ভোর ৬টা। চারদিকে বসন্তের মৃদু মৃদু হাওয়া বইছে এমনি সময়ে ব্যাগ, ট্রলি, কাঁথা বালিশ, কোদাল, কর্নী, বেলছা, গাইতি ইত্যাদি নানা ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে হাজির হতে লাগলো কিছু শিক্ষার্থী, এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের ছাত্রছাত্রী। সকলেরই উদ্দেশ্য একটাই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন, ফিল্ড অফিসার খোকন মিয়া, শুভ ভাইকে সাথে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দুর গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনর্গঠনের জন্য অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করা।
টানা ৫ ঘণ্টা বাস ভ্রমণের পর গিয়ে পৌঁছালাম এগারসিন্দুর গ্রামে, সকলে সুস্থ হয়েও স্যার থাকার ব্যবস্থা করলেন এগারসিন্ধুর সুফিয়া আফতাব চক্ষু হাসপাতালে। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড খালি থাকায় নিচতালায় পুরুষ ওয়ার্ডে আমাদের এবং দু’তালায় মেয়ে ওয়ার্ডে মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা হলো।
শুরুতেই জুলকারনাইন স্যার সবার দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন মীম, আশা, মৌ, কলি ড্রয়িং-এর দায়িত্বে মনজিত, মেহেদী, আসিফ, রাজিব ছবি তোলার দায়িত্বে, ছোঁয়া, সুরঞ্জন জিপিএস রিডিং নেয়ার দায়িত্বে নমুনা সংগ্রহের কাজে রতœা, রাজু, সম্পদ, পূজা সাইট সার্ভে ফর্ম পূরণের দায়িত্বে শিমুল, রিফাত, সিফা, পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্বে ইতি, আশফাক, সৃজন ইতিহাস সংগ্রহের দায়িত্বে মহসিন, নাসিমা, প্রীতি, শিলা, তিতলী, জরিপে অভি, সিয়াম, আল-আমিন, কেয়া, খননের দায়িত্বে নাহিদ, সম্পদ, মুরাদ, বোরহান, ফয়সাল এবং সাইট ম্যানেজমেন্ট প্লানিং আমি, শারমিন, আমিনা।
আমরা যার যার কাজ বুঝে নিয়ে মঠে নেমে পরলাম প্রথমেই বৈরাগীর আখড়া, শাহ মোহাম্মদ মসজিদে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার পর স্যারের তীক্ষèদৃষ্টি গিয়ে পরলো মাটি কাটার ফলে বের হয়ে আসা বিভিন্ন মৃৎ পাত্রের অংশের দিকে স্যার হালকা খনন করে বের করতে লাগলেন মাটির তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র এই প্রতœস্থানের নাম নির্ধারণ করা হলো এগারসিন্দুর বাদশাবাড়ি মেহেদী খোকনের ভিটা পরবর্তী কয়েকদিন খনন গ্রুপের গুরু দায়িত্ব পরলো এই স্থানের খননকার্য পরিচালনা করা ।
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাদের প্রতœখনন ও প্রতœ অনুসন্ধান চলতে লাগলো আমাদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি, পাওয়া গেছে উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত, মার্তৃকা মূর্তি, মাটির তৈরি প্লেট, ঢাকনা, পাতিল, বদনা, পানপাত্র, কলস-এর মুখ, হুক্কার মুখের অংশ, ম্যাট ডিজাইনের মৃংপাত্র আরা অনেক কিছু।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই বসত আড্ডা সারদিনের কাজকর্মের অগ্রগতি থেকে শুরু করে গল্পগুজব কোন কিছুই বাদ পরতো না, প্রীতি, আশা, মৌ, মীমের গানের সাথে তাল মেলাতো বাকি সবাই।
ষ আবু সায়েম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন