বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কেন্দ্রীয় পদ পেতে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : দলের জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে কেন্দ্রে ‘ভাল’ পদ পেতে চট্টগ্রাম বিএনপির অন্তত দেড়ডজন নেতা জোর লবিং করে যাচ্ছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামÑ জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুরু করে কেন্দ্রে বিভিন্ন পদে স্থান পেতে আগ্রহী এসব নেতার প্রায় সবাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামী ১৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলের দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে এসব নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। পদপ্রত্যাশী নেতাদের ব্যস্ততারও শেষ নেই।
দলের হাইকমান্ডের নেক নজরে পড়তে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন তারা। চেয়ারপার্সনের সুদৃষ্টি লাভে চেষ্টারও কোন কমতি নেই। কেউ কেউ আবার লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থন আদায়েও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে দলে ‘এক নেতা এক পদ’ এ নীতি চালু হলে চট্টগ্রাম বিএনপিতে অনেক পদশূন্য হতে পারে। ওই শূন্যপদে নিজেদের ঠাঁই করে নিতেও মহানগর এবং জেলা নেতাদের লবিং তদবির অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের নেতাদের অবস্থান রয়েছে। এখানকার নেতাদের অনেকেই দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। আসন্ন ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতাদের অনেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে পদ প্রত্যাশী নেতারা কাক্সিক্ষত পদ পেতে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পেতে তৎপর একাধিক নেতা। জানা যায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীÑ এ দুই সাবেক মন্ত্রী দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এর আগে দলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে ছিলেন। বিএনপি ছেড়ে নতুন দল এলডিপি গঠন করার আগপর্যন্ত তিনি বিএনপির ওই নীতি নির্ধারণী ফোরামে সদস্য ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রামের আরেক নেতা মরহুম ডাঃ এ এফ এম ইউসুফও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রামের নেতারা সর্বোচ্চ ফোরামে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়ে যাওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এখন চট্টগ্রামের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। এবারের কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে চট্টগ্রামের একাধিক নেতা স্থান পেতে পারেন এমন ধারণা জোরালো ধারণা করা হচ্ছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও ভাল পদ পেতে নানা তদবির করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রে ভাল পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি দলের স্থায়ী কমিটি কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান পেতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজারের বাসিন্দা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। তিনিও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে চান।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মামলার পাশাপাশি সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। জানা গেছে, তিনিও দলে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনিও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার দলে ‘ভাল’ পদ পেতে চান।
দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে আরও তৎপর রয়েছেন সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, নগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সহ-সভাপতি শামসুল আলম, দক্ষিণ জেলা নেতা গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামাল নিজাম। এছাড়া পার্বত্য বান্দরবান জেলার নেত্রী ম্যা ম্যা চিং, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, চাকসুর সাবেক এজিএস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম, প্রবীণ বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই কেন্দ্রে বিভিন্ন পদ পেতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
এক্ষেত্রে নারী নেত্রীরাও পিছিয়ে নেই। মহিলা দলের সভানেত্রী নূরী আরা ছাফা, সাবেক এমপি দলের শিশু বিষয়ক সম্পাদিকা রোজী কবির, বিএমএ’র সাবেক নেত্রী ডাঃ কামরুন নাহার দস্তগীর, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদিকা ফাতেমা বাদশা, নগর কমিটির সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনিসহ একদল নারী নেত্রী কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতারাও কেন্দ্র কিংবা মহানগর ও জেলায় পদ পেতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদের পাশাপাশি জেলা এবং মহানগরীর বিভিন্ন পদেও আসীন রয়েছেন বিএনপি নেতারা। জানা গেছে, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নেতাদের একাধিক পদে থাকার বিষয়টি বাদ দেয়া হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে কেন্দ্রে যারা বড় পদ পাবেন তারা জেলা এবং মহানগরীতে কোন পদে থাকবেন না। আর এসব পদে স্থান পেতে জেলা এবং মহানগরীর নেতারা আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের এক ডজনেরও বেশি নেতা। আগামী ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতারা তৎপর হয়ে উঠেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন। দলের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন