বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মিরপুরে ওয়াসার খাল ভরাট করে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের পথ সঙ্কুচিত করে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার রূপনগর খাল ভরাট করে রাস্তা বানাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-ডিএনসিসি। চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে পাইকপাড়া, শিয়ালবাড়ি, দুয়ারিপাড়াসহ সম্পূর্ণ রূপনগর ও মিরপুরের বেশিরভাগ এলাকার পানি অপসারণের এ খালের ওপর দিয়ে রাস্তা বানাতে মাটি ভরাটের কাজ শুরুর আগে সিটি কর্পোরেশন কিছুই জানায়নি বলে অভিযোগ এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ঢাকা ওয়াসার।
এ সড়কটি বানানো হলে বর্ষায় মিরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে খাল ভরাট না করার অনুরোধ জানিয়ে ওয়াসা ডিএনসিসিকে চিঠি পাঠালেও বন্ধ হয়নি কাজ। মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোড থেকে ইস্টার্ন হাউজিং হয়ে আলোকদির দ্বিগুণ খাল পর্যন্ত রূপনগর প্রধান খালের অবস্থান।
দুই দশমিক ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খালটিকে স্থানীয়রা এক সময় অনেক প্রশস্ত দেখেছেন বললেও সর্বশেষ ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে গড়ে ৬০ ফুট চওড়া হিসেবে খালটিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নেয় ঢাকা ওয়াসা। এরপর ওয়াসা খালের ওপর বিভিন্ন স্থানে থাকা বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রূপনগরের ৭ নম্বর সড়ক থেকে ২৩ নম্বর সড়কের কালভার্ট পর্যন্ত খালের বেশিরভাগ অংশে শাল গাছের খুঁটি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। ট্রাক দিয়ে মাটি, বিভিন্ন পরিত্যক্ত নির্মাণ সামগ্রী ফেলে খাল ভরাট করা হচ্ছে। একটি রোলার দিয়ে মাটি সমান করা হচ্ছে। এভাবে খাল অর্ধেকেরও বেশি ভরাট হয়ে গেছে। রূপনগর আবাসিক এলাকার ২০, ২১ ও ২২ নম্বর সড়কের পাশে খাল প্রায় শীর্ণকায়। রূপনগর ৫ নম্বর সড়ক থেকে ২৩ নম্বর সড়ক পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণাধীন রাস্তাটির ২০ ফুট চওড়া মূল সড়কের পাশে ১০ ফুট সবুজ বেষ্টনি মিলে হবে প্রায় ৩০ ফুটের জানায় ডিএনসিসি।
১১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ সড়ক প্রকল্পের কাজ ১ ফেব্রæয়ারি শুরু হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, নির্মাণ কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
খাল ভরাট করা হলে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকাশ করে রূপনগরের ১৩ নম্বর সড়কের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এই খাল দিয়া পাইকপাড়া, মিরপুরের বেশিরভাগ এলাকার পানি আসে। খাল ভরাট করে ফেললে পানি যেতে পারবে না। বৃষ্টি হলে পানি আটকে যাবে। কয়েক বছর আগেও খালটিকে অনেক প্রশস্ত দেখেছেন বলে জানান এ এলাকার পুরাতন বাসিন্দা বশির উদ্দিন।
তিনি বলেন, আগে এ খাল অনেক প্রশস্ত ছিল। ধীরে ধীরে এটা সঙ্কুচিত হয়েছে। রূপনগর আবাসিক এলাকা করার পর খালের পরিধি কমে যায়। এরপর খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা করে পুরো খালটিই দখল করে ফেলা হয়েছিল। তারপরও কয়েক বছর আগে বেশিরভাগ জায়গায় খালটিকে ৫০/৬০ ফিটের মতো চওড়া দেখা গেছে। এখন আবার এর উপর রাস্তা করলে খালের কিছুই থাকবে না।
খাল ভরাট বন্ধে গত ১১ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষন) বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে শিয়ালবাড়ি, দুয়ারিপাড়াসহ সম্পূর্ণ রূপনগর এলাকার পানি এই খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। ইতিপূর্বে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা ওয়াসাকে কোনোরকম নোটিশ বা অবহিত না করে রূপনগর প্রধান খালে শালবাল্লার মাধ্যমে অর্ধেকেরও বেশি অংশ ভরাট করেছে। একে ২০০০ সালের জলাধার আইনের পরিপন্থি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এর ফলে খালের প্রশস্ততা কমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা পাচ্ছে এবং আগামী বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি সংকীর্ণ খালের মাধ্যমে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে এ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে খালে স্থাপন করা শালবল্লা ও খালের মাটি অপসারণের অনুরোধ করা হয় ওয়াসার চিঠিতে।
খাল ভরাটে আপত্তি জানানো ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, আমরা এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ডিএনসিসিকে চিঠি দিয়েছি এটা বন্ধ রাখার জন্য। তারা আমাদেরকে জানিয়েছিল, এটা রাস্তার জন্য মার্ক করা ছিল। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে একমত না। আমরা এটা এলাউ করব না, খাল ভরাট করা চলবে না।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের করা রূপনগর আবাসিক এলাকার নকশায় খালের পাশ দিয়ে একটি রিং রোড করার পরিকল্পনা থাকলেও সেটি খালের জায়গায় নয়। এমনকি রাস্তার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়নি বলছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা খানম। তবে খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর বিষয়টি দেখা এখন তাদের দায়িত্ব মন্তব্য করে তিনি বলছেন, সিটি কর্পোরেশন খাল ভরাট করছে কিনা সেটি তার জানা ছিল না। তিনি বলেন, সেখানে যে তারা কাজ করছে, এ ব্যাপারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ডিএনসিসি কোনো চিঠিও দিয়েছে কি না- আমার জানা নেই। আমি বলতে পারব না।
খালটি ৬০ ফুটের নয় বলে দাবি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইদুর রহমানেরও। ঢাকা ওয়াসার চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে সাইদুর রহমান দাবি করেন, খালের জায়গায় রাস্তা বানানো হচ্ছে না। রূপনগর খাল ৬০ ফুট প্রশস্ত নয়। আমরা জানি ওই খাল ৩০ ফিট। ৬০ ফুট কোনো খাল আছে নাকি ঢাকা শহরে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ৪ জুন, ২০১৭, ১১:৫৪ পিএম says : 0
যেকোন উপায়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগ ঠেকাতেই হবে এটাই সত্য। নাহলে পানি নিষ্কাশনের যে করুন অবস্থার সৃষ্টি হবে সেটা মনে হলে আমার মনে পরে ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার কথা যেখানে বৃষ্টির সাথে সাথে সড়ক চলেযায় ময়লা পানির নিচে। আর এলাকাবাসীদের পানি পাড়িয়ে চলা ছাড়া আর কোন গতি থাকে না। শুধু তাইনয় এই পানিতে থাকে বিষাক্ত বিজানু ধারন করে নিজেদের আয়ুষ্কাল কমিয়ে ফেলছে। আমার মনে হয় ঠিকাদারের পকেট ভরার জন্যই এত আয়োজন জনগণের উন্নয়নে নয়। এই রাস্তা নিয়ে আসবে জনগণের দুর্দশা আর অল্প জীবন; অন্য দিকে এই রাস্তা বানিয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কিছু আমলা আর ঠিকাদারেরা। এখনই আইনের আশ্রয় নিয়ে কাজ বন্ধ না করলে এরা উন্নয়নের নামে পুলিশ গুন্ডা দিয়ে জনগণকে ঠান্ডা করে তাদের ষোল কলা পূর্ন করবে এটাই সত্য। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে উন্নয়নের নামে চুষে খাওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন