বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হঠাৎ বাড়ছে পিঁয়াজের দাম

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : হঠাৎ করে বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রামের বাজারে দাম বাড়ছে ঘন্টায় ঘন্টায়। গতকাল (বুধবার) খুচরা বাজারে দেশি পিঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর আমদানিকরা ভারতীয় পিঁয়াজের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা।
নিত্য প্রয়োজনীয় এ ভোগ্যপণ্যের দরের ঊর্ধ্বগতিতে চিন্তিত ভোক্তারা। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের আগে আকস্মিক পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াকে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে মনে করছেন অনেকে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রবল জোয়ার ও ভারী বর্ষণে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ প্লাবিত হওয়ায় অনেক পিঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। বন্যা এবং ফেরিচলাচল বিঘিœত হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিও কিছুটা কমে গেছে, একারণে দাম বাড়ছে।
মহানগরীর বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ৫ দিনে চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারী বাজারে পিঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা খাতুনগঞ্জে গতকাল আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজের দাম ছিল প্রতিকেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা। খুচরা বাজারে এই পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। শুক্রবারেও খুচরা বাজারে এ পিঁয়াজের দাম ছিল প্রতিকেজি ২৪ থেকে ২৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির গতকালের যে বাজার দর তাতেও পিঁয়াজের দাম ছিল উর্ধমুখি। টিসিবির বাজার দরে গতকাল পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪৫ টাকা। আমদানিকরা ভারতীয় পিঁয়াজের দর ছিল প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আর দেশি পিঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহ আগে পিঁয়াজের দর ছিল ২২ থেকে ৩৫ টাকা। তখন আমদানিকরা পিঁয়াজের দর ছিল কেজিপ্রতি ২২ থেকে ২৫টাকা আর দেশি পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অর্থাৎ সরকারি হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। বাস্তবে অনেক এলাকায় এর চেয়ে বেশি দামেও পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর ইপিজেড এলাকার মুদি দোকানি ফারুক আহমেদ বলেন, সোমবার রেয়াজুদ্দিন বাজারের পাইকারি দোকান থেকে তিনি প্রতিকেজি পিঁয়াজ ২৭ টাকা দরে কিনেছেন। আর তার মাত্র তিনদিন আগে ওই একই পিঁয়াজ একই আড়ত থেকে কিনেন প্রতিকেজি ১৭ টাকা দরে। তিনদিনে প্রতিকেজি পিঁয়াজের দাম বাড়ে ১০ টাকা। রেয়াজুদ্দিন বাজারের নিকটবর্তি চৈতন্যগলির একটি মুদি দোকানে গতকাল আমদানিকরা পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৩৬ টাকা। নগরীর বাজারগুলোতে দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। ইপিজেড ও স্টিলমিল বাজারেও ভারতীয় পিঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতিকেজি ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ পিঁয়াজের দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা।
আমদানিকারকদের হিসেবে দেশে বর্তমানে বছরে পিঁয়াজের চাহিদা সর্বোচ্চ ২৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদিত হয় প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজ। বাকি ৬ থেকে ৭ লাখ টন পিঁয়াজ প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। চলতি বছর দেশে পিঁয়াজের ব্যাপক ফলনের পাশাপাশি ভারত থেকেও প্রচুর পিঁয়াজ আমদানি করা হয়। আর এ কারণে বছরের শুরু থেকে পিঁয়াজের ব্যাপক ধরপতন হয়। তখন বাজারে ভারতীয় পিঁয়াজ ১০ থেকে ১২ টাকা এবং দেশী পিঁয়াজ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে। কয়েকদিন আগেও বাজারে পিঁয়াজের কেজি ছিল সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ টাকা। হঠাৎ করে পিঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বমুখী হওয়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ভোক্তারা।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাজের হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, জোয়ারের অজুহাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে পিঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে মূল্যকারসাজি করছেন। তিনি বলেন চলতি বর্ষা মওসুমে চট্টগ্রাম বেশ কয়েক দফা ভারী বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে তলিয়ে গেছে। তখনও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানি উঠেছে। কিন্তু পিঁয়াজের দাম বাড়েনি। এবার কেন দাম বাড়ানো হচ্ছে। কয়েকটি আড়ত আর গুদামে পিঁয়াজ নষ্ট হওয়া অজুহাতে এভাবে দাম বাড়তে পারে না।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ মূল্যকারসাজি বা সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে ইনকিলাবকে বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত আর প্রবল জোয়ারে বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ প্লাবিত হওয়ায় গুদাম আড়তে থাকা পিঁয়াজ বিনষ্ট হয়েছে, এ কারণে দাম বাড়ছে। ভারতের কয়েকটি এলাকায় বন্যা এবং দেশের ফেরি চলাচল বিঘিœত হওয়ায় স্থলবন্দর হয়ে পিঁয়াজের চালান আসতে বিলম্ব হওয়ায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও জানান তিনি। এই মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক দাবি করে তিনি বলেন, ঈদের আগে বাজারে দাম পড়ে যাবে।
গেল রমজান মাসে রসূনসহ বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়লেও পিঁয়াজের দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। হঠাৎ করে পিঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করার পেছনে কোন কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে নামবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রফিক ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১:৫৭ এএম says : 0
বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।
Total Reply(0)
Rahman Sadman ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০৫ পিএম says : 0
কোন ঘারতি নাই বস্তা পর বস্তা মজুত আছে তারপরও এটা হচ্ছে--- দেখার কেউ নেই।তবে লুটে পুটে খাওয়ার অভাব নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন