বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

মারাত্মক হুমকিতে ঢাকার নদী

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মহানগরীর জনস্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর পানি দূষণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন নদী দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র একটি বিশেষজ্ঞ দল ২৯ ফেব্রæয়ারি এবং ০১, ০২ ও ০৩ মার্চ উক্ত ৪টি নদীর দূষণ পরীক্ষা এবং দখল-ভরাট পর্যবেক্ষণ করে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর প্রায় অধিকাংশ স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায়। নদীর দূূষিত পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হওয়ায় পানির প্রয়োজন মেটাতে আমরা নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছি। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী দূষণমুক্ত ও পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা না হলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এখনই সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। গতকাল ০৭ মার্চ পবা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পবার সম্পাদক মÐলির সদস্য ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পল্লিমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিদূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নেই বললেই চলে। ফলে মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ নদীগুলো আজ মৃত প্রায়। ঢাকা মহানগরী ও আশেপাশের টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এলাকার পয়ঃবর্জ্য এবং গৃহস্থালী বর্জ্য শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের কঠিন বর্জ্য, হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারিসমূহের বর্জ্য, শিল্পকারখানার বর্জ্য বিশেষ করে টেক্সটাইল ডাইয়িং কারখানা, নৌযান নির্মাণ, মেরামত ও রংকরণ, নৌযান থেকে নির্গত তেল এবং নৌযানের বর্জ্য এসব নদী দূষণের অন্যতম কারণ।
ঢাকা মহানগরীতে পয়ঃবর্জ্যরে পরিমাণ ১৪ লক্ষ ঘনমিটার। যার মধ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃবর্জ্য পরিশোনাগারের মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা হচ্ছে। বাকি ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীর পানির গুণগতমানের অবনতি; মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি; শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার অনুপোযোগী; জীবাণুজনিত দূষণ; মানুষের স্বাস্থ্যের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার।
হাজারীবাগের ট্যানারিসমূহ হতে দৈনিক ২২,০০০ কিউবিক মিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, ইত্যাদি। ট্যানারি হতে নির্গত বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য শুধু বুড়িগঙ্গার পানিকেই দূষিত করছে না, নদীর তলদেশ ও উভয় পাড়ের মাটি এমনকি বাতাসকেও ভয়াবহভাবে দূষিত করছে। নদীপাড়ের মানুষগুলো পানি ও বাতাস বাহিত নানা রোগে ভুগছেন। ট্যানারিগুলো সাভার ও কেরানীগঞ্জে চামড়া শিল্প নগরীতে সরানোর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় নদীদূষণ অব্যাহতভাবে চলছে। ট্যানারিগুলো স্থানান্তরের দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের এবং দূষণ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের।
টেক্সটাইল কারখানার বর্জ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার ১ লক্ষ ২০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য নদীতে পড়ছে। অনেক শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই, আবার যেসব শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধনাগার রয়েছে সেসব শিল্পকারখানা তা পরিচালনা করেন না। ফলে শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী অধিদপ্তর কর্তৃক পরীক্ষিত ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান খুব খারাপ এবং শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে কোনো প্রাণ বাঁচতে পারবে না। শিল্পকারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের।
সংবাদ সম্মেলনে নি¤েœাক্ত করণীয় তুলে ধরা হয়- পয়ঃবর্জ্য পরিশোনাগার স্থাপন; গৃহস্থালী বর্জ্য পানি প্রবাহে ফেলা থেকে বিরত থাকা; ট্যানারিগুলো জরুরিভিত্তিতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন ও বর্জ্য পরিশোধন করা; শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোনাগার স্থাপন এবং নিয়মিত তা পরিচালনা করা; নৌযানের ডিজাইনে বর্জ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার স্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলা; বিআইডবিøউ কর্তৃক নৌযানের বর্জ্য সংগ্রহকরণ ও তা পরিশোধনপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ; নৌযানের বর্জ্য ও তেল নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকা এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন