শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ভদ্রাবতী ও নাগর নদীর বুকে আগের মতো দেখা যায় না ঢেউ

দুই তীরে গড়ে ওঠছে অবৈধ স্থাপনা

প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাহফুজ ম-ল, বগুড়া থেকে : বগুড়ার নন্দীগ্রামে ভদ্রাবতী নদী ও নাগর নদীর দু-পাশের পাড়ে মাটি কেটে ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ আর পানি না থাকায় যৌবন হারাচ্ছে উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দুই নদী। নদীর কূল আছে, কিনারা আছে কিন্তু ঢেউ নেই। বহুদিন ধরে নদীর বুকে পাল তুলে নৌকা আসা-যাওয়া করে না। দিনদিন ছোট হয়ে আসছে নদীর আকার। নদীর দু-পাশের মাটি কেটে ভরাট করে অবৈধ দখল ও সীমাহীনভাবে বালু উত্তোলন করায় দুই নদীর রূপ আজ বিলীন হওয়ার দারপ্রান্তে। মাঝে মধ্যেই প্রকল্পের মাধ্যমে নদী খনন ও প্রশ্বস্ত করার কথা থাকলেও তা ভিন্নভাবে করা হচ্ছে। নদী খননের মাটি পাড়ের উপরে না ফেলে নিচের অংশে ফেলে রাখা হয়। যে কারণে নদীর আকার দিনদিন আরো ছোট হয়ে আসছে। নামমাত্র নদী সংস্কারের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি খনন কাজ করে। এছাড়া নাগর নদী ও ভদ্রাবতী নদী থেকে মাঝেমধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রভাবশালী চক্র। নদীর দু-পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। যার ফলে নদী হারাতে বসেছে তার নদীত্বর রূপ। একসময় পানিতে থৈথৈ করতো ভদ্রাবতী আর নাগর নদী। পানি না থাকায় সুখিয়ে মরছে দুই নদী। যৌবন হারিয়ে এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে এক সময়ের খর¯্রােতা দুই নদী ভদ্রাবতী আর নাগরনদী। সূত্র মতে, উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে ভদ্রাবতী নদী। বগুড়া সদরের শবরুল দিঘী থেকে ভদ্রাবতী নদীর উৎপত্তি। এই নদীর সাথে সিংড়ার চলনবিল ও যমুনা নদীর সংযোগ রয়েছে। অপরদিকে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে ৩নং ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি গ্রামের বুকচিরে অবস্থিত নাগরনদী। দুপচাঁচিয়ার তালোড়া থেকে উৎপত্তি হওয়া এই নদী গুরুদাসপুর দিয়ে বাঘাবাড়ি নদীতে সম্পৃক্ত। নাগর নদীর নামকরণের ইতিকথা না পাওয়া গেলেও ভদ্রাবতী নদীর নামকরণের তথ্য পাওয়া গেছে। ভদ্রাবতীর নদীর উৎপত্তি নিয়ে কল্প কাহিনীও বেরিয়ে এসেছে। সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে বুড়ইল ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের ৯৫ বছরের বৃদ্ধ আলহাজ আব্দুর রহমানের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, দাদার মুখে শুনেছি রাজার শাসন আমলে শাবরুল দিঘীর বুক চিরে ভদ্রানদীর আভির্ভাব ঘটে। নদীর উৎপত্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া গেলেও এই নদীর মাটি খনন করা নাকি আসলেই অলৌকিকভাবে উৎপত্তি সেটা বয়স্ক বৃদ্ধরাও প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করতে পারেনি। তবে নদীর নামকরণের নেপথ্যের কাহিনী সম্পর্কে জানা গেছে। মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক (অব:) আজিজুল হক বলেন, সেন বংশের অচ্যিন কুমার নামের শেষ রাজার আমলে তার কন্যা ভদ্রাবতীর নাম অনুসারে নদীর নামকরণ। বর্ষা মৌসুমে ভরা পানিতে নদী থৈথৈ করতো। ছোট-বড় মাছ দেখা মিলতো। আগের দিনে কৃষিজমিতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি নদী থেকেই ব্যবহার হতো। দুই নদী দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা নৌকায় চলাচল করতো। সেইসব চিত্র আজ শুধুই স্মৃতি। নদীর যৌবন ও বৈচিত্র্যময় রূপ রক্ষার্থে মাটি ভারাট বন্ধ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করাসহ বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে অনেকেই এমন মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। এলাকার সচেতন মানুষের প্রাণের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভদ্রাবতী ও নাগরনদী খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। নদীমাত্রিক বাংলাদেশের সৌন্দর্য আবহমানকালের ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mahbub ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:২১ পিএম says : 0
ভদ্রাবতী নদী কি কোন সমিতির নামে হস্তান্তর চুক্তিনামা দেওয়া হয়েছে। নদী সাধারণ মানুষ কে আর ব্যবহার করতে দেয়না শেরপুর থানা বিশাল পুর ইউনিয়ন এল জি ডি সমিতির সদস্য গুন। আমরা সাধারন মানুষ কি ভাবে নদীটি ফিরে পাব পরামর্শ চাই
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন