শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুয়েত গমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মী জিম্মি

কথিত নতুন গামকা ’উইনস্টোনের’যাত্রা শুরু কাল

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এটা একটা প্রকাশ্য ডাকাতি-প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়
শামসুল ইসলাম : কুয়েত গমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মী ভিসা পেতে ঢাকাস্থ দূতাবাসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যারাই কথিত চ্যানেলের মাধ্যমে ১শ’ মার্কিন ডলার থেকে ২শ’ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পাসপোর্ট জমা দিচ্ছে শুধু তাদের ভিসাই দ্রæত ইস্যু হচ্ছে বলে ভুক্তভোগি এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠছে। তবে কুয়েত দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন।
এসব অনিয়মের ব্যাপারে গতকাল রোববার কুয়েত দূতাবাসের কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে আজ যোগাযোগ করতে বলেন। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কুয়েত গমনেচ্ছু কর্মীদের মেডিকেল চেক-আপ-করতে কথিত নতুন গামকা ’উইনস্টোনের’ মাধ্যমে মাত্র দু’টি হাসপাতালে জনপ্রতি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু হবে। উইনস্টোনের মাধ্যমে কুয়েতগামী কর্মীদের মেডিকেল চেক-আপ-এর নামে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা আদায়ের সিদ্ধান্তকে একটা প্রকাশ্য ডাকাতি বলে উল্লেখ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা। সেন্ডিং কান্ট্রিগুলোর বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের মেডিকেল চেক-আপ করাতে মাত্র ৮শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা ব্যয় হয়। কিন্ত বিধিবর্হিভূত ভাবে উল্লেখিত সর্বোচ্চ মেডিকেল চেক-আপ-এর অর্থ হাসপাতাল দু’টি কত করে পাবে আর বাকি টাকা কার কার পকেটে যাবে তা’ কেউ বলতে পারছে না। এ নিয়ে কুয়েত সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং ও ট্রাভেলস এজেন্টগুলোর মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ গতকাল রোববার তার দপ্তরে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে কুয়েত গমনেচ্ছু কর্মীদের কথিত নতুন গামকা উইনস্টোনের মাধ্যমে মেডিকেল চেক-আপ-এর জন্য সাড়ে ১৩ হাজার টাকা আদায়ের সিদ্ধান্তের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটাকে একটা বড় অপরাধ বলে উল্লেখ করেন। অতিরিক্ত সচিব বলেন, কুয়েতে কর্মী প্রেরণে জনপ্রতি অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭শ’ ৮০ টাকা। কুয়েতগামী কর্মীদের মেডিকেলের নামে উইনস্টোনের অকল্পনীয় ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেয়া হলে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মাকে বিএমইটি’র মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থার নেয়ার নিদের্শ দেন। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ভ্রাতৃ-প্রতীম কুয়েতের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পক চমৎকার। কুয়েতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কাউকে কুয়েতের শ্রমবাজার নস্যাত করতে দেয়া হবে না। সর্বোচ্চ মেডিকেল ফি নেয়ার ব্যাপারে উইনস্টোনের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়া হবে বলেও অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ উল্লেখ করেন।
বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউস্থ আউয়াল সেন্টারের উইনস্টোনের মালিক একজন কুয়েতী নাগরিক বলে জানা গেছে। গতকাল উইনস্টোনের কর্মচারী রাফি টেলিফোনে ইনকিলাবকে জানান, উইনস্টোনের মালিক একজন কুয়েতী নাগরিক এবং শাহেদ নামের এক ব্যক্তিও এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সর্ম্পৃক্ত। তাদের কাউকে অফিসে পাওয়া যায়নি। উইনস্টোনের বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এবং কর্মীদের নিবন্ধন ও সর্বোচ্চ ব্যয়ে মেডিকেল চেক-আপ করানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমতি রয়েছে কিনা তা’ খতিয়ে দেখা উচিত। ভুক্তভোগি একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কুয়েতগামী কর্মীদের ভিসা পেতে এজেন্সিগুলোর নাভিশ্বাস উঠেছে। যে সব রিক্রুটিং এজেন্সি ও ভিসা প্রসেসিং ট্রাভেলস এজেন্সি কথিত চ্যানেলের মাধ্যমে কুয়েত দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিচ্ছে কেবল তাদের পাসপোর্টই দ্রæত ইস্যু হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনশক্তি রফতানিকারক বলেন, দূতাবাসের এক অসাধু প্রটোকল অফিসার পরিচায়দানকারী জাহাঙ্গীর আলম তার মটর সাইকেলের ব্যাগে করে শত শত পাসপোর্ট গুলশান পার্ক ও স্থানীয় একটি নামি-দামি হাসপাতালের সামনে ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট সরবরাহ করছে এজেন্সিগুলোর লোকের কাছে। বিনিময়ে ভিসা প্রতি ১শ’ মার্কিন ডলার থেকে ২’শ’ মার্কিন ডলার করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কুয়েতগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। গরীব কর্মীরা চড়া সুদে ঋণ এবং ভিটেমাটি বিক্রি করে একটি ভিসা যোগাড় করছে। কুয়েত গমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসা পেতে গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘ দিন থেকে এজেন্সিগুলোকে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে দূতাবাসের এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখার কেউ নেই। গতকাল কুয়েত দূতাবাসের টেলিফোনে এ সব অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভিসা সেকশনের প্রটোকল কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেরন এ সব অভিযোগ ঠিক না। অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে জমাকৃত পাসপোর্ট ভিসা লাগার পরে তার মটর সাইকেল যোগের্ গুলশান পার্কসহ একটি হাসপাতালের কাছে সরবরাহের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন। অসৎ উদ্দেশ্যে কুয়েত দূতাবাসের পাসপোর্ট নিয়মিত জমা নেয়া হচ্ছে না। গত ১৯ জুল্ইা ও ২৫ জুলাই দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা নেয়া হয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক না গতকালও পাসপোর্ট জমা নেয়া হয়েছে। গতকাল এ সব বিষয়ে কুয়েত দূতাবাসের ভিসা সেকশনের আলোচিত কর্মচারী ফারদিনের সাথে যোগোযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, কুয়েতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। গত ২ জুল্ইা থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ৫ হাজার ৫শ’ ৫৮জন কর্মী বর্হিগমন ছাড়পত্র নিয়ে কুয়েতে চাকুরি লাভ করেছে। উল্লেখ্য, ঢাকাস্থ কুয়েত দূতাবাস থেকে কুয়েতগামী কর্মীদের মেডিকেল চেক-আপ সার্ভিসেস-এর অনুমতি পেয়ে উইনস্টোন কেডবিøউ লিমিটেড মেডিকেল চেক-আপ ও নিবন্ধনের ফি’ বাবদ ১৩ হাজার ৫শ’ টাকা আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট নম্বর (০২০১০২০০১৫২১৪) -য়ে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে। বায়রার একজন সদস্য বলেন, এতো দিন কুয়েতগামী কর্মীরা গামকার মেডিকেল সেন্টারগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে জনপ্রতি ৫ হাজার ৮শ’ টাকা ব্যয় করেছে। কি কারণে কার স্বার্থে উইনস্টোনের কাঁধে ভর করে কুয়েতগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে ধানমন্ডি’র পপুলার হাসপাতাল ও উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় করতে যাবে তা’ বোধগম্য নয়। তিনি অনতিবিলম্ব কুয়েতগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে আকাশচুম্বি মেডিকেল ফি নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পূর্বের ন্যায় সহনীয় পর্যায়ে ফি ধার্য্য করণ এবং কুয়েত দূতাবাসে ভিসা ইস্যুতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার জন্য কুয়েত সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন