বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আল-কুরআনে নৃবিজ্ঞানের তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আল্লাহ বলেন: আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই তোমাদের স্থানে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করতে, যা তোমরা জান না। তোমরা তো অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন?
নৃবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কের পারস্পরিকতা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত একটি বিষয়। সমাজবিজ্ঞানের প্রধানতম বৈশিষ্ঠ্য হলো, এটি সামাজিক বিশ্বকে পর্যবেক্ষন, অনুধাবন ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও সুদূর দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এস্থনি গিডেন্স সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লিখেছেন: ঝড়পরড়ষড়মু রং ঃযব ংুংঃবসধঃরপ ড়ৎ ঢ়ষধহহবফ ধহফ ড়ৎমধহরুবফ, ংঃঁফু ড়ভ যঁসধহ মৎড়ঁঢ়ং ্ ংড়পরধষ ষরভব রহ সড়ফবৎহ ংড়পরবঃরবং. ওঃ রং পড়হপবৎহবফ রিঃয ঃযব ংঃঁফু ড়ভ ংড়পরধষ রহংঃরঃঁঃরড়হ. সমাজবিজ্ঞান হলো পদ্ধতিগত পরিকল্পিত ও সাংগঠনিকভাবে মানবদল ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে গঠন। সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পঠনের সঙ্গে তা জড়িত।
সামাজিক যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান সম্পৃক্ত সেগুলো হলো: পরিবার, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি ব্যবস্থা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। কার্যকর হবার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর পারস্পরিক সংশ্লিষ্টতার নির্ভরযোগ্য বিচার করতে হয়। সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে অর্থনীতিক, সমাজবিজ্ঞান রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান, গণমাধ্যমের সমাজবিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য ও রোগগত সমাজবিজ্ঞান ও রয়েছে। অর্থনীতিক সমাজবিজ্ঞান (ঊপড়হড়সরপ ঝড়পরড়ষড়মু) সমাজতাত্তি¡ক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে অধ্যয়ন করতে গিয়ে এখানে কর্ম, বেকারত্ব ও অবসর প্রভৃতি প্রপঞ্চ নিয়ে আলোকপাত করে। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (চড়ষরঃরপধষ ঝড়পরড়ষড়মু) মূলত ব্যাক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক, রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েই আলোচনা করে বরং রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণ ও ফলাফলসহ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে নিয়েও এটি বিশ্লেষণ করে থাকে।
মানুষের গণমাধ্যম ব্যবহারের স্বরুপ নিয়ে গণমাধ্যমের সমাজবিজ্ঞান (গবফরধ ংড়পরড়ষড়মু) আলোচনা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান আরো বিচিত্র যে শাখা প্রশাখা নিয়ে আলোচনা করে থাকে, সেগুলো হলো: ক. সাহিত্যের সমাজবিজ্ঞান, খ. ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান, গ. গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান (জঁৎধষ ঝড়পরড়ষড়মু) ঘ. আইনের সমাজবিজ্ঞান, ঙ. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান, চ. বিপর্যয়ের সমাজবিজ্ঞান (ঝড়পরড়ষড়মু ড়ভ ফরংধংঃবৎ) এবং ছ. সংগঠনের সমাজবিজ্ঞান (ঝড়পরড়ষড়মু ড়ভ ড়ৎমধহরুধঃরড়হ) । এতে স্পষ্ট হয় যে, সমাজবিজ্ঞান শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়েই আলোকপাত করে না; বরং তা নগর, স্বাস্থ্য সাহিত্য, ইতিহাস, গ্রাম, আইন, শিক্ষা, বিপর্যয় ও সংঘঠন নিয়েও আলোচনা ও বিশ্লেষন করে থাকে। সমাজবিজ্ঞানের পরিধির ব্যাপকতার রূপই এখানে স্পষ্ঠায়িত হয়।
নৃবিজ্ঞান আসল নর ও নারীর অধ্যয়নের কেন্দ্রিকতার স্থাপিত। কারণ, এ বিদ্যাটি মূলত মানুষের উদ্ভব ও আচরণ, সামাজিক কাঠামেমা এবং সামগ্রিক সংস্কৃতির অনুসন্ধানে মনোযোগী হয়। দুই শতকের অধিক সময় ধরে নৃবিজ্ঞানীরা শুধু মানুষের প্রকৃতি নিয়েই গবেষনায় নিরত থেকেছে। সা¤প্রতিক নৃবিজ্ঞানে মানুষের অবস্থান সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কৌশল অধ্যয়ন চলছে সমগ্র বিশ্বমানবপরিবার থেকে তথ্য নিয়ে এ গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে। মানবের স্বরূপ সন্ধানে নৃবিজ্ঞানীরা ভূগর্ভস্থ জীবাশ্মু (ঋড়ংংরষ) অনুসন্ধান করে পৃথিবীর আদিম মানুষ ও তাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে উদঘাটন করতে প্রয়াসী হয়েছেন। আধুনিক নৃবিজ্ঞানীরা আধুনিক মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা পরিচালনা করেন বলে বর্তমান বিশ্বের সমাজ ও রাজনীতির আন্তসম্পর্কের আন্তর্জাতিকতা ও উপনিবেশবাদের স্বরূপ ও এখানে বিশ্লেষণযোগ্য হয়ে পড়ে।
দৈহিক নৃবিজ্ঞানে মানুষের দৈহিক বৈশিষ্ঠ্য, তার উৎপত্তি ও বিবর্তন নিয়ে আলোকপাত করে। কিন্তু সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মূল বিষয় যেহেতু মানুষের সংস্কৃতি, সেজন্য সমাজ ও সংস্কৃতির আলোচনায় সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞান ঘনিষ্ঠতম সর্ম্পকিত। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বিবাহ, পরিবার, ধর্ম রাষ্ট্র, অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা করে থাকে বলে উপযুর্ক্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার জন্যে জাতিতত্ত¡ (ঊঃযহড়মৎধঢ়যু), ভাষাতত্ত¡ (খরহমঁরংঃরপং) ও প্রশ্নতত্তে¡র (অৎপযবড়ষড়মু) পারস্পরিকতার গভীরতার পাঠ এখানে জরুরি হয়ে পড়ে। তবে এটি স্মর্তব্য যে, নৃবিজ্ঞান মানুষ ও সমাজকে ক্ষুদ্র পর্যায়ে পর্যবেক্ষন করে; অন্য দিকে, সমাজবিজ্ঞান মানুষ ও সমাজকে অধ্যয়ন অনুশীলনকরে বৃহত্তর ক্ষেত্রে। সমাজবিজ্ঞানের প্রধান গবেষণাপদ্ধতি হলো, জরিপ পদ্ধতি (ঝঁৎাবু) পদ্ধতি: পক্ষান্তরে নৃবিজ্ঞানে অংশগ্রহনমূলক পর্যবেক্ষন পদ্ধতি (অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মরপধষ গবঃযড়ফ) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সমাজবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠান (ওহংঃরঃঁঃরড়হ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিচার্ড জেলিস ও এ্যান লেভিনের মতে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হরো শ্রেয়োবোধ, মূল্যবোধ, অবস্থান,ভূমিকা, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক স্থায়ীরূপ, যা সমাজজীবনের কোন বিষয়ে এলাকার আচরণের একটি কাঠামো নির্মাণ করে। রিচার্ড জেলিস ও এ্যান লেভিনকৃত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞাটি স্মর্তব্য: ঝড়পরধষ রহংঃরঃঁঃরড়হ ধৎব ৎবষধঃরাবষু ংঃধনষব ংবঃং ড়ভ হড়ৎসং ধহফ াধষঁবং, ংঃধঃঁংবং ্ ড়ৎমধহরুধঃরড়হং ঃযধঃ ঢ়ৎড়ারফব ধ ংঃৎঁপঃঁৎব ভড়ৎ নবযধারড়ৎ রহ ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ধৎবধ ড়ভ ংড়পরধষ ষরভব. অর্থ্যাৎ সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজের পদ্ধতি, সংগঠন ও সামাজিক জীবনের ব্যবহার কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করে।
(চলবে)

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন