বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় সয়লাব ঢাকা

নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীচক্র

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় রাজধানী সয়লাব। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেই। বরং দিন দিন এগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। এদিকে, চাহিদার কারণে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চোরচক্রের দৌরাত্মও বেড়েছে। জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশেই নিষিদ্ধ এ যানগুলো চালানের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা।
পুলিশকে ম্যানেজ করে রেখেছে তারাই। রাজধানীর কদমতলীতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। কদমতলী থানা এলাকায় এসব রিকশার সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে, দিনরাত রাস্তায় চলাচলের মতো জায়গা থাকে না। সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে।
স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের এজন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ-এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,  জনবলের অভাবে রাজধানীর সব এলাকায় বিআরটিএ-এর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্টের অভিযানে বহু রিকশার মোটর খুলে ফেলা হয়েছে। ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে ইজিবাইক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দারুস সালাম, কাফরুল, পল্লবী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, তুরাগ, হাজারীবাগ, আদাবর থানা এলাকার অলি গলি ব্যটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় সয়লাব। পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলাচল করলেও উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। জসীম নামে এক চালকের ভাষায়, আগে এগুলো অবৈধ ছিল। চলতে চলতে এখন বৈধ হয়ে গেছে।
সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হানিফ খোকন বলেন, গোটা রাজধানীতে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা এখ লাখ বা তার চেয়েও বেশি হবে। হালকা এ যানগুলোর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। চাকার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছে। এগুলো চার্জ করা হয় চোরাই বিদ্যুত দিয়ে। সেখানেও কোটি কোটি টাকা চুরি হচ্ছে।  তিনি বলেন, নিষিদ্ধ এ যানগুলো যাতে চলাচল করতে না পারে সেজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার আমাদের সেই দাবি মানছে না। বরং দিন দিন এগুলোর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যা মানুষের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকী।  
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় ব্যটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ টা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা নামছে রাস্তায়। এতে করে মানুষের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রতিটি এলাকায় প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এসব যানবাহন রাস্তায় নামানো হয় বলে সাধারণ মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। তাদের মতে, এসবের বিরুদ্ধে বলতে গেলে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। আলাপকালে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগি জানান, প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে এভাবে রাস্তা দখল হতেই থাকবে। অনেক এলাকায় এখনই পায়ে হাঁটার মতো অবস্থা নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও এগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই। চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে এগুলো রাস্তায় নামালে পুলিশ বাধা দিতো। এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় পুলিশ আর কিছু বলে না। এজন্য সিন্ডিকেটের নেতাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিলে কোনো সমস্যা হয় না। কদমতলী থানার মুরাদপুর ও যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকায় প্রায় এক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে।  
রিকশার ভিড়ে দনিয়া এলাকায় এখন হাঁটার মতো রাস্তাও নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটার পরেও প্রশাসন একেবারে নীরব। জানা গেছে, কদমতলী থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক নিজেকে পুলিশের উর্ধ্বতস কর্মকর্তার চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় নামিয়েছে। তাকে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে অন্যরাও অনায়াসে ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় নামাচ্ছে। দনিয়া এলাকার একজন ভুক্তভোগি বলেন, যে হারে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমাদের শিশুদের স্কুলে যাওয়া একদিন বন্ধ হয়ে  যাবে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কদমতলী থানার দনিয়া এলাকাতে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় এক হাজার  ব্যটারিচালিত রিকশা নামিয়েছে একটি চোরাই সিন্ডিকেট। এলাকাবাসী জানায়, ভাগিনা বাবুল, ফারুক ও বাদশা এই সিন্ডিকেটের হোতা। এরা নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা থেকে রিকশা চুরি করে এনে দনিয়া এলাকার বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজে রেখে সেগুলোর রঙ পরিবর্তন করে ব্যটারি লাগিয়ে রাস্তায় নামায়। জানা গেছে, বাবুল, ফারুক ও বাদশা সিন্ডিকেটের সাথে আরও আছে মনির তালুকদার, জুয়েল ও সালাহউদ্দিন। এরা ডাম্পিং স্টেশন থেকেও রিকশা নিয়ে আসে। স্থানীয়রা জানান, বাবুল, ফারুক ও বাদশা সিন্ডিকেট রিকশা চুরি করে এনে দনিয়া ও পাটেরবাগ এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে রাখে। রঙ পরিবর্তন করে ব্যাটারি ও মোটর লাগানোর পর সেগুলো রাস্তায় নামানো ও বিক্রির দায়িত্ব পালন করে আল আমীন। যেসব গ্যারেজে চোরাই রিকশা রাখা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাটেরবাগ পানির পাম্পের কাছে মানিকের গ্যারেজ, কোদারবাজার তিন রাস্তার মোড়ের মাজহারুলের গ্যারেজ, গোয়ালবাড়ি মোড়ের কাছে কহিনুরের গ্যারেজ, দনিয়া গোয়ালবাড়ি রাস্তার শেষ মাথায় অবস্থিত মহসীনের গ্যারেজ এবং দনিয়া বাজারের কাছে হারুনের গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে পুলিশ হানা দিলেই চোরাই রিকশা উদ্ধার করতে সক্ষম হবে বলে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান। অন্যদিকে, এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয় মুরাদপুর, পাটেরবাগ ও ধোলাইপাড় এলাকার গ্যারেজে। সেখানে চোরাই বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। চালকরা জানায়, চোরাই বিদ্যুত না হলে তাদের পোষায় না। চোরাই বিদ্যুতে চার্জ করতে টাকা কম লাগে। জানা গেছে, চোরাই বিদ্যুতের জন্য মুরাদপুর এলাকার নাসির সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়। জুরাইন বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে নাসির আবার আগের মতোই চোরাই লাইন চালাচ্ছে। একই সাথে চোরাই বিদ্যুতে মুরাদপুর ও কোদারবাজার এলাকায় ব্যাকোলাইটের ব্যবসাও চলছে তার।
সরকার মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিষিদ্ধ করেছিল দুই বছর আগে। ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর ইজিবাইকগুলো মহাসড়ক ছেড়ে ঢাকার অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এর সাথে গত বছর নতুন করে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। মহাসড়কেও এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা দেদারছে চলাচল করছে। কোনো কোনো মহাসড়কে আবার এগুলো চলে উল্টো পথে। পুলিশ সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতিও পক্ষ থেকেই বহুবার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা মন্ত্রীর কাছে বহুবার এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। মন্ত্রী আমাদেরকে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বলতে বলতে আমরাও এখন চুপ হয়ে গেছি। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রুস্তুম আলী ১৬ জুলাই, ২০১৭, ৪:১৮ এএম says : 0
আমাদের প্রশাসন কীর করছে ?
Total Reply(0)
Uday Totul ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৭ এএম says : 0
সারাদেশে এদের নিষিদ্ধ করা হোক...এমনিতেই-বিদ্দ্যুত ঘাটতি -তার উপর এরা আরো দেশের বিদ্দ্যুত ঘাটতি করছে.....তা ছারা এ যান গুলো বিপদ জনক..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন