বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কিশোরীর বিশ্বকাপ স্বপ্নপূরণ

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : আনিয়া শ্রাবসোলের বয়স তখন দশ। বাবা ইয়ান একটি ক্লাবের হয়ে ফাইনাল ম্যাচ খেলেছিলেন লর্ডসে। সেই দিনই সে তার বাবাকে বলেছিল, একদিন আমিও এই মাঠে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলব। শ্রাবসোল শুধু ফাইনালই খেললেন না, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে রীতিমত দলকে বিশ্বকাপের শিরোপাও এনে দিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এই নারী ক্রিকেটার।
ভারতের বিপক্ষে আসরের শীর্ষ দশ রান সংগ্রহকারীর মধ্যে চারজনকে হারিয়ে ইংল্যান্ড যে মুষড়ে পড়েছিল তার প্রমাণ মেলে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে মাত্র ২২৮ রানের পুঁজি দাঁড় করাতে পরায়। আসরে এর চেয়ে কম রানের পুজিতে মাত্র তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে কোন দল। পাকিস্তানকে হারাতে ১৬৯ রানের পুজিই যথেষ্ঠ ছিল ভারতের জন্যে, একই প্রতিপক্ষকে ২২১ রানের পুঁজি নিয়ে হারায় শ্রীলঙ্কা। এছাড়া ২২০ রানের পুুঁজি নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু এবারের প্রতিপক্ষ যে ভারত। যে ভারত ফাইনালে ওঠে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে গুড়িয়ে। যে দলের অধিনায়ক মিতালি রাজের সংগ্রহ আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীনী ট্যামি বিউমন্টের চেয়ে মাত্র ৫ রান কম। যে দলে রয়েছে হার্মানপ্রিত করের মত বিধ্বংসী ব্যাটার, যিনি তিন দিন আগেই গড়েন ওয়ানডে নারী বিশ্বকাপের নতুন ইতিহাস।
ম্যাচর ৪৩ ওভার পর্যন্ত গল্পটাও ছিল ভারতকে ঘিরেই। ইংলিশ শিবির তখন কতগুলো ভুলের অন্তর্দহনে দিশেহারা। অধিনায়ক হার্তার নাইটের হাত ফসকে ক্যাচ পড়ে যাওয়া, সারাহ টেইলরের স্টাম্পিং মিস, ওদিকে ক্যাথরিন ব্রান্টের যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং। ঘরের দর্শকদের সামনে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এহেন ফিল্ডিং আশা করেননি তাদের কেউই। কিন্তু এর পরের চিত্রনাট্যে যা হলো তা সম্ভবত শুধুমাত্র ক্রিকেটই সম্ভব।
৪৩তম ওভারে শ্রাবসোলকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক নাইট। টানা দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান ভিদা কৃষ্ণমূর্তি (৩৪ বলে ৩৫)। ভারতের স্কোর বোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ১৯১। প্রথমবারের মত নারী বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে ভারতের প্রয়োজন আর মাত্র ৪৪ বলে ৩৮ রান। ওপাশে ১১৫ বলে ৮৬ রানে ব্যাট করছেন পুনম রাউত। শেষ বলে ওপেনার রাউতকে এলবিডবিøউয়ের ফাঁদে ফেলে আবেদন করেন শ্রাবসোল। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। রাউত রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লাইন মিস করছিল!
ভারতের কপাল পোড়ে তখনই, আর ভাগ্যকে পাশে পায় ইংল্যান্ড। এরপর আর দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারী দলটি। শেষ ৩০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ৮ বল বাকি থাকতে তারা গুটিয়ে যায় ২১৯ রানে। আর এই কাজে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন শ্রাবসোল। ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার একাই তুলে নেন ৫ উইকেট। এর আগে আরেক ওপেনার স্মৃতি মন্দনাকেও তিনি ফিরিয়েছিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারে। সব মিলে ৪৬ রানে ৬ উইকেটের বোলিং ফিগারটি হয়ে রইল তার ক্যারিয়ার সেরা। যেটাকে ‘ক্যারিয়ার সেরা পারফর্ম্যান্স’ বলেছেন শ্রাবসোলও।
৯ রানের জয়ে চতুর্থবারের মত নারী বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। এর আগে ১৯৭৩, ১৯৯৩ ও ২০০৯ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ইংলিশরা। আর ২০০৫ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠেও শিরোপা জয় করতে ব্যর্থ হলো ভারত।
ম্যাচ শেষে শ্রাবসোল টুইটারে একটা পোস্ট দেন। সেখানে দেখা যায় লর্ডস গ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে দশ বছর বয়সী এক বালিকা। সময়টাও লেখা আছে, ২০০১ সাল। ক্যাপশনে লেখাÑ ‘জায়গাটা কি দারুণ... ইংল্যান্ডের হয়ে এখানে আমি একদিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে চাই।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড : ৫০ ওভারে ২২৮/৭ (শিভার ৫১, টেইলর ৪৫, গোস্বামী ৩/২৩)।
ভারত : ৪৮.৪ ওভারে ২১৯/১০ (রাউত ৮৬, কাউর ৫১, শ্রাবসোল ৬/৪৬)।
ফল : ইংল্যান্ড ৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আনিয়া শ্রাবসোল (ইংল্যান্ড)।
টুর্নামেন্ট সেরা : ট্যামি বিউমন্ট (ইংল্যান্ড)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন