শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ও চীন

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চায়না. ওআরজি . সিএন : বিশে^ এমন কোনো অঞ্চল যদি থাকে যা অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও সন্ত্রাসবাদের শিকার, তা নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্য। যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মধ্যস্থতা, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ বা যুদ্ধ সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলের চেষ্টা করেছে।
সর্বশেষ এ ব্যর্থ চেষ্টা হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কর্তৃক যে মানুষটি মুসলিম বিশে^র কাছে ইতিবাচক বলে বরিত হয়েছিলেন যিনি ২০০৯ সালের কায়রো বক্তৃতার পর মনে করতেন যে তিনি একটি শান্তির জোয়ার বইয়ে দিতে পারবেন। ২০১১ ও ২০১২ সালে আরব বসন্তের আবির্ভাবে তিনি বিস্ময়াক্রান্ত হন এবং রাশিয়ার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ওবামা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অভ্যুদয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতেও ব্যর্থ হন এবং অনেক বিলম্বের পর তবেই ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক হামলার নির্দেশ দেন। আরো কথা, তিনি তার দেশের সাথে ইসরাইলের সম্পর্কে অস্বাভাবিক সংকট সৃষ্টি করেন।
এখন মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিকুন্ডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশের পালা। পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের জন্য এ অঞ্চলে উচ্চ প্রত্যাশার সাড়া প্রদান মনে হয় বিশেষভাবেই কঠিন যেখানে তার পূর্বসূরীরা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন।
ওবামার নীতিতে অখুশি ট্রাম্প ইসরাইলের সমর্থনের উপর নির্ভর করে মার্কিন- ইসরাইল অংশীদারিত্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন। উল্লেখ্য যে ট্রাম্পের অভিষেকের পর হোয়াইট হাউসে আসা প্রথম বিদেশী নেতাদের অন্যতম ছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু।
তিনি শুধু ট্রাম্পের ইসরাইলপন্থী অবস্থানের প্রশংসাই করেননি, ইরানের সাথে ওবামার পারমাণবিক চুক্তি অথবা ন্যূনতম আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তেহরানের কৌশল নিয়ে তার সন্দেহ পোষণেরও প্রশংসা করেছেন।
প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যকে নির্বাচন করা থেকে এ অঞ্চলের উপর তার গুরুত্ব প্রদানের ইঙ্গিত মেলে। ইসরাইলের সাথে সমান্তরালভাবে তিনি সউদি আরবের মত দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত করতে  দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে কারণেই তিনি সউদি রাজধানী রিয়াদ থেকে তার সফর শুরু করেন।
ট্রাম্প এ সফরকালে শুধু অস্ত্র বিক্রি ও বিনিয়োগের মত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিই স্বাক্ষর করেননি, তিনি বাদশাহ সালমানের সাথে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা এবং তাদের দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করতেও সম্মত হন। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের ( জিসিসি) নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে এবং আরব-ইসলামী আমেরিকান শীর্ষ বৈঠকে সামগ্রিকভাবে তিনি ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরব দেশগুলোর ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন।
ভাঁড়ারে এসব গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য জমার পর ট্রাম্প জেরুজালেম ও বেথলেহেম সফরে যান একটি চূড়ান্ত চুক্তির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে। ওবামা, এমনকি জর্জ ডবিøউ বুশের মত ট্রাম্প ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সৃষ্টিকে অত্যাবশ্যক পূর্বধারণা বলে গণ্য করেন না।
ট্রাম্প মনে করেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যে নতুন গতিশীলতা আনার চেষ্টা করছেন তা তা নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পথ মসৃণ করবে। ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শুরুটা করে দেয়া, তারপর প্রধান দায়িত্ব বর্তাবে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উপর।
সম্ভবত ইসরাইল ও সউদি আরবের মধ্যে সরকারী ভাবে একটি আপসরফা হলে, বিশেষ করে তাদের অভিন্ন উদ্বেগ ইরানের কারণে,  তা সম্ভবত ভালো জানাশোনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বৃহত্তর বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আরব বিশে^ ইসরাইল সম্পর্কে কিছু ট্যাবু ভাংতে পারে। এটা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে ইতোমধ্যেই মিসর ও জর্দানের সাথে ইসরাইলের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
ওয়াশিংটনের পরিকল্পনামতে  ইসরাইলের প্রতি অবস্থান উদার ও অধিকতর ইতিবাচক করতে ফিলিস্তিনিদের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য রিয়াদকে ফিলিস্তিনিদের উপর তার প্রভাবকে ব্যবহার করা প্রয়োজন হতে পারে।
ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন প্রশাসন যে নতুন নীতি গ্রহণ করছে চীন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং এ অঞ্চলের ঘটনাবলী ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করছে এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে। পাশাপাশি আফগানিস্তান ও সিরিয়া বিষয়ে অন্য কূটনৈতিক দূত নিয়োজিত আছে।
সন্ত্রাসবাদের উত্থান চীনকে শংকিত করেছে , কারণ জিনজিয়াংয়ের কিছু জঙ্গি ইরাক ও সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড  বেল্ট অ্যান্ড রোডের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগকে বিপন্ন করতে পারে যা এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে।
চীনা প্রশাসন আরব-ইসরাইল বিরোধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটি উদার ভূমিকা গ্রহণ পছন্দ করে বলে মনে হয় যদিও সে সুস্পষ্টভাবে একটি দু’রাষ্ট্র সমাধান সমর্থন করে। পররাষ্ট্র নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে চীন বিদেশে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে লো প্রোফাইল বজায় রাখছে।  
চীন ম্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম। দৃষ্টান্ত স্বরূপ মার্চে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নয়া পন্থা খুঁজে পাবার লক্ষ্যে নেতানিয়াহু চীন সফর করেন। এ সফরের ১৪ মাস পূর্বে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে মিসর, ইরান ও সউদি আরবে যাত্রাবিরতি করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সূ² ভারসাম্য রাখা চীনের অগ্রাধিকার নীতি। বেল্ট অ্যান্ড রোড পলিসির উন্নয়নোর পাশাপশি দেশটি নতুন সুযোগের সন্ধান করছে। ট্রাম্পের নীতি এক সুনির্দিষ্ট নীতির কারণে এ পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে পারবে না। তাহলঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ে চুক্তি বাতিল করতে পারবেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি সম্প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ কারণে এ চুক্তির কোনো পরিবর্তন করা উচিত হবে না।  
এই ধারণার বাইরে বেইজিং এ ধরনের উদ্যোগ চাইছে যা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনবে। বেইজিংয়ে  নেতানিয়াহুর সাথে সর্বশেষ বৈঠকে শি পুনর্ব্যক্ত করেন যে শান্তিপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য সকলের জন্যই ভালো।
চীন অবশ্যই প্রকৃত সাফল্যের ব্যাপারে সন্দিহান। আঞ্চলিক গতিশীলতায় কোনো পরিবর্তন চূড়ান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে মূলত প্রভাব ফেলবে না যেমনটি ট্রাম্প চাইছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন