বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিএনপিতে পোলিং এজেন্ট সংকটের আশঙ্কা

খুলনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বেপরোয়া

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাচনী প্রচারণাকালে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রকিব মল্লিক ও তার ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিদিন-ই খুলনার কোনো না কোনো ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বা তার কর্মী-সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দল-মতের প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীরা। দু-একটি ঘটনায় মামলা হলেও হামলাকারীদের গ্রেফতার হয়নি আসামীরা। ফলে বিরোধী দল-মতের নেতাকর্মীদের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই ভোট কেন্দ্র পাহারা, ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করা ও কেন্দ্রের মধ্যে থেকে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালনে নেতাকর্মীরা অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রকিব মলিক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকালে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা স্থানীয় স্টার জুট মিলের ১নং গেটে পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আব্দুর রকিব মলিক, তার কর্মী সেলিম মলিক, মুরাদ মলিক, বাদশা মলিক ও সিদ্দিক হাওলাদার আহত হন। সেলিম মলিক ও সিদ্দিক হাওলাদারকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি জানতে সেনহাটি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বধন চন্দ্র বিশ্বাসকে দুপুরে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, আমি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখবো।
আবার, গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি খান আলী মুনসুর দলীয় মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে গেলে চুকনগর বাজারে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাঁকে নির্বাচনী প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়। একই দিন বেলা ১১টার দিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন পরিষদের রিয়া বাজারে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। মুন্সী ওয়াহিদুজ্জামান লিঙ্কন নামের এক আওয়ামী লীগ সমর্থকের সঙ্গে কথাকাটাকাটির জেরধরে এ ঘটনার শুরু। এতে জলমা ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অনুপ কুমার ম-লের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আহত হয় মিরাজ নামের এক কর্মী। লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সোহরাব হোসেন বলেছেন, এটা ‘মামুলি’ ঘটনা। এরআগের দিন সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোস্তও মোড়ে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা সরওয়ারের সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গাজী আবুল হাসান ও তাঁর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।
কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কয়রা সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাহারুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকরা গত রবিবার কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি মতিউর রহমানকে পিটিয়ে আহত করে। এঘটনায় বাহারুল ইসলামসহ ৮জনকে আসামি করে কয়রা থানায় মামলা হলেও কেউই গ্রেফতার হয়নি।
গত ৪ মার্চ রাতে দিকে বটিয়াঘাটার আমীরপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খায়রুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা কুপিয়ে জখম করে। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমীর এজাজ খান। এরআগের দিন রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে জেলা শ্রমিক দল নেতা উজ্জ্বল কুমার সাহার বাড়িতে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শ্রমিক নেতা উজ্জ্বলের অভিযোগ, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় জন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান বাবুলের লোকেরা এই হামলা চালিয়েছে। রূপসার শ্রীফলতলা ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পীর কর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া নৈহাটি ইউনিয়নে ও টিএস বাহিরদিয়া ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান বাপ্পীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি না সে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের অপতৎপরতা আর পুলিশের নির্লিপ্তততায় ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে প্রচারনা বন্ধ রয়েছে। ধানের শীষের প্রচারে গেলে কর্মীরা ব্যাপক মারপিটের শিকার হচ্ছে। এখানের তিনটি কেন্দ্রে তো পোলিংএজেন্টও দিতে দেবে না।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের আশ্রয়ে ক্ষমতাসীনদের এমন মারমুখী আচরণ চলতে থাকলে ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দল-মতের প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যাবে না। তেরখাদা সদর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এফএম অহিদুজ্জামান বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি, তাঁর ভাই ও সহযোগীরা তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসক শেখ আব্দুলাহ আল মামুনকে বেধড়ক মারপিট করেন। ডাক্তার দু’টি দাঁতও ভেঙে যায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতের এ ঘটনায় খুলনা জেলা জুড়ে চিকিৎসকরা ধর্মঘট পালিত হয়।
ইসি ও পুলিশের সূত্রমতে, খুলনার নয় উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে আগামী ২২ মার্চ ভোট গ্রহণ হবে। এতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন ৪৫জন। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান রয়েছেন ১৩জন। বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ৫৭টি ইউনিয়নে। খুলনায় নয়টি উপজেলায় ৫৯৫ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪২৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ প্রায় ৭২ শতাংশ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
খুলনা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘সরকারি দল আমাদের দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। হামলা, হুমকি-ধমকি সব কিছু আছে। খুলনার শতভাগ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ সেটা আমরা ৬ মার্চ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি। এ অবস্থায় প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট সংকট হবে কিনা সেটা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন