রফিকুল ইসলাম সেলিম : নগরীতে ৪ দিনের মাথায় সংঘটিত একটি জোড়া খুনসহ চাঞ্চল্যকর দু’টি হত্যা মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ এখনও অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের এয়াকুব নগরে জোড়া খুনের একমাত্র আসামী রফিকুল ইসলাম হৃদয়কে ৮ দিনেও গ্রেফতার করা যায়নি। একমাত্র আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার তদন্তেও কোন গতি আসছে না।
চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ৪ দিনের মাথায় শনিবার রাতে নগরীর বায়েজিদ থানার রৌফাবাদের পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন প্রবাসীর স্ত্রী পারভীন আক্তার। শিশু পুত্রের সামনেই খুনীরা বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে লুটপাট শেষে পালিয়ে যায়।
এখনও পর্যন্ত হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের ভাসুরের পুত্র আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানী শেষে তাকে ৩ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়।
শনিবার রাতে পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার জয়নব ভিলার তৃতীয় তলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় প্রবাসী নুরুল আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তারকে। দরজা খোলা থাকার সুযোগে ৩ দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু পুত্র নূর মোহাম্মদ সাঈদকে গলাটিপে ধরে বাথরুমে আটকে রাখে খুনীরা। রাতেই নুরুল আলমের বড় ভাই আব্দুশ শুক্কুরের ছেলে মামুন পারভীনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দুবাই থেকে দেশে ফিরে সোমবার রাতে নিহতের স্বামী অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর এই মামলায় তার ভাতিজা মামুনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় মামুনকে আজ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে জানিয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন দাবি করেছে, কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে পারভীনের ছেলেকে বাথরুমে বেঁধে রেখে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকারীরা পারভীনের বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে বলেও মামুনের অভিযোগ। এসব বিষয়ে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জয়নব ভিলার তৃতীয় তলায় পারভীন ও দ্বিতীয় তলায় তার ভাসুরের পরিবার থাকেন। স্থানীয়রা জানায়, সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ খুনের ৪ দিন পরও এটি কী নিছক ডাকাতি নাকি পরিকল্পিত খুন সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা থেকে কয়েকজনের ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের আটক করা গেলে ঘটনার রহস্য উদঘাটন সহজ হবে বলে জানান থানার ওসি। তিনি জানান, ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলে খুনের রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে বলে জানান ওসি মহসিন।
এদিকে ফিরিঙ্গিবাজারের এয়াকুব নগরে জোড়া খুনের একমাত্র আসামী রফিকুল ইসলাম হৃদয় এখনও ধরা পড়েনি। ১ মার্চ রাতে স্ত্রী আসমা বেগমকে শ্বাসরোধ করে এবং তার খালু মাকসুদুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় বিদেশ ফেরত হৃদয়। আসমার সাথে আপন খালু মাকসুদের দীর্ঘদিনের চলে আসা পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এ নির্মম হত্যাকা- ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এ জোড়া খুনের ঘটনায় হৃদয়কে একমাত্র আসামী করে থানায় মামলা হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, সাড়ে ৩ বছর আগে আসমার সাথে হৃদয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ মাস পর সে মালয়েশিয়ায় চলে যায়। তার খালুর বাসায় রেখে যায় আসমাকে। এ সুযোগে খালুর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে আসমা। ৩ বছর পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে এ খবর জেনে যায় সে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে শয়নকক্ষে স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে হৃদয়। এরপর বাসার পাশের গলির মুখে মোবাইলের দোকানে হানা দিয়ে খালু মাকসুদুর রহমানকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় হৃদয়।
খুনের পর হৃদয়কে ধরতে তার হবিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতেও হানা দেয় পুলিশ। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি এক আত্মীয়ের বাসায় পাওয়া যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ নুরুজ্জামান জানান, একমাত্র আসামী হৃদয়কে ধরতে পুলিশ নানা কৌশলে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পরকীয়ার জেরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আসামী হৃদয়কে ধরা গেলে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। খুনের ঘটনায় সে একা ছিল নাকি অন্য কারও সহযোগিতা নিয়েছে তাও এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি আশাবাদী খুব শিগগির হৃদয়কে গ্রেফতার করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন