ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধান বিচরপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনকালে স্বীকার করেছেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো।
সংবিধানের মৌলিক কাঠামোটা কী সে প্রশ্নটি একাডেমিক, শেষ নিষ্পত্তির পরশ দিয়ে দৃঢ়তার সাথে সুষ্পষ্টভাবে যার জবাব দেয়া যায় না। তবে বলা যেতে পারে যে, এ লক্ষ্যে সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়। আর সেগুলো সংবিধানের অস্থিত্বব্যাঞ্জক অংশ।
আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য তৈরি সাধারণ আইন এবং সাংবিধানিক আইন প্রয়োগের জন্য তৈরি সাংবিধানিক আইনের মধ্যে একটা সীমা রেখা রয়েছে। সাধারণ আইন সংশোধনের ক্ষমতা থেকে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা ভিন্নতর। লেজি¯েøটিভ ক্ষমতা এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যকার পার্থক্যে বিষয়টি অনমনীয় সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংশোধন প্রক্রিয়ায় সংসদ নিয়োজিত হলেই সেটা লেজি¯েøটিভ হয় না, বরং সংসদ এমন একটি ক্ষমতা প্রয়োগ করছে যা সংবিধান সংশোধনীর ধারা কর্তৃক তার ওপর অর্পিত বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োগ। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রমানিত অসদাচরণ কিংবা অসামর্থ্যরে ভিত্তিতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া হয়েছে। তবে ‘অসদাচরণ’ কিংবা ‘অসামর্থ্য’-এর সংজ্ঞা দেয়া হয় নি। ৯৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ
[ ৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।
(২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।
(৪) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।]
উপ-অনুচ্ছেদ (৩)-এ বলা হয়েছেঃ দফা (২)-এর অধীন তদন্ত ও প্রমানের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী প্রথম বা শুর থেকে ঘোষনার পর পঞ্চদশ জাতীয় সংসদ একটি সাংবিধানিক ধারা জুড়ে দেয়। আর তা হচ্ছেঃ প্রধান বিচারপতি এবং পরবর্তী দুইজন সিনিয়র বিচারপতি কিংবা কোন সদস্যের অনুপস্থিতিতে অথবা তিনি অসুস্থ হলে বা অন্য কোন কারণে কার্যসম্পাদনে অযোগ্য বিবেচিত হলে জেষ্ঠতার ভিত্তিতে কাউন্সিল সদস্যদের পরবর্তী ব্যক্তি সদস্য হবেন।
উপধারা (৩) বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংসদ মামলা নিষ্পত্তি, তদন্ত এবং অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে অভিযোগের প্রমান সংগ্রহের পদ্ধতি নিরূপণের জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারবে। কথিত এই আইন তৈরি করা হলে তা আইন প্রয়োগের পদ্ধতি ও কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করবে। অর্থাৎ তা হবে একটি পদ্ধতিগত আইন।......
পদ্ধতিগত আইন যে কোন সময়, এমনকি সাধারণ অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধন করা যাবে। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ে নতুন প্রবর্বতিত বিধান কার্যকর থাকলেও এমন কোন আইন প্রণীত হয় নি। দেখা গেছে যে, রীটের ১ নং বাদী সম্পূরক এফিডেভিটের মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬(৩) ধারা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণের অসদাচারণ বা অসামর্থ (তদন্ত ও প্রমাণ) আইন, ২০১৬’ নামে একটি বিল তৈরি করেন। এই বিলে প্রস্তাব করা হয়, কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পিকার বরাবরে দায়ের করতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, ‘¯পীকার, কোন ব্যক্তির নিকট হইতে কোন বিচারকের অসদাচারণ বা অসামর্থ সম্পর্কিত কোন অভিযোগ প্রাপ্তির পর উহার প্রাথমিক সত্যতা নিরূপনের জন্য জাতীয় সংসদের সদস্যগণের মধ্য হইতে অনধিক ১০(দশ) সদস্য বিশিষ্ট ১টি কমিটি গঠন করতঃ উক্ত কমিটির নিকট অভিযোগটি প্রেরণ করিবেন। খসড়া বিলে বলা হয়, ‘(৫) উপধারা ৪ এর অধীন গঠিত কমিটি, বিচারকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে ৭(সাত) দিনের মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষা করতঃ উহার প্রাথমিক সত্যতা নিরূপন করিবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন