শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

হরি ধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী আর নেই

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ : দেশে সাড়া জাগানো “হরি” ধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী আর নেই। ঝিনাইদহের এই মডেল কৃষক গত বুধবার মধ্য রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আসাননগর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মনিরুজ্জামান ও সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীনসহ মিডিয়াকর্মী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটে যান তার বাড়িতে। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলীয়ারপুর শ্বশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। হরিপদ’র পালিত পুত্র রুপ কুমার জানান, তার বাবা ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরপরই তিনি তার বাবা কুঞ্জু লাল কাপালী ও মা সরোধনীকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন। কিশোর হরিপদ পরের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যুবক বয়সে তার পঙ্গু শ্বশুর একমাত্র মেয়ে সুনিতীকে বিয়ে দিয়ে আসাননগর গ্রামে ঘরজামাই রাখেন। মৃত্যুর আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও বিবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে কৃষক হরিপদ এই ধান উদ্ভাবনের বিষয়ে জানিয়েছিলেন, ১৯৯০ সালের দিকে তার ইরি ধান ক্ষেতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধান গাছ দেখে তিনি সেটাকে আলাদা করে রাখেন। এরপর বীজ সংগ্রহ করে চার বছর পর তিনি নিজের ক্ষেতেই ১৯৯৪ সালে আবাদ করে সুফল পান। এরপর এই ধানের আবাদ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার কৃষকরা বীজ সংগ্রহ করে ইরি ও বোরো মৌসুমে আবাদ করতে থাকেন। এই ধান উদ্ভাবনের ফলে হরিপদকে শন্মানের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি সংগঠন তাকে সম্মাননা ও এওয়ার্ড প্রদান করেন। নবম ও দশম শ্রেনীর কৃষি শিক্ষার বইতে হরিপদ কাপালীর নাম উঠে আসে। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নাম পরিচয়বিহীন এক জাতের ধানের ব্যাপক আবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে ঝিনাইদহের সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল এই ধান চাষের উপর আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালে চ্যানেল আই এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ ঝিনাইদহে এসে হরি ধানের উপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করলে দেশব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। পোকামাকড়, ক্ষরা ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বিশেষ ধরনের এই জাতের ধান চাষের উপর ছাড়পত্র প্রদান করে। এদিকে কৃষক হরিপদ কাপালীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, চ্যানেল আই এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি এই জাত কৃষকের মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন