বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাউন্সিল বিএনপির হিসাব-নিকাষ আওয়ামী লীগের

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : চলতি মাসের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে আমলে না নিলেও দলটির আসন্ন সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব আসছেন এ নিয়ে হিসাব-নিকাষ করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যেই সরকারবিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য পদে কেমন নেতৃত্ব আসে তা দেখার অপেক্ষায় আছে সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগ। ‘রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে’ আয়োজিত সম্মেলনে বিএনপি কতখানি সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারে তা নিয়ে সরকারি দলটিতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এছাড়াও ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে নানা ধরনের হিসাব-নিকাষ চলছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগের এখনো একমাত্র প্রতিপক্ষ বিএনপিই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী নেতা জানান, তারা প্রকাশ্যে বিএনপির সম্মেলন নিয়ে কথা বলতে না চাইলেও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিএনপি সত্যিই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে কি না তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি সত্যিকার অর্থে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর মতো নেতৃত্ব এলে আওয়ামী লীগের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবেÑ তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার এ বক্তব্য বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের পর্যবেক্ষণেরই অংশ। নেতারা জানান, বিএনপির সম্মেলন ও নেতৃত্ব দেখে দলটিকে মোকাবেলা করার জন্য আওয়ামী লীগও যুৎসই রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করবে। তার আগে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বিএনপি কতখানি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পেতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, বিএনপির সম্মেলনে জামায়াত প্রীতি রয়েছে এমন কতজন নেতা দলটির পদ-পদবি পেতে পাবেন সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা। কাউন্সিলের পরও যদি দলটিতে জামায়াত ঘনিষ্ঠ নেতাদের আধিক্য বা প্রাধান্য থাকে তাহলে বিএনপিকে ঘায়েল করার অন্যতম হাতিয়ার থাকবে আওয়ামী লীগের হাতে। কারণ নতুন প্রজন্ম এখন জামায়াতকে ঘৃণা করে। ইতঃপূর্বের জামায়াত প্রীতিই বিএনপিকে রাজনীতিতে দুর্বল করেছে। কারণ, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধীরে ধীরে সমুন্নত ও শক্তিশালী হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বিশেষ করে জামায়াত প্রীতি রয়েছে এমন নেতা বিএনপিতে দায়িত্ব পেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ প্রসারিত হবে। আর জামায়াত প্রীতির বাইরে কোনো নেতাকে বিএনপিতে রাখবে এমনটি মনে করে না আওয়ামী লীগ। তাছাড়া তারেক রহমানের প্রভাব কতখানি থাকে, আন্তর্জাতিক ‘লবি’ রক্ষা করে এমন নেতা কারা আসতে পারেন, পাকিস্তানী ‘প্রেসক্রিপশন’ কতখানি পালন করে বিএনপি এবং মহাসচিব পদে কাকে বসানো হয় এসব বিষয় আওয়ামী লীগের তীক্ষè পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সম্মেলন শেষ হলে দলটিকে মোকাবেলা করার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষা করার দায়িত্ব কার বা কার কার ওপর অর্পণ করা হয় সে বিষয়টিও গভীর গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। সরকার ও দলের নেতারা মনে করেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের ওপর। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এখন বিএনপির অবস্থান একেবারেই শূন্যের কোটায়। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন করার মতো বিএনপিতে কোনো ডায়নামিক নেতা এ দায়িত্ব পাক তা চায় না শাসক দল।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন কয়েকজন নেতা বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দায়িত্ব পাক তা চায় ক্ষমতাসীনরা। তাহলে বিএনপিকে গোপনে নিয়ন্ত্রণ করার মতো সুযোগ থাকবে আওয়ামী লীগের হাতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, বিএনপি বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তাদের কর্মকা- আওয়ামী লীগ পর্যবেক্ষণ করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, বিএনপি আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। তাই তাদের মোকাবেলা করার জন্য দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিএনপির কার্যক্রম আওয়ামী লীগ কড়া নজরে রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজি জাফরউল্লাহ বলেন, বিএনপির সম্মেলনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে আমরা চাই, বিএনপিতে সঠিক নেতৃত্ব আসুক। তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল ভুল নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাক, আমরা তাও চাই না।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমরা ভাবব কেন? বিএনপির প্রতি মানুষের কোনো আস্থা-বিশ্বাস নেই। তিনি বলেন, জনগণ দেখেছে, কিছুদিন আগে বিএনপির শীর্ষ দু’টি পদে মা-ছেলে দুই আসামি আসীন হয়েছেন। এতে করে জাতি দলটির রাজনীতি নিয়ে আরো হতাশ হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন