে ২০১৫ সালের অভিষেকে শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবার নজরে আসেন। তরুণ এ তারকা ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট শিকার করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার। এরপর আর তাকে পিছনের তাকাতে হয়নি। দ্রæতই পেয়ে যান কাটার মাস্টার খেতাব। তার বোলিং ভেরিয়েশনের প্রসংশা করেছেন অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা। ব্যাটসম্যানদের কাছেও সমীহ জাগানো বোলারের নাম মুস্তাফিজ। এ পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ৩৬ উইকেট নিয়ে নিজ দলের সাফল্যে মুখ্য ভূমিকাও রাখছেন তিনি। আসরে দলের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বভার থাকবে তার ওপরেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন