বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আল-কুরআনে নৃবিজ্ঞানের তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ

| প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আল-কুরআন মানবদেহের গঠন সম্পর্কিত আলোচনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর আলোচনা ও বিধৃত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আল্লাহ সমস্ত জীবন সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, যাদের কিছু পেটে ভর দিয়ে চলে, কিছু দুই পায়ে চলে এবং কিছু চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। বিশেষ ধরণের স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীকে প্রাইমেট বলা হয়। যাদের হাত পায়ের আঙ্গুলে নখ আছে এবং তা দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। তবে প্রাইমেটদের সংজ্ঞা দেয়া ও সুচিহ্নিত করা যে কষ্টসাধ্য; তা গ্রস ক্লার্ক তার History of the primates গ্রন্থে লিখেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখত: It is peculiarly difficult to give satisfying definition of the primate since there is on single distinguishing feature which distinguishes all the members of the group. প্রাইমেটের খুব ভালো সংজ্ঞা প্রদান কঠিন; কারণ, মানবদলের সদস্যকে সুনির্দিষ্ট করা সহজ নয়।
মৃত্তিকার গভীরস্তর অনুসন্ধান করে গাছপালা ও প্রানীদের নিদর্শনের যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, তাকেই বলে জীবাশ্মু (ঋড়ংংরষ) । পবিত্র কুরআন এ জীবাশ্মু সস্পর্কে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছে এবং একে আল্লাহর অস্তিত্বের নির্দশন গণ্য করেছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: তোমার (মৃত গাধার বিচ্ছিন্ন) অস্তিগুলোর প্রতি লক্ষ্য কর, কীভাবে সেগুলোকে সংযোজিত করি এবং গোশত দ্বারা ঢেকে দেই। পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক এলাকায় এ ধরণের ফসিল পাওয়া যায়। যে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আর রুম এ বলা হয়েছে: বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। আয়তটির প্রথম অংশে মানবধ্বংসাবশেষ ও ইতিহাসের প্রতœতাত্তি¡কতার কথা এবং দ্বিতীয় অংমে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্তকারীদের সংস্কৃতিক অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।
কয়েকটি ফসিল মানবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পিকিং মানব ( বৈজ্ঞানিক নাম: সিনানথ্রোপাস পেকিনেনসিস: ১৯০৩), জাভা এপ মানব (পিথেক্যানথ্রোপাস ইরেকটাস: ১৮৯৪), হাইডেলবার্গ মানব (হোমো হাইডেলবার্গ জেনেসিস: ১৯০৭), পিল্ট ডাউন মানব (এয়োনথ্রোপাস ডাওসনি: ১৯১১)। নিয়ানডারথাল মানব (হোমো নিয়ানডরথালেনসিস) কে আবিষ্কার করে নৃবিজ্ঞানীরা জীবের ক্রমবিকাশের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে করেন। এ ধরনের জীবাশ্মু প্যালেষ্টাইন, অস্ট্রিয়া, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি ছাড়া বিশ্বের অনেক ভূখন্ডে পাওয়া গিয়েছে। নিয়ানডারথারেরা ১০০০০০ থেকে ৪০০০০০ বছর পূর্বে পৃথিবীতে বসবাস করতো বলে নৃবিজ্ঞানীরা মতান্তর সম্পৃক্ত বিভিন্ন মত প্রদান করেছেন। ক্রো-ম্যাগননমানব (হোমোসেপিয়েনস) প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে পৃথিবীতে বসবাস করতো বলে নৃবিজ্ঞানী কোয়েনিগ মত দিয়েছেন। অনেক নৃবিজ্ঞানীর মতে, ক্রো-ম্যাগননেরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ।
মাথার পরিমাপ অনুসারে মানুষকে ডলিকো সেলালিক (লম্বা মাথা), ব্রাকি সেফালিক (গোলমাথা) এবং মেজো সেফালিক (মধ্যমাকৃতি মাথা) এই তিনভাগে ভাগ করা হয়। মানবদেহের পরিমানবিদ্যার উপর নির্ভর করে রিজলে দক্ষিণ এশিয়ার জনসমষ্টিকে তুর্কি ইরানীয়, ভারতীয় আর্য, আর্য দ্রাবিড়, শক দ্রাবিড়, দ্রাবিড়, মঙ্গোল দ্রাবিড় বা বাঙালি, মঙ্গোলয়েড এই সাতটি দৈহিক বিভাজনে বিভক্ত করেছেন। তুর্কি ইরানীয়দের মাথা গোল, নাক সরু এবং গায়ের রং ফর্সা, ভারতীয় আর্যদের মাথা লম্বা, নাক সরু ও উন্নত, আর্য দ্রাবিড়দের গায়ের রং বাদামি থেকে কালো, উচ্চতা মাঝারি থেকে কম, শক দ্রাবিড়দের মাথা গোলাকৃতি, নাক কান চিকন, উচ্চতা মধ্যমাকৃতি। দ্রাবিড়দের মাথা লম্বা, নাক চওড়া এবং চুল কোকড়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। মঙ্গোল দ্রাবিড়গণ হলেন বাঙালি জাতিসত্ত¡ার লোক। এদের মাথা সাধারণত গোল, তবে মধ্যমাকৃতি হবার দিকে প্রবণতা আছে। নাক সরু থেকে চওড়া, গায়ের রং কালো থেকে হালকা বাদামি; উচ্চতায় মাঝারি। এদের বাস বাংলায় (বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলায়) এবং উড়িষ্যার কতকাংশে।
মঙ্গোলয়েডদের মাথা গোল, মুখ সমতল বা চেপ্টা, গায়ের রং হরিদ্রাভ বাদামি। এদের দেহের উচ্চতা খর্বাকৃতি এবং মুখে দাড়ি গোফ থাকে না বললেই হয়। মানুষের শারীরিক ও চেহারার গঠন পৃথিবীর বিভিন্ন সৃষ্ট প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে শ্রেষ্ঠতম। এজন্য কুরআনের সূরা ত্বীন এ বলা হয়েছে: আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে। অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে সর্বনীচ স্তরে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে সুন্দরতম দৈহিক আকৃতিতে সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন তা দৈহিক নৃবিজ্ঞানের কথা। উপর্যুক্ত আয়াতে যে বলা হয়েছে, মানুষের খারাপ কর্মের কারণে মর্যাদার নিম্নস্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে, এটি হলো মানুষের সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মানবকর্ম ও চিন্তা বিকাশের অংশভুক্ত। তাছাড়া মানুষের দৈহিক আকৃতির পরিবর্তন পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা ও কুরআন সমর্থন করে।
(চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন