বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বাকপটু নরেন্দ্র মোদির সংবাদ সম্মেলন পরিহারের নেপথ্যে

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি কুইন্ট : আরো দু’বছরে সংবাদ সম্মেলন না করার ব্যর্থতার জন্য নরেন্দ্র মোদি হয়ত গিনেস বুক অব রেকর্ডসে স্থান লাভ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তিনি হবেন একটি গণতান্ত্রিক দেেেশর প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিরাট সমাবেশে মিডিয়ার সাথে সাক্ষাত পরিহার করেছেন।
আমার কথা শুনুন
এমন নয় যে তিনি মোটেই সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাত করেননি। বিজেপির সাবেক মন্ত্রী অরুণ শূরি বলেন, এসব সাক্ষাত ছিল কিছু নির্বাচিত ব্যক্তিদের সাথে যাদের বিজেপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব আছে। তবে সেক্ষেত্রেও তাদের সাথে কথাবার্তা সরাসরি টিভিতে প্রচারিত হয়নি। এ সব অনিয়মিত, কোরিওগ্রাফ করা, সাধারণভাবে পক্ষপাতিত্ব মূলক ঘটনা ছাড়া মোদি যা পছন্দ করেন তা হচ্ছে একা কথা বলাÑ তা সে জন সমাবেশ বা ঘরোয়া সমাবেশ যেখানেই হোক না কেন, সেখানে থাকেন আমন্ত্রিত লোকজন যেখানে কোনো প্রশ্ন করার অনুমোদন দেয়া হয় না।
একজন বাকপটু প্রধানমন্ত্রীর এ বাকসংযম কেন যখন তার চেয়েও অনেক বেশী মিতবাক পূর্বসূরী বিদেশ ভ্রমণকালে তার সাথে ভ্রমণরত সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘসময় কথা বলা ছাড়াও কমপক্ষে দু’টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন?
যেমনটি জানা যায়, ফোর্থ এস্টেটকে পরিহার করার মোদির এ প্রবণতার জন্ম গুজরাট দাঙ্গার পর যখন তিনি সম্ভবত উপলব্ধি করেন যে যা ঘটেছে সে ব্যাপারে নিজেকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করবেন না। এক সময় তাকে দাঙ্গার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি টক শো থেকে বেরিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল বিদেশ সফরে প্রথা অনুযায়ী সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হওয়া। কিন্তু শুধু সরকারী মিডিয়াই সে সুযোগ পেয়েছে।
মোদির প্রতি বিরাগই কি দায়ী?
গেরুয়া শিবিরে একটি বিশ^াস প্রচলিত যে তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া, বিশেষ করে ইংরেজি মিডিয়া বাম-উদারদের সমর্থন করে যারা বিজেপিকে জন্ডিস আক্রান্ত চোখে দেখে এবং গুজরাট দাঙ্গার পর থেকে মোদির প্রতি যারা বিশেষ বিরাগ পোষণ করে। তাদের কাছে পৌঁছনোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনীহা, যদিও বিজেপি তাদের দলীয় বিষয় টিভি ক্যামেরার সামনে উপস্থাপনের জন্য দলের মুখপাত্রকে অনুমতি দিয়েছে, গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের এটা এক অপরিহার্য দিক।
গণতন্ত্রে যা নিয়মিত বিষয়, সেই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার অনিচ্ছার একটি ব্যাখ্যা এই যে প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তার জবাব একটি বিশ^মত প্রকাশ করতে পারে যা ঘটনার সাথে সঙ্গতিশীল নয় যা এখন পর্যন্ত দেশের রাজনীতিকে পরিচালনা করে।
বিজেপির উপলব্ধি এবং দেশের বাকি মানুষের মধ্যকার এই পার্থক্য আর কোনোক্রমেই এত ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেত না অটল বিহারি বাজপেয়ী ছাড়া। ১৯৯৬ সালে তিনি হিন্দুত্ব কর্মসূচিতে তিনটি প্রধান বিষয় রাখার সিদ্ধান্ত নেন । সেগুলো হল রামমন্দির, সংধিানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং তার পক্ষে থাকা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে তুষ্ট রাখার জন্য অভিন্ন বেসামরিক বিধি।
বাজপেয়ীর সময় থেকেই অন্য দলগুলোর চেয়ে বিজেপির বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক অবস্থান চিহ্নিতকারী অনেক বিষয় আগে চলে আসে। এগুলো হচ্ছে পুরান-বনাম ইতিহাস, বিশ^াস বনাম সংরক্ষিত স্মৃতিসৌধের অলংঘনীয়তা, নিরামিষবাদ বনাম অ-নিরামিষবাদ, জ্যোতিষবিদ্যা বনাম জ্যোতির্বিদ্যা, হিন্দি বনাম ইংরেজি ইত্যাদি
দু’টি বিশ^মতের মধ্যকার বিশাল ফারাক মোদিকে লুটিয়েন্স দিল্লীত একজন বহিরাগতে পরিণত করেছে। এটি সম্ভবত তাকে তার মনকে বিরাট মিডিয়া সমাবেশে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে, পাছে তার জবাব বিজেপির মূল সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে গেরুয়া ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এখানে উল্লেখ করা অসমীচীন হবে না যে আরেকজন বহিরাগতÑ এবার ওয়াশিংটন বেল্টওয়ে থেকে আসা ডোনাল্ড ট্রাম্পও মূলধারার মিডিয়ার কঠোর সমালোচক যদিও তিনি সংবাদ সম্মেলন করা থেকে লজ্জা পেয়ে দূরে থাকেন না।
মোদি যদি এটা করেন তা এ কারণে যে তিনি এখনো সম্পূর্ণ বিপরীত দু’টি জগতের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। যখন তার সকোর গো রক্ষক ও অন্য জঙ্গিদের দমনের শপথ করেছে , তখন জঙ্গিরা তাদের ধ্বংসমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারা মনে করে যে এটা গেরুয়া ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
সুস্পষ্ট নির্দেশনার অভাব
বিজেপির জন্য মধ্যপন্থা বনাম উগ্রবাদ বৈপরীত্য নিজের দলের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করেছে এ কারণে যে ভারতের বৈচিত্র্য দেশের বিভিন্ন অংশে একজন বা অন্যজনের মত প্রকাশের সুযোগ রেখেছে। সে কারণেই বিজেপি দলীয় ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী যখন গো-হত্যাকারীদের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান দেন এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী তার রাজ্যের প্রত্যেককে নিরামিষ ভোজী বানানোর শপথ নেন তখন কেরালা ও তামিলনাড়–তে গো-মাংস উৎসবের আয়োজন করা হয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিজেপির দলীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোরকন্ঠে নিষিদ্ধ গোশতের প্রতি তাদের পছন্দের কথা ঘোষণা করেন।
এখানে পরিষ্কার যে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব বিজেপির জন্য বিভিন্ন বিষয়ে একটি বিশ^াসযোগ্য অবস্থান গ্রহণ কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অভিযাত্রায় বিজেপির ভিতর বা বাইরে কোথাও যেহেতু কোনো পার্থক্য নেই, মোদি তার মেক ইন ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও অন্যান্য অনুরূপ প্রকল্প বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সহজেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন যদিও এখন সেগুলো প্রবৃদ্ধি হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, মোদির গেরুয়া শিবিরের সংরক্ষণবাদীরা তার জেনিটিক্যালি মডিফাই করা খাদ্য প্রচলনের বিরোধিতা করছেন।
কিন্তু এ ধরনের কর্মকান্ড যা অপ্রচলিত নামে পরিচিত তা সমস্যাজনক হতে পারে। বড় কথা, এ ধরনের গ্রæপগুলো বিলুপ্ত হবে বলে মনে হয় না, কারণ স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস ও খাবারের বড় রকমের পার্থক্যসহ অব্যাহত বিরোধ চলে আসছে যার উৎপত্তি গেরুয়া ভ্রাতৃত্বরোধের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা থেকে। এটা বিজেপির বর্তমান মধ্যপন্থা ও উগ্রবাদের মধ্যে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা যা মোদিকে বড় রকমের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেয়া পরিহার করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Faruk ১২ জুন, ২০১৭, ২:৪৩ এএম says : 0
amar o serokom e mone hosse
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন