শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অস্ত্র উদ্ধার

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রহস্যের ক‚ল-কিনারা হয়নি বাড়ছে উদ্বেগ
স্টাফ রিপোর্টার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। কে বা কারা এর সাথে জড়িত এবং কি উদ্দেশে এসব অস্ত্র আনা হয়েছিল তার কোন কুল কিনারা করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে অস্ত্রে এ চালানের সাথে জঙ্গিদের স্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ধারণা করছেন। বিষয়টি নিয়ে ডিবি পুলিশও তদন্ত করছে। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শ কাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে একের পর এক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যেও উদ্বেগ উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলেও এসময়ের মধ্যে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তদন্ত কার্যক্রম খুব জোরালো ভাবেই চলছে।
এ ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন উপপরিচালক সাইফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক জোবায়দা খানম। এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়াও ইতোমধ্যে আরো দুইটি স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা বারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ি এলাকায় একটি খাল থেকে এবং পূবৃাচল এলাকায় লেক থেকে বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকৃত এ চালনটির পেছনে জঙ্গিদের কোন যোগসুত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রযোজন। শুধু শুল্ক ফাঁকি দিয়েই যে পুরাতন অস্ত্র আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে শতাধিক গ্রæপ বিদেশ থেকে অস্ত্র আনছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যখন বড় বড় অস্ত্রের চালান উদ্ধার হয় তখনই নাশকতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অতীতেও এমনটি হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান,বিমানবন্দর কেন্দ্রিক অস্ত্র আমদানিকারক শতাধিক ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের নজরদারি করা হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্ত পথেও অবৈধ অস্ত্র আসছে। এসব কারণে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৩ জুলাই হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৯টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দারা। বিমানবন্দরের ফ্রেইট ইউনিট থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৯ জুলাই এয়ারকার্গো থেকে আমদানি নিষিদ্ধ আরও দুটি ওয়ালথার পিপি পিস্তল জব্দ করা হয়। দুই দফাতে এই অবৈধ অস্ত্রগুলো ইতালি থেকে নিয়ে আসে মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আমদানিনীতি অনুসারে জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
সূত্র জানায়, সাধারণত অস্ত্রের তিনটি অংশ থাকে। এর মধ্যে আছে বেরেল, প্লাইডার ও বডি। প্রতিটি অংশের নম্বর (ইউনিক) একই হতে হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলোর তিনটি অংশেরই নম্বর ছিল ভিন্ন ভিন্ন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, পুরনো ও ফ্যাব্রিকেটেড অস্ত্র আমাদের দেশে আমদানি করা নিষিদ্ধ। জব্দ হওয়া অস্ত্রগুলো নিয়ে অনেক রহস্য ও ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রগুলো দ্বারা রাষ্ট্র কিংবা জনগণের বড় ধরনের ক্ষতি করা সম্ভব। বিমানবন্দরে পর পর দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে নজরদারি করছি। এদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন। এব্যপারে এখন কিছুই বলা যাবে না। সময় হলেই সব জানানো হবে।
শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, যেকোনো অস্ত্র বিক্রি কিংবা ব্যবহারের আগে তার ইউনিক নম্বর এবং ক্রেতা ও ব্যবহারকারীর নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ওই ইউনিক নম্বর দেখেই পরবর্তীতে যেকোনো ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার হলে তার ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা হয়। যদি ইউনিক নম্বর ঠিক না থাকে তাহলে তার ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, বিমানবন্দরের অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। তবে দিয়াবাড়ি ও পূর্বাচল থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের ঘটনায় র‌্যাব ছায়া তদন্ত করছে। যদিও এসব অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে তাই তারাই এ ব্যপারে তদন্ত করছে।
র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, ব্যবহারকারী এবং অবৈধ অস্ত্রের চালান আমদানিকারক যেই হোক না কেন র‌্যাব কাউকে ছাড় দিবে না। আমরা এসব বিষয় কঠোরভাবে নজরদারি করছি। তিনি বলেন, বিমানবন্দর একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে অস্ত্রের চালান আসার ঘটনা খুবেই উদ্বেগের বিষয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন