বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অস্তিত্ব সঙ্কটে একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

| প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার ব্যুরো : ভাঙনের কবলে পড়ে অস্থিত্ব সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপের চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও ভাঙনের কবলে পড়ে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। দ্বীপের ভাঙন রোধে এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবীতে দ্বীপবাসী অনেক আন্দোলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেশের মানচিত্র থেকে একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন এখন সেন্টমার্টিনবাসী। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করেন দ্বীপবাসী।
দ্বীপ রক্ষায় সরকারী কোন সহযোগিতা না পেলেও বলে বসে থাকেনি দ্বীপের মানুষ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অস্থিত্ব ও সৌন্দর্য রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে এসেছেন দ্বীপের কিছু মহৎ ব্যক্তি। ভাঙনকবলিত এলাকায় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে কেয়াগাছ রোপন করে ভাঙন রোধে এগিয়ে আসেন। গত ৭ আগস্ট সোমবার সকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এই মহতী কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি মেম্বার আলহাজ্ব মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান খান ও সাবেক মেম্বার আব্দুল আমিন। দ্বীপ রক্ষার এই মহতী কাজে স্বেচ্ছাশ্রমে আরো যোগ দিয়েছেন স্থানীয় আরো কিছু মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছেন, মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ, কটেজ ম্যানেজার মোহাম্মাদ আলম, কামাল ও আব্দুর রহিমসহ অনেকেই।
শীতের পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দেশী-বিদেশী পর্যটক, ভিআইপি, পদস্থ কর্মকর্তাসহ সকলের কাছে স্বপ্নের দ্বীপ হয়ে যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এই দ্বীপের কথা কারও মনে থাকেনা। অসহায় দ্বীপবাসীর কান্না তাঁদের কর্ণকুহরে পৌঁছেনা। এমনকি ভয়াবহ ভাঙন রোধে কার্যকরী উদ্যোগ এবং ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়া হয়না জানান দ্বীপের মানুষ। তারা জরুরী ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কবরস্থানের ভয়াবহ ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
সরে জমিনে সেন্টমার্টিন ঘুরে দেখাগেছে, বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে ভেঙে আশংকাজনকভাবে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানচিত্র। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর এবং পশ্চিম অংশে ভাঙছে বেশী। এমনিতেই স্বাভাবিক সময়েও পূর্ণিমা-অমাবশ্যার ‘জো’ চলাকালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে নিত্য নতুন ভাঙন সৃষ্টি হয়। উপরন্ত ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাত এবং অবিরাম বর্ষণে বর্তমানে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে ভাবনায় পড়েছে দ্বীপের প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দা। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। পর্যটন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধরে রাখতে মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। বর্তমানে ভাঙনের কবলে পড়ে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসায় দেশের মানচিত্র থেকে দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসী। উল্লেখ্য ঐতিহাসিকদের মতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয় প্রায় ৩ শতাধিক বছর আগে। দ্বীপে বসতি শুরুর পর এভাবে কোনোদিন এখানে পানি ওঠেনি। এ রকম ভয়াবহ ভাঙনও আগে কোনো সময় দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপে চারপাশেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ভেঙেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে। এদিকে বিস্তীর্ণ কেয়া বন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়শ’ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কোন কোন সময় কবর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কঙ্কালও।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, ১৯৯১ সালের প্রয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৪ সালের জলোচ্ছ¡াসসহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ দ্বীপে পানি ওঠেনি। ভাঙনের সমস্যাও তেমন একটা ছিলনা। কিন্তু দ্বীপে বসতি শুরুর দীর্ঘ তিন শত বছর পর বিগত বছরগুলোতে পূর্ণিমার জোয়ারে হঠাৎ সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়। দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের চারপাশে বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের আটটি বসতঘরসহ প্রায় ২১টি স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এসময় দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র কবরস্থানটির ১৫০ ফুটেরও বেশি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে দ্বীপের বাসিন্দারা। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন ‘দ্বীপের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ে বহু বসতবাড়ি ও সরকারি বেসরকারী অবকাঠামো সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্থরা ব্যক্তি উদ্যোগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে প্রশাসন বাধা প্রদান করে। সেন্টমার্টিনদ্বীপের চতুর্দিকে এ দ্বীপের পরিবেশ, পর্যটন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে। সচেতন মহলের মতে দ্বীপে ব্যাপক স্থাপনা নির্মাণের কারণে চারপাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে সরকারী বিধি-নিষেধের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন এমনকি দ্বীপ রক্ষার কাজও এখন বন্ধ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন