বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ড. শায়খ মোহাম্মদ আইউব (রহ:)

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহফুজ আল মাদানী
তার পুরো নাম মোহাম্মদ আইউব বিন মোহাম্মদ ইউসুফ বিন মোহাম্মদ সুলাইমান উমর। পবিত্র মক্কা আল মোকাররামাতে ১৩৭২ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল অতিক্রম করেন পবিত্র মক্কাতেই। মাত্র বারো বছর বয়সে মসজিদে বিন লাদেনে শায়খ আব্দুর রহমান সাহেবের কাছে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। ১৩৮৯ হিজরীতে মক্কাতেই শেষ করেন প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পাড়ি জমান প্রিয় শহর মদীনা মুনাওয়ারাতে। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র, বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৩৯৬ হিজরী সালে ইসলামী আইন (শরীয়াহ্) বিভাগে অনার্স (সম্মান) শেষ করে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কুরআনুল কারীম ও ইসলামিক শিক্ষা’ বিভাগে মাস্টার্স ও এম ফিল করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ থেকে ১৪০৮ হিজরীতে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মহান এই ব্যক্তি তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস, ফিকহ, উসূলে ফিকহ্ সহ বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি প্রসিদ্ধ যে সকল শায়খের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন তন্মধ্যে, শায়খ আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ উসমান, শায়খ মোহাম্মদ সৈয়দ ত্বানত্বাবী, শায়খ আকরাম দ্বিয়া আল আ’মরী, শায়খ মোহাম্মদ আল আমিন শানক্বেতী, শায়খ আব্দুল মুহসীন আল আব্বাদ, শায়খ আব্দুল্লাহ আল গুনাইমান ও শায়খ আবু বকর আল জাযায়েরী প্রমুখ। এছাড়া পবিত্র কোরআনকে বিভিন্ন ক্বিরাতে পড়া ও পড়ানোর অনুমতি লাভ করেন বিভিন্ন শায়খ ও ক্বারীগণের কাছ থেকে। তাঁদের মধ্যে শায়খ হাসান বিন ইবরাহিম, শায়খ আহমদ আব্দুল আজিয আয যাইয়াত ও শায়খ খলিল বিন আব্দুর রহমান আল ক্বারী উল্লেখযোগ্য।
শায়খ ড. মোহাম্মদ আইউব কর্মজীবন শুরু করেন অনার্স সমাপন করার পরপরই। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কুরআনুল কারীম ও ইসলামিক শিক্ষা’ বিভাগের লেকচারার পদে ১৩৯৭ হিজরীতে শিক্ষকতা শুরু করেন। পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করার পর একই বিভাগের অধ্যাপক পদে অধ্যাপনা করতে থাকেন। পাশাপাশি ঐ বিভাগের পরীক্ষা সচিব হিসেবে দশ বছর নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। তিনি ‘বাদশাহ ফাহাদ কোরআন ছাপাখানার’ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওত করার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন নামী-দামী মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। সবচেয়ে বড় পরিচয় হল তিনি ইসলামের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে ক্বুবা’ ও ইসলামের প্রাণকেন্দ্র ‘মসজিদে নববীতে’ ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মসজিদে ক্বুবাতে তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শায়খ খলিলের সাথে ইমাম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তারপর ১৪১০ হিজরী সনে ‘মসজিদে নববীর’ সহযোগি ইমামের দায়িত্ব পান। শায়খ ড. মোহাম্মদ আইউব নিজেই বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি যখন মসজিদে ক্বুবার ইমাম, তখন শায়খ আব্দুল আজিয আমার কথা শুনতে পেয়ে তাঁর ছেলের মাধ্যমে আমাকে তাঁর বাসায় ডেকে পাঠান। আমার তেলাওত শুনে বিমোহিত হয়ে বলে উঠেন, তুমি কি ‘মসজিদে নববীতে’ তারাবীহ’র নামাজের ইমামতি করতে পারবে? আমার হ্যাঁ সূচক জবাব শুনে সরকারী বিধি মোতাবেক রাষ্ট্রীয় ফরমানের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত ইমাম হিসেবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়’। তিনি দীর্ঘ সাত বছর মসজিদে নববীতে সহযোগি ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে তাঁর ইন্তেকালের আগের বছর ১৪৩৬ হিজরীর রামাদ্বানুল মোবারক মাসে তারাবীহ’র নামাজের ইমামতি করেন মসজিদে নববীতে। তাছাড়া তিনি গ্রেট ব্রিটেনের বার্মিংহাম জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্বের প্রসিদ্ধ ক্বারীগণের অন্যতম হিসেবে শায়খ ড. মোহাম্মদ আইউবকে গণনা করা হয়। তাঁর সুললিত কণ্ঠে মধুর তেলাওত ধ্বনি সবাইকে বিমোহিত করে তুলত। তাঁর তেলাওতের অডিও, ভিডিও রেকর্ড প্রতিনিয়ত রেডিও এবং টিভি চ্যানেল সমূহে সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। এমনকি ‘বাদশাহ ফাহাদ কোরআন ছাপাখানার কমপ্লেক্স’ এর উদ্যোগে তাঁর তেলাওতের রেকর্ড বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয় হচ্ছে। এই ছিল তাঁর কোরআনুল কারীমের বিশেষ খেদমত।
পারিবারিক ভাবে শায়খ ড. মোহাম্মদ আইউব দুজন রমনীকে জীবন সঙ্গীনি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তারঁ পাঁচজন ছেলে ও দুইজন মেয়ের মধ্যে সকলেই হাফেজ। তন্মধ্যে একজন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আরবী ভাষা’ অনুষদের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। উল্লেখ্য যে, তিনি ছিলেন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত। সৌদি আরবে তিনি নাগরিকত্ব লাভ করেন। সেই মহান শায়খ ড. মোহাম্মদ আইউব বিগত ৯ই রজব ১৪৩৭ হিজরী মোতাবেক ১৬ই এপ্রিল ২০১৬ ইংরেজি রোজ শনিবার সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সকাল বেলা আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন। বর্ণনাযোগ্য যে, ইন্তেকালের আগের রাতে তিনি তাঁর মসজিদে এশার নামাজের ইমামতি করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। আল্লাহ যেন তাঁর এ বান্দার দরজা বুলন্দ করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন