শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাশরাফি তাসকিনের দুই ওভারে হাসলো বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ৯ মার্চ, ২০১৬

শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা (ভারত) থেকে : পেছনে হিমালয়, দিনের আলোতেও পরিষ্কার দেখা যায় তুষারশুভ্র পর্বতের দৃশ্য। তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকা ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৭৮০ ফুট ওপরে। এই সময়ে ঢাকার ভ্যাপসা গরম আবহাওয়ার পুরো বৈপরীত্য এখানে। এমন এক আবহওয়া এবং কন্ডিশনে না জানি কতটা বিরূপ পরিস্থিতিতেই পড়তে হয়Ñএ শঙ্কা দেশবাসীকে করতে দেয়নি মাশরাফিরা। শ্বাসকষ্টে ভোগেন বলে ইনহেলার নিতে হয় যাকে, সেই মাশরাফিকেও এত উচ্চতায় খেলতে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। দেশের জন্য জান বাজি রেখে, হাঁটুতে পাঁচ-পাঁচবার অপারেশনের পর হাঁটুতে চার-পাঁচটি নি-ক্যাপ পরে দেশকে দিচ্ছেন যিনি অবিরাম সার্ভিস, তিনি তো হিমালয় হৃদয়েরই মানুষ। হিমালয়কে কাছে পেয়ে, তার সেই হিমালয় হৃদয়টি তাই হয়েছে প্রকাশ। তামীমের ব্যাট ক্যারি থ্রু দ্য ইনিংসে ৮৩’র সুবাদে ১৫৩/৭ পর্যন্ত টেনে নিয়েও হাত থেকে ফসকে যেতে বসেছিল ম্যাচটি। যেভাবে ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন, তাতে শেষ ২৪ বলে ৪২ রানের টার্গেটকে অসম্ভব মনে হয়নি। তবে শেষ দিকে এসে এমন ম্যাচটি হাতের মুঠোয় নিতে পেরেছে বাংলাদেশ, ২ ওভারেই করেছে দৃশ্যপটে পরিবর্তন। ১৭তম ওভারে নিজে বল হাতে নিয়ে মারউইকে শিকারের বিপরীতে মাত্র ৩ রান করেছেন খরচ মাশরাফি, পরের ওভারে তাসকিন দিয়েছেন নির্ভরতা। ৬’র বেশি করেননি খরচ। এবং তাতেই টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নেদারল্যান্ডকে ৮ রানে হারিয়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
ধর্মশালার উইকেট কন্ডিশন নিয়ে কম আলোচনা হয়নি, প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়ার পাশে সম্ভাব্য বাউন্সি উইকেটের মুখোমুখি হবার
শংকা। তাও আবার এখানে অনুশীলন ম্যাচ না খেলেই নামতে হচ্ছে টি-২০বিশ্বকাপে। হোমে এশিয়া কাপে তাই বাউন্সি উইকেটে খেলে ধর্মশালার কন্ডিশনের প্রস্তুতিটা নিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ দল। তবে কন্ডিশন ভোগায়নি বাংলাদেশ দলকে। বরং নিজেদের পছন্দের শ্লো উইকেটই পেয়েছে বাংলাদেশ উপহার। এমন উইকেটে টসে হেরে ব্যাটিংটা এক অর্থে হয়নি মন্দ, আবার প্রত্যাশিত স্কোরও কিন্তু হয়নি। তামীম-সৌম্য’র পার্টনারশিপটা ১৮’র বেশি হয়নি, তারপরও রুম্মান-তামীমের ৪২ রানের পার্টনারশিপটা বড় পুঁজির সম্ভাবনা দেখিয়েছিল। তবে ক্রস খেলতে যেয়ে সাব্বিরের এলবিডাব্লু ( ১৫), শর্ট ফাইন লেগে সাকিবের ক্যাচ প্র্যাকটিস ( ৫), প্রয়োজনীয় সময়ে যার সাপোর্টটা জরুরী, ভ্যান দার গুটেনের এক ওভাওে সেই মাহামুদুল্লাহ’র ফিরে যাওয়ার (১০) পাশে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে মুশফিকুরের বেরিয়ে আসতে না পারা ( ০) বড় স্কোরের পথটা করেছে রুদ্ধ। এমন এক পরিস্থিতি থেকেও দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন তামীম (৮৩ নট আউট)। এবং তা সম্ভব হয়েছে শেষ ৩০ বলে ৪১ রানে।
টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির জন্য তামীমকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০তম ইনিংস পর্যন্ত। নেদারল্যান্ডসকে পেয়েই হয়েছে সে অপেক্ষার অবসান। ২০১২ সালের জুলাইয়ে ডেন হেগ এ ৫৩ বলে ৬৯ রানের ওই ইনিংস থেকেই পেয়েছেন তামীম দারুন এক টনিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গতকাল তামীমের ফিফটিটি ( ৮৩ নট আউট) আবার উপর্যুপরি তৃতীয়। তার চেয়েও বড় কথা, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ইনিংসের তিনটিকেই ফিফটিতে পরিনত করে ছেড়েছেন তামীম !! ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৬৯ নট আউট ও ৫০ নট আউট, চলমান টি-২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে করেছেন ৮৩ নট আউট। টি-২০ ক্যারিয়ারের ৪ ফিফটি তিনটিতেই প্রতিপক্ষ হিসেবে তামীম বেছে নিয়েছেন নেদার‌্যান্ডসকে। টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইতোপূর্বে নিজের সেরা ইনিংস ছিল ৩২, ২০০৭ সালেÑঅস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টি-২০র বিশ্বকাপে প্রথম ১৭টি ইনিংসের একটিতেও নেই ফিফটি, সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটিতেও তামীমের প্রতিপক্ষের নাম নেদারল্যান্ডস।
পার্টনার কেউ দায়িত¦ নিয়ে ব্যাট করেনি বল প্রথম বল থেকেই দলের দায়িত্বটা নিয়েছিলেন তামীম। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটিতে লেগেছে তার ৩৬টি বল। সেখানে অবশিস্ট ৩৩ রানের জন্য খেলতে হয়েছে তাকে ২২টি বল। ভ্যান মারউইককে স্কোয়ার লেগ দিয়ে ডাবলের সঙ্গে সঙ্গে টি-২০ বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি উদযাপনে বন্য উৎসব করেননি তামীম। ৪৬ রানের মাথায় মারউইর ইয়র্কারে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হতে হতে বেঁচে যাওয়ার পর তামীমে মেতেছে ধর্মশালা। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজেন বিপক্ষে নিজের সেরা নট আউট ৮৮ রানের ইনিংসটি এখনো বাংলাদেশের সেরা। টি-২০ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটিতে এই আসরে বাংলাদেশ সেরা ব্যক্তিগত ইনিংসে রুপ দিতে পারতেন। কিন্তু ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে পাল্লেকেলেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের ৮৪’র ইনিংসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে থেমেছেন তামীম। এতো কিছু’র পরও টি-২০বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দারুন সূচনার কৃতিত্ব দিতে হচ্ছে পেস ত্রয়ীকেও। মাশরাফির দারুন বোলিং (৪-০-১৪-১), ১৪টি ডট, তাসকিনের (২/২৪) এবং উইকেটহীন তাসকিনের ১১টি ডটকেও যে জয়ের কৃতিত্ব দিতে হচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৫৩/৭ (২০.০ ওভারে)
নেদারল্যান্ডস : ১৪৫/৭ ( ২০.০ ওভারে)
ফল : বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জামশেদ ১০ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৮ এএম says : 0
সাকিব ও মুশফিকের ফর্মে ফেরা দরকার।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন