শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৪. কুরআন তেলাওয়াতের যোগ্যতা একটি ইর্ষানীয় বিষয়। (সহীহ বুখারী হা: ৫০২৫)। সুতরাং দারুল কিরাতের কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে অনুধাবন করা যায়। আর সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি হরফ পড়লে ১০টি নেকি আর রমজান মাসে পড়লে ৭০ নেকি। অতএব বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার জন্য দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট হচ্ছে নেক আমলের বিশাল ভান্ডার।
কুরআনকে সহহীভাবে পড়তে তাজবীদ শিক্ষা দেয়া হয়: দারুল কিরাতে পবিত্র কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে সহায়ক গ্রন্থ ‘আল কাউলুছ ছাদিদ’ ও ‘প্রাথমিক তাজবীদ’ নামক তাজবীদ কিতাব শিক্ষা দেয়া হয়। এব্যাপারে পবিত্র কুরআন বলা হয়েছে: ‘আর আপনি কুরআনকে তারতীলের সাথে তথা তাজবীদের সাথে তিলাওয়াত করুন।’ (সুরা: মুজ্জামীল, ৪)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী (সা:) বলেন: (কিয়ামতের দিন) কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, তুমি পড় এবং উপরে আরোহন করতে থাক। আর তুমি দুনিয়াতে যেমন তারতীলের সাথে (ধীরে ধীরে তাজবীদ সহকারে) পাঠ করতে অনুরূপভাবে ধীরে ধীরে তারতীলের সাথে পাঠ করতে থাক। যে আয়াতে তোমার পাঠ শেষ হবে সেখানেই তোমার অবস্থান হবে। (আস সুনান, ইমাম আবু দাউদ, পৃষ্ঠা-২০৬)।
খতমে কুরআন: প্রতিদিন জোহরের নামাজের পূর্বে পবিত্র কুরআনের খতম পড়া হয়। একই সময়ে সহ¯্রাধিক কেন্দ্রে এ খতম সম্পন্ন হয়। তাহলে প্রতিদিনের হিসাব দাড়ায় সহ¯্রাধিক কুরআনে খমত হচ্ছে। আর তো রমদান মাস! এক খতমে ৭০ খতমের সওয়াব। সত্যি এ সওয়াবের হিসাব ক্যালকুলেটারে মিলানো যাবে না। সত্যি ‘দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট’ নেক আমলের মহাসমুদ্র।
খতমে খাজেগান: খতমে খাজেগান-কুরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরীফ ও বিভিন্ন নেক আমলের ওযিফা সম্মিলিতভাবে পড়া হয়। যা বিচ্ছিন্নভাবে পড়া দোয়া-দুরুদের সমাহার। আওলিয়ায়ে কেরামগণ যুগ যুগ ধরে পড়ে আসছেন। এ খতমের উছিলায় অনেক হাজত পুরন হয়েছে এবং হচ্ছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়: খতমে খাজেগানে পাঠ করা হয় কুরআনে কারিমের সুরা এখলাছ। হাদিসে বলা হয়েছে: সুরা এখলাস তিনবার পাঠ করা হলে এক কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু এ খতমে সুরা এখলাস শতাধিক বার পাঠ করা হয়। খতমে খাজেগানে পাঠ করা হয় মহান আল্লাহর সিফাতী নামসমূহ। আল্লাহর ৯৯ সিফাতি নাম রয়েছে। এ খতমে আল্লাহর উল্লেখযোগ্য নামগুলো পাঠ করা হয়। খতমে পাঠ করা হয় : ‘ইয়া হায়্যু ইয়া কাইয়্যুম’। যা নবী করীম (সা:) বদরের যুদ্ধের ময়দানে একটি গাছের নিচে নামাযরত অবস্থায় সেজদায় পাঠ করেছিলেন। যার কারণে মুসলমান সৈনিকদের মধ্যে তদ্রা আসলো এবং প্রশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এ ধরণের দোয়া দিয়ে সমস্ত খতমে খাজেগান সাজানো।
হামদ ও নাতে রাসুল (সা:): দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্টে’র শাখাগুলোতে (প্রশিক্ষন কেন্দ্রে) প্রতিদিন একটা সময় করে কুরআনের শিক্ষার্থীরা হামদ-নাতে রাসুল তথা ইসলামী সঙ্গিত পরিবেশন করতে থাকে। এতে কোমলমতি শিশুরা অশ্লিল গান বাজনার বিকল্প ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। এলাকার মানুষ এ ধরণের সঙ্গিত শুনে পুলকিত হয়। হৃদয়টা আল্লাহ ও রাসুল প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে।
সিরত বয়ান ও আখলাকী তরবিয়ত শিক্ষা: দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট-এর রুটিন মোতাবেক জোহরের নামাজের পর হয় খতমে খাজেগান। এরপর নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ওয়াজ হয়। রুটিনে যার নাম দেয়া হয়েছে- ‘সিরত বয়ান’। প্রতিদিন নতুন বিষয়ের উপর আলোচনা করা হয়। রয়েছে ছোট ছোট শিশুদের জন্য ‘আখলাকি বয়ান’। একজন শিক্ষক তাদের প্রেকটিকেল দেখিয়ে দেন, কিভাবে ওযু করতে হয়। পাক-পবিত্রতা তথা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিভাবে থাকতে হয়। নামাজ কিভাবে পড়তে হয় ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়।
ঐতিহাসিক বদর দিবস পালন: ইসলামের প্রথম যুদ্ধ এবং বিজয় হচ্ছে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। যা রামদান মাসের ১৭ তারিখ বদর প্রান্তরে অনুষ্ঠিত হয়। মহান এ যুদ্ধকে স্মরণ করে প্রতিটি কেন্দ্র ১৭ রামাদান ‘ঐতিহাসিক বদর দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। এ দিবসে আলোচনার মাধ্যমে ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ মুসলমানগণ নতুন করে সবক গ্রহন করে উদ্বুদ্ধ হন ইসলামি চিন্তা চেতনায়। ১৭ রামাদান কি ঘটেছিল? কিন্তু যে এলাকায় দারুল কিরাতের কেন্দ্র রয়েছে সে এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছে, এটা ইসলামের প্রথম যুদ্ধ ও বিজয়। ইসলামি তথা ঈমানী চেতনা থাকলে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করা কোন বিষয় নয়। এ দিবসের মাধ্যমে জানা যায়।
প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা এবং বই কিনা পুরস্কার: প্রতিভা বিকাশের লক্ষে রমজান মাসের শেষ দিকে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে আয়োজন করা হয় কিরাত ও হামদ, না’তে রাসুল (সা:) এর উপর প্রতিযোগিতা। এর মাধ্যমে প্রতিবা বিকশিত হয় শিশু-কিশোরদের মধ্যে। এতে শিশু-কিশোররা আনন্দের সহিত অংশ গ্রহন করে। বিদায়ী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে মহামূল্যবান বই। এতে হাজার হাজার কেন্দ্রের শিক্ষার্থীর মাঝে বিভিন্ন ধরণের বই চলে যাচ্ছে। এটা বই পড়ার মাধ্যম এক বিরাট বিপ্লব বলা চলে। এ উপলক্ষে প্রতিটি লাইব্রেরীতে পড়ে বই কিনার ধুম। মাহে রামাদান মাসে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট এর বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষাকে উপলক্ষ করে প্রবিন ও নবিন লেখকগণ নতুন নতুন বই প্রকাশ করে থাকেন। বিশেষত: দারুল কিরাতকে কেন্দ্র করে অনেক নতুন লেখক সৃষ্টি হয়েছেন এবং হচ্ছেন যা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে।
বিদায়ী অনুষ্ঠান: অবশেষে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট-এর আওতাধীন শাখা কেন্দ্রের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। আয়োজন করা হয় বিদায়ী অুনষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে কত যে মধুর সর্ম্পক ছিল এ বিদায়ী অনুষ্ঠান দেখলে বুঝা যায়। এ যেন এক মাস নয়, যেন এক বছর তারা এক সাথে ছিল। কান্নার রুল পড়ে। এ জান্নাতি কাফেলার আগামী রমদান মাস পর্যন্ত এ পরিবেশে আর দেখা হবে না। এ ভালবাসা কুরআনের জন্য আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি।
কারী সাহেবদের হাদিয়া: প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাদের কোন নির্ধারিত বেতন নেই। চুক্তিও করা হয় না। বিদায়ের সময় কমিটির পক্ষ থেকে খুশি হয়ে যা দেয়া হয় তা তারা আনন্দ চিত্তে গ্রহন করেন। অনেকে অবৈতনিকভাব খেদমতও করেন। পরিশ্রম আর সময় দেয়ার হিসাব কষলে যা দেয়া হয় তা প্রকৃত মজুরি হয় না। এর মুজুরি দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। এর প্রতিদান পরাপারে মাওলার কাছে পাবার আশায় প্রত্যেক শিক্ষকগণ কুরআনের তালিম দিয়ে থাকেন। এমনও দেখা গেছে, তিনি প্রাইভেট কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বা বড় ব্যবসায়ী। তার মাসে ২০ থেকে ৩০হাজার টাকা বেতন, মজুরি বা আয় করে থাকেন। কিন্তু পবিত্র কুরআনের খেদমতের জন্য তারা তা ত্যাগ করে চলে আসেন দারুল কিরাতের প্রশিক্ষণে। এ যেন কুরআনের টানে পরকালের মহা প্রাপ্তির আশায় রমদান মাসের কুরআনের শ্রমিক। অবশ্যই তারা পরকালে তাদের এ প্রতিদান পাবেন। ইনশা আল্লাহ। তারপরেও বলতে হচ্ছে হাদিয়া হিসেবে যা পান তা দিয়ে কিছুটা হলেও আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। এটা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রাহ.) এর অবদান দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট সৃষ্টির ফসল।
আম জনতার সাওয়াব নেওয়ার অনন্য সুযোগ:
দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার এক অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে সাজাতে গিয়ে সমাজের নানান পেশার মানুষ আন্তরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে খেমত করে থাকেন। আর্থিক, শারীরিক ও মানষিকভাবে তাদের সহযোগিতার অবদান অতুলনীয়। পবিত্র কুরআনের খেদমতের প্রতিদান অবশ্যই আল্লাহ পাক দুনিয়া আখেরাতে দিবেন।
পরিশেষে বলতে চাই, কুরআনের শুরে শুরে মুখরিত এক গুলবাগ দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট। এ প্রতিষ্ঠানের খেদমত অবশ্যই এ জগতে সবচেয়ে বড় এক নেক আমলের কারখানা। এখান থেকে সবাইকে যেন নেক আমল গ্রহন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Muhammad Zillur Rahman ১৩ জুলাই, ২০১৭, ৫:৪৫ পিএম says : 0
As salamu alaikum, ato sundar kore "DARUL QIRAT MAJIDIA FULTALY TRUST" er kotha likhechen ALLAH uttom jeza dan korun. PAK KALAMER HOROF TIK rakhte giya SAHEB KIBLA FULTALY RH: 5 March 1985 shorir teke rokto joriyechen. Thanks agains
Total Reply(0)
১৫ জুলাই, ২০১৭, ৮:২১ এএম says : 0
অশংক মোবারবাদ দৈনিক ইনকিলাব কে এত সুন্দর করে লিখার জন্য
Total Reply(0)
১৫ জুলাই, ২০১৭, ৯:৫৯ এএম says : 0
Fultali Saheb Qiblar Quraner Ai bishal khedmat Allah kobul korun...
Total Reply(0)
Muhammad Imad Uddin ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১০:৩৫ এএম says : 0
দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট সমগ্র বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কুরআন শিক্ষা বোর্ড, যার কল্যাণে দেশে দেশে হাজার হাজার শাখায় লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী কুরআনের জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পেয়েছে।
Total Reply(0)
ahmed al monjur ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:৩৬ পিএম says : 0
মাশা'অাল্লাহ
Total Reply(0)
Md Abdus Shahid ১৫ জুলাই, ২০১৭, ৫:৪৬ পিএম says : 0
আজীবন এই ট্রাষ্টের সাথে সম্পৃক্ত থেকে খেদমত করতে চাই।
Total Reply(0)
এইচ এম ফয়জুর রহমান ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১১:২৯ এএম says : 0
দারুল কিরাত একটি ইতিহাস এ নিয়ে লিখাটি আমার খুব ভাল লাগছে, ইনকিলাব পরিবারের সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
Total Reply(0)
AMINUL HUDA ১৬ জুলাই, ২০১৭, ২:২০ পিএম says : 0
আমিন।
Total Reply(0)
Mohammad Nazrul Islam ১৬ জুলাই, ২০১৭, ৫:৪৭ পিএম says : 0
Grate and Very initiative for learning Holy Quran. Very Nice and informative writing.
Total Reply(0)
Tuhil ১৭ জুলাই, ২০১৭, ২:৩৯ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
মোঃ আবু তাহের চৌধুরী হেলাল ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৪৬ পিএম says : 0
মাশা আল্লাহ ! আল্লাহ তায়ালা যেন হযরত সাহেব ক্বিবলাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন। (আমীন)। আর ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
ক্বারী বেলাল আহমেদ ১ মে, ২০১৯, ১১:২৬ পিএম says : 0
দারুল কিরাতের পক্ষে লেখা লেখি করার জন্য ধন্যবাদ,
Total Reply(0)
usman ১৪ জুন, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদেরকে সারাটি জীবন তোমার অলির দেখানো পথে পবিত্র কুরআনের খিদমাত করার তৌফিক দান করো।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন