শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সঙ্কট সমাধানের পথ কী?

সীমান্তে টান টান উত্তেজনা : মুখোমুখি চীন ও ভারতের সেনাবাহিনী

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : চীন ও ভারত সীমান্তে টান টান উত্তেজনা চলছে। হিমালয়ের দুর্গম দোকলাম উপত্যকায় উভয়দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এদিকে পরমাণু শক্তিধর দেশদু’টির এ টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে ছোট দেশ ভুটান। এক মাসের বেশি সময় ধরেই চীন ও ভারতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে। উভয় দেশই সৈন্য প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটির উপর দু’পক্ষই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। স্থানটিকে কেন্দ্র করে দেশদু’টির মধ্যে অতীতেও আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা জানান, যে এলাকাটিকে নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেটা চীন ও ভুটানের মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু সম্প্রতি চীন সেখানে তাদের সৈন্যদের উপস্থিতি বাড়ানোয় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিকে নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ভারতে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ দেশটিও অঞ্চলটিতে তাদের সামরিক সক্ষমতা জানান দিচ্ছে।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমান্তে গোলযোগ দেখা দেয়। চীন সৈন্যরা দোকলাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দেশটির একটি রাস্তা বাড়ানো শুরু করলে এই উত্তেজনা শুরু হয়। অঞ্চলটি চীনের কাছে ‘ডংলাং’ নামে পরিচিত। ভুটানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত চীনের ওই নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করে। ভারতের এমন পদক্ষেপে চীন দেশটির ভূখÐে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে।
চীন চলতি মাসে অঞ্চলটিতে তাদের তাদের সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে। তারা জানায়, কোন ধরনের সমঝোতায় বসার আগে ভারতকে অবশ্যই শর্তহীনভাবে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশকেই তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
উল্লেখ্য, উভয়দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরেই অবিশ্বাস চলছে। এমনকি ১৯৬২ সালে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তে দু’দেশ স্বল্প মেয়াদী যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।
সঙ্কট সমাধানের পথ কী?
সিকিম সীমান্তে চীনের রাস্তা তৈরি নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বেইজিং গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সফরের মূল উদ্দেশ্য ব্রিকস জোটের বৈঠক। তবে, বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সফরের সুযোগে দিল্লি ও বেইজিং সীমান্তে বিপজ্জনক অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা করবে। কিন্তু মি. দোভালের বেইজিং সফরে কি সেই অচলাবস্থা দূর হবে?
সিকিম থেকে বিবিসির এক সাংবাদিক বলছেন, অজিত দোভালের সফরে এই সঙ্কটের এখনি কোন সুরাহা হবে বলে তিনি মনে করেন না। ভারত-চীন সীমান্ত বিষয়ক কমিটিতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন অজিত দোভাল আর চীনের তরফ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন স্টেট কাউন্সিলর ইয়েঙ জিয়েচি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল, আলাদা করে ইয়াঙ জিয়েচির সঙ্গে একটি আলোচনার আয়োজন করার জন্য। কিন্তু চীনের তরফ থেকে উৎসাহ দেখানো না হলে, ভারতের তরফ থেকেও খুব একটা উৎসাহ দেখাতে বলা হয়নি।
কিন্তু চীনের পত্রপত্রিকায় যেরকম খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে পরিষ্কার যে, চীন এক্ষেত্রে খুব একটা নমনীয় না হওয়ার নীতি নিয়েছে। শর্তহীনভাবে সীমান্ত থেকে ভারতকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। ভারতও এক্ষেত্রে খুব একটা উদ্যোগী হবে না বলেই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। তাহলে সমাধানের পথ কী?
বিবিসির ওই সাংবাদিক বলছেন, ভারতের অবস্থান হচ্ছে, যৌথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরে আসা। ভারত একতরফা কোন সমাধানে আগ্রহী নয়। অজিত দোভালের সঙ্গে ইয়াঙ জিয়েচির বৈঠক হলে সেখানেও এই প্রস্তাবটি করা হবে।
তিনি বলছেন, যদি ভুটান দোকলাম চীনকে ছেড়ে দেয়, সেটা পৃথক ব্যাপার। কিন্তু যতক্ষণ সেটি না হচ্ছে, ততক্ষণ ভারত-চীন-ভুটানকে তাদের সীমান্তের স্ব স্ব অবস্থানেই থাকতে হবে। যেহেতু চীন ভুটানের জায়গায় রাস্তা করছে আর ভারত ভুটানের স্বাধীনতা রক্ষায় চুক্তিবদ্ধ, তাই তারা সেখানে ঢুকে চীনকে বাধা দিয়েছে।
এখন অজিত দোভাল চীনকে প্রস্তাব দেবেন, তোমরা এখানে রাস্তা বানানো বন্ধ করো এবং পিছিয়ে চলে যাও। দোকলাম থেকে তোমরা চলে যাও, তাহলে ভারতের সৈন্যরা চলে আসবে। বলছেন বিবিসির সাংবাদিক। কিন্তু চীন যদি ভারতকে আগে সৈন্য সরাতে বলে, তাহলে কোন সমাধানের আশা ক্ষীণ, বলছেন সুবির ভৌমিক নামের ওই সাংবাদিক। ভুটানের সঙ্গে ১৯৪৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যেটি ২০০৭ সালে নবায়ন করা হয়েছে। সেখানে ভুটানকে নিরাপত্তা দেয়া ও বিদেশীদের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়ার মতো বিষয় রয়েছে।
সুবীর ভৌমিক বলছেন, এখন যদি ভারত এখান থেকে সরে আসে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কোন গুরুত্বই থাকবে না। আর তাই ভারত এখান থেকে পেছবে না। আবার চীন কোন শর্ত দিয়ে আলোচনায় বসলেও তাতে রাজি হবে না ভারত। উভয় দেশের মাঝে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
সীমান্ত বিরোধী নিয়ে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধও হয়েছিল, যে যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। চীন, ভুটান আর ভারতের সিকিম প্রদেশের সংযোগস্থলে একটি উপত্যকার ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে নতুন বিরোধের সূচনা। এ রাস্তাটির মাধ্যমে চীন এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যাবে যেটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। চীন এমন জায়গায় সড়ক নির্মাণ করতে চাইছে যার পাশেই ভারতের ২০ কিলোমিটার চওড়া একটি করিডোর আছে। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো মূল ভারতের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং একটি মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। সূত্র : এএফপি ও বিবিসি।
আমেরিকা চুপ করে বসে থাকবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভারত চীনের মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে আমেরিকা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। চীনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মার্কিন বিদেশনীতি সংক্রান্ত একাধিক বিশেষজ্ঞ এ কথা জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ফেলো জ্যাক কুপার বলেছেন, ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষে আমেরিকা যুক্ত হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু ভারত-চীন বাড়তে থাকা প্রতিদ্ব›িদ্বতার জেরে ভারত-আমেরিকার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় হবে। তার মতে, যদি চীন এভাবে বারবার ভারতকে খোঁচা দিতে থাকে, তবে তাদের কারণেই তৈরি হবে চীন বিরোধী জোট। তাই বেইজিংয়ের পক্ষে বুদ্ধির কাজ হল, সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা, দেখা, তা যেন রক্তপাত পর্যন্ত না গড়ায়।
হনলুলুর এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার পর সিকিউরিটির অধ্যাপক মোহন মালিকও মন্তব্য করেছেন, যদি ডোকলাম নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ বেধেই যায়, তবে ভারতীয় সেনাকে সবরকমভাবে সাহায্য করতে পারে আমেরিকা। এমনকী চীনা নৌবহরের দিকে নজর রাখতে, দরকারে আটকাতে ভারত মহাসাগরে তারা এয়ারক্র্যাফ্ট কেরিয়ার ও সাবমেরিন পাঠাতে পারে। তার মতে, জনাকয়েক চীনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞর ইচ্ছে, স্বল্পসময়ের যুদ্ধে ভারতকে হারিয়ে দিক চীন, যাতে গোটা এশিয়াকে চীন কেন্দ্রিক তৈরি করতে বেইজিংয়ের সুবিধে হয়। তবে চীনেরও আশঙ্কা, ভারত-চীন যুদ্ধ বাধলে আমেরিকা ভারতের পক্ষ নেবে। সরকার পরিচালিত সে দেশের সংবাদপত্র গেøাবাল টাইমস বলেছে, পশ্চিমে কিছু শক্তি আছে, যারা চায়, ভারত-চীনের মধ্যে যুদ্ধ হোক। এর ফলে তারা মুফতে কৌশলগত সুবিধে ঘরে তুলবে। এভাবেই দক্ষিণ চীন সমুদ্র সংক্রান্ত বিতর্কে ওয়াশিংটন নাক গলাতে চাইছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন