শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দু’বছরেও কার্যকর হয়নি উচ্চ আদালতের রায়

দখলে দূষণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বাঁকখালী নদী

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে : গতকাল ৫ জুন পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে দিনটি। তবে কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই যেন কারো। দখল হয়ে যাচ্ছে নদীর দুই পাশ। নির্মিত হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। কক্সবাজার পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা সরাসরি এসে নদীর অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত দখল প্রতিযোগিতায় নেমেছে দখলবাজরা। অথচ নদী রক্ষায় দু’বছর আগে দেয়া হাইকোর্টের রুল বাস্তবায়ন করছেনা স্থানীয় প্রশাসন।
বাঁকখালী নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে মাঝেরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি অংশ ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। কস্তুরাঘাট বিআইডব্লিউআইটি টার্মিনালের পাশে নদীর ভরাট জমিতে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। তৈরি হয়েছে চিংড়ি ঘের, লবণ উৎপাদনের মাঠ, প্লট বিক্রির হাউজিং কোম্পানি, নৌযান মেরামতের ডকইয়ার্ড, বরফ কল ও শুটকিমহালসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা সরাসরি বাঁকখালী নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট হয়ে গেছে।
কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাটের অবস্থা করুণ। নদীতে এখন তেমন ড্রেজিং না হওয়ায় নৌযানগুলো জেটিতে ভিড় করতে পারছে না। হাটু পরিমাণ কাদাপানি পেরিয়ে নৌযানে ওঠতে হয় যাত্রীদের। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজার থেকে শহরের নুনিয়াছরা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশে দিন দিন বাড়ছে দখল। এসব এলাকায় দখলদারের সংখ্যা অন্তত সহ¯্রাধিক। দখলদারের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, রয়েছে প্রভাবশালীদের নামও।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠা সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘এক সময় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট ছিল শহরে প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। আর এখন জায়গাটি প্রায় মৃত্যুপুরী। শহর ও শহর তলীর নিয়মিত পাহাড় কাটার মাটি নেমে আসছে নদীতে। আর শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর তলদেশ ভরাট করছে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ’তিনি আরও বলেন, ‘ভরাট নদীতে ময়লা আবর্জনা ও পলিথিন ছড়িয়ে কেওড়া ও বাইন গাছের প্যারাবন মরে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র।’
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, ‘বাঁকখালীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আনেক বার অভিযান চালানো হয়েছিল। বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে দখলদারদের বিরুদ্ধে। সময় মতো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় সদিচ্ছা থাকলেও অভিযানে নামা সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রাখায় পৌরসভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। চিঠিতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে শহরের কস্তুরাঘাট বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনালের পাশে পুরাতন ডাম্পিং স্টেশনের জায়গাটি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য রামুর চাইন্দা এলাকায় জমি কিনে এখন সেখানে ভাগাড় (ডাম্পিং স্টেশন) তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হয়। এতে পৌরসভার ট্রাক ও ডাম্পার ব্যবহার করা হয়।
এদিকে বাকঁখালী দখলদারদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ এবং দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হাইদার হোসেন ও ভবানী প্রসাদ সিংহ এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত নদীর তীর চিংড়ি, তামাক বা ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্যে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। রুলে বাঁকখালী নদীটি কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবে না, কেন প্রাথমিক প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে তা রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন নদীর উভয় তীরের উপকূলীয় বন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। অথচ আদালতের নির্দেশের দুই বছরেও বেশি সময় পার হলেও তা বাস্তবায়নের কোনও লক্ষণ নেই। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই দাবী বাস্তাবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন