শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মালয়েশিয়ায় বন্ধ জি টু জি

মালয়েশিয়ান হাইকমিশন পাসপোর্ট জমা নিচ্ছে না : কর্মীর মাঝে হতাশা

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম  : মালয়েশিয়ায় জি টু জি’র দরজাও আপাতত অলিখিতভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ জি টু জি প্রক্রিয়ার ২৪০টি পাসপোর্টে ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি কাকরাইলস্থ বিএমইটি’র মালয়েশিয়া সেল কর্তৃপক্ষ জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ৭০টি পাসপোর্ট ভিসার জন্য মালয়েশিয়ান হাইকমিশনে জমা দিতে গেলে তা ফেরত দেয়া হয়েছে। এতে জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বিএমইটি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ দারুণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় বহু কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এক দিন পরেই পূর্ব মালয়েশিয়ার কোতাকিনাবালু মোয়ারা তুয়াং আর্মি ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদী বাংলাদেশসহ অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাইকমিশন জি টু জি’র কর্মীদের ভিসা দেয়াও আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। বিএমইটি’র মালয়েশিয়া সেলের একজন কর্মকর্তা গতকাল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জি টু জি’র ভিসা দেয়া কবে নাগাদ চালু হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা জি টু জি’র ২৪০ জন কর্মীর ভিসা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণা করায় বাংলাদেশী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দেয়ার পাশাপাশি অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। দেশটিতে এখন অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ও চলছে। এতে মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সরকারী সর্বোচ্চ কূটনৈতিক উদ্যোগের পর ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মালয়েশিয়ায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র প্লানটেশন খাতে জি টু জি প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ঐ সময়ে সরকার ডাকঢোল পিটিয়ে সারাদেশে থেকে প্রথম দফায় ১৪ লাখ কর্মীর নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে মালয়েশিয়ায় জি টু জি’র মাধ্যমে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। বিগত কয়েক বছরে জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া থেকে ১১ হাজার ৪৬৯ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র এসেছে। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় ৯ হাজার ৮৯২ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি মাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনের মালয়েশিয়া সেল সারওয়ার্ক অঞ্চলের প্লানটেশন খাতে কর্মী নিয়োগের জন্য ৫ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র মালয়েশিয়ায় প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে মালয়েশিয়া সফরকালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার সারওয়ার্ক অঞ্চলের প্লানটেশন খাতে এসব কর্মী প্রেরণের কথা ছিল । জি টু জি’র আওতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সারওয়ার্ক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের চুক্তিও আলোর মুখ দেখেনি। মালয়েশিয়ার সারওয়ার্ক-কুচিংস্থ এজেন্সি পেকারজান সোনালী এসডিএন বিএইচডি’র নির্বাহী পরিচালক আহমদ জাইদী বিন স্বপন ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার সারওয়ার্কে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। আহমদ জাইদী বিন স্বপন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মী আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় যেত। এতে বহু কর্মী প্রতারণার শিকার হয়েছিল। ২০০৭ সালে বেসরকারী উদ্যোগে ২ লাখ ৭৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল। ওই সময়ে অনেক কর্মী কাজ না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে-অনিদ্রায় দিন কাটিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তাদের অনেকেই দেশে ফিরে এজেন্সির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছিল। আবার অনেকেই সেদেশে কর্মসংস্থান লাভ করে এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। এদিকে, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ ভেস্ট মার্কেটিং এসডিএনবিএইচডি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী দক্ষ কর্মীদের দেশটিতে বৈধতা দেয়া এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দ্রুত উন্মুক্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামান করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে আটক অবৈধ বাংলাদেশীদের আইনি সহায়তা দিয়ে দেশটিতে বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন