শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ৮ মার্চ, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মীর কাসেমের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আপিল বিভাগের এটি সপ্তম রায়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকারপক্ষ। তবে রিভিউ করবে বলে জানিয়েছে আসামিপক্ষ। এদিকে রায়ের পর হরতাল ডেকেছে জামায়াত।  
ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত ১০টি অভিযোগের মধ্যে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার একাদশ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, নবম, দশম ও চতুর্দশ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দন্ড বহাল রাখা হয়েছে। তবে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন আসামি।
এই রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নির্দিষ্ট একটি বেঞ্চের পাঁচ সদস্য এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑবিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। সরকারপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং এস এম শাহজাহান।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশিত ফল পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধী যারা সেই সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের সারা পাকিস্তানের নেতা ছিলেন, সেই নিজামী দ-িত হয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানের যিনি সভাপতি ছিলেন, মুজাহিদ দ-িত হয়েছেন। মুজাহিদের সাথে মীর কাসেম ছিলেন, সেক্রেটারি, তিনি আজ দ-িত হয়েছেন। তিনি দ-িত না হলে ন্যায়বিচারের ধারাবাহিকতা ক্ষুণœ হতো। আদালত তাকে সঠিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।’ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আদালতের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন মাহবুবে আলম। স্বাধীনতার চার দশকেরও বেশি সময় পরে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য সরকারের সদিচ্ছাকেই বড় করে দেখছেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘যারা মনে করেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা ভ্রান্ত। শেখ হাসিনা যদি না থাকতেন, নির্বাহী বিভাগে এরকম দৃঢ় মনোভাবের একজন না থাকলে এটা কিন্তু হতো না। তাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই বিচার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলা হয়েছিল।’
মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মীর কাসেমের আপিলে রায় নিয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। ইতিহাস এই রায়ের বিচার করবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। খন্দকার মাহবুব বলেন, সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দিয়েছেন। দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। একটি থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে বক্তব্য রেখেছি। খন্দকার মাহবুব বলেন, লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আমরা আইনজীবীরা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব, এ বিষয়ে আমরা রিভিউ আবেদন করব কি না।
সপ্তম আপিলের নিষ্পত্তি
এই রায়ের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের সপ্তম আপিল নিষ্পত্তি হলো আদালতে। এর আগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে সাঈদী ও নিজামীর মামলায় এখনও রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি। সাঈদীর রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও নিজামীর রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত হবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর।  
বিচার কার্যক্রম
২০১২ সালের ১৭ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মীর কাসেম গ্রেফতার হন। পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী বছরের ১৬ মে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। ৩০ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল-২-এ। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু করে প্রসিকিউশন। মামলাটি ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয় ওই বছরের ৪ মে। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি।
সব অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে ১৪ অভিযোগে মীর কাসেমের বিচার হয়। তবে ওই আদালতে প্রমাণিত হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও চতুর্দশ Ñ এই ১০টি অভিযোগ। এর মধ্যে একাদশ অভিযোগে সর্বসম্মতভাবে মৃত্যুদ- দেওয়া হলেও দ্বাদশ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় মীর কাসেমকে। প্রমাণিত অন্য আট অভিযোগে মোট ৭২ বছরের দ- পান তিনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে আপিল বিভাগে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ অভিযোগ থেকে খালাস পান মীর কাসেম। অন্য সাত অভিযোগ প্রমাণিত হয় আপিল বিভাগে। এসব অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দ-ও বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেমের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় লুৎফর রহমান ফারুককে। তৃতীয় অভিযোগ, ২২ বা ২৩ নভেম্বর মীর কাসেমের নেতৃত্বে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয় ডবলমুরিং থানা এলাকার কদমতলীর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে। সপ্তম অভিযোগ, মীর কাসেমের নেতৃত্বে আল বদর সদস্যরা ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ দু’জনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে ডালিম হোটেলে। নবম অভিযোগ, ২৯ নভেম্বর মীর কাসেমের নেতৃত্বে সৈয়দ মো. এমরানসহ ছয়জনকে অপহরণ ও নির্যাতন। দশম অভিযোগ, ২৯ নভেম্বর মীর কাসেমের নির্দেশে মো. জাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরণ ও নির্যাতন করে আলবদর সদস্যরা। একাদশ অভিযোগ, একাত্তরের ঈদুল ফিতরের পর যে কোনো এক দিন মীর কাসেমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে আল বদর সদস্যরা। নির্যাতনে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচ অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় কর্ণফুলী নদীতে। চতুর্দশ অভিযোগ, নভেম্বরের শেষ দিকে মীর কাসেমের নেতৃত্বে আল বদর সদস্যরা নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ ও নির্যাতন করে আল বদর সদস্যরা। একাদশ অভিযোগে মৃত্যুদ- ছাড়াও তৃতীয়, সপ্তম, নবম ও দশম অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে সাত বছর করে কারাদ- দেওয়া হয় মীর কাসেমকে। এছাড়া দ্বিতীয় অভিযোগে ২০ বছর এবং চতুর্দশ অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে।


















































 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Rafiq Bhuyan ৯ মার্চ, ২০১৬, ১১:৩৬ এএম says : 0
jalimar vicer hobe akdin
Total Reply(0)
আমজাদ ৯ মার্চ, ২০১৬, ৪:৩৫ পিএম says : 0
জীবন মৃত্যু সবই আল্লাহর হাতে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন