বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সেমিস্টার সিস্টেম চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার চাপ একটু বেশিই থাকে। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাশ, পরীক্ষা আর এসাইনমেন্ট নিয়েই শিক্ষার্থীদের সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই বলে থেমে নেই সংস্কৃতি চর্চা। এখানে বেশকিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত। কম্পাস নাট্য সম্প্রদায় তাদের মধ্যে অন্যতম। কম্পাস নাট্য সম্প্রদায় বাকৃবির নাট্য জগতের এক অতিপরিচিত নাম। তবে কম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অধিভুক্ত ‘নাট্যসংঘ’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধম্যে বিভিন্ন সংগঠন মাঝেমধ্যেই নাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
কম্পাস নাট্য সম্প্রদায়ের কথা : ১৯৮৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বাকৃবির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ‘নাটক হোক সমাজ পরিবর্তনের সুতীক্ষè হাতিয়ার’ শ্লোগানে কম্পাসের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠাতা এমএ সবুর সাধারণ একজন রিকশা শ্রমিক আতা মিয়াকে দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু করেন কম্পাসের যাত্রা এবং উন্মেষ ঘটান ভিন্ন ধারার এক চিন্তা চেতনার। কম্পাসের জন্মের সাথে প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনূর রশীদের নামটিও জড়িত। কম্পাসের ১ম প্রয়োজনা নাটক ‘চর দুখীয়া’। তবে এ সংগঠনটিকে খুব একটা পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সৃজনশীল ও মননশীল শিক্ষকদের পদধূলিতে ধন্য হয়েছে কম্পাস যাদের অনেকেই নানা দায়িত্বে থেকে কম্পাসকে করেছেন সমৃদ্ধ। বর্তমানে কম্পাসের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক খান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. খায়রুল ইসলাম জীবন।
কম্পাস এ জানুয়ারিতে তাদের ২৭ বছর পূর্ণ করেছে। কম্পাস নাট্য সম্প্রদায় জন্মলগ্ন থেকে সামাজিক অবক্ষয়, অন্যায়, অত্যাচার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে নাটকের মাধ্যমে সোচ্চার বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এভাবেই শুধুমাত্র নাট্যচর্চাই নয়, নাট্য আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হয়েছে কম্পাস নাট্য সম্প্রদায়। বিগত বছরগুলোতে কম্পাস দর্শকদের উপহার দিয়েছে ৪৩টি নাটকের মোট ১০৪টি সফল প্রযোজনা। কম্পাসের এই গৌরবময় ইতিহাসের পেছনে রয়েছে তাদের কর্মীদের শ্রম, একাগ্রতা আর নাটকের প্রতি একান্তই ভালোবাসা।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও কম্পাস কখনো থেমে থাকেনি। এভাবেই কালের পরম্পরায় কম্পাস তৈরি করে যাচ্ছে কিছু সৃজনশীল আর প্রত্যয়ী নাট্যশ্রমিক যারা নাট্যচর্চার মাধ্যমে তাদের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিচ্ছে হাজার মানুষের মাঝে এবং সেইসাথে একটি পূর্ণাঙ্গ মননশীল বাঙালি সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কম্পাসের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক খান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাহিদ জানান, বিভিন্ন নাট্যোৎসব ও নাট্য কর্মশালার মাধ্যমে কম্পাস আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, ধরে রাখবে তার চিরায়ত ঐতিহ্য।
কম্পাসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুল ইসলাম জীবন বলেন, কম্পাসের নাটক প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। টিএসসিভুক্ত সংগঠন ব্যতীত অন্য সংগঠনগুলো প্রশাসন থেকে তেমন কোন আর্থিক সাহায্য পায় না। তবে প্রশাসন অনুষ্ঠান করতে সবসময় তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকে।
ষ এসএম আশিফুল ইসলাম মারুফ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন