শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মিরপুরের উচ্ছ্বাস থামল সাগরিকায়

চট্টগ্রাম টেস্ট হেরে সিরিজ ড্র

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ : ৩০৫ ও ৭১.২ ওভারে ১৫৭
অস্ট্রেলিয়া : ৩৭৭ ও ১৫.৩ ওভারে ৮৭/৩
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে পরাজিত
ম্যাচ সেরা : নাথান লায়ন (অস্ট্রেলিয়া)
সিরিজ সেরা : লায়ন ও ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
বিকেলের আলো ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। আলো জ্বলে উঠেছে সাগরিকায়। সেই আলোর কিছুটা কেড়ে নিয়ে আবারও বাউন্সারে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ইনিংসে তার বলে লেগ গালিতে ধরা পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। এবার হুক করতে গিয়ে ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে, সৌম্য সরকারের হাতে। স্টিভেন স্মিথকে দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিরিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের গøাভসবন্দি হন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। প্রান্ত বদল করে বোলিংয়ে ফেরা সাকিব আল হাসান বিদায় করেছেন ম্যাট রেনশকে। স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে সেই মুশফিকের গøাভসবন্দি বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানও। ৮৬ রানের ক্ষুদ্র লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০.৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার যখন এমন পড়িমরি দশা, আশা জেগেছিল ম্যাচটি অন্তত ৫ম দিনে গড়ানোর। তবে সেই আশা আশাই থেকে গেছে, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর বোলারদের এমন ঝলক শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে, হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে দুঃস্বপ্নের ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করে চট্টগ্রাম টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। ন্যাথান লায়নের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৭ উইকেটে জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। এই নিয়ে ৭টি সিরিজ ড্র করলো বাংলাদেশ।
যে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশকে দেখা গিয়েছিল মিরপুর টেস্টের শুরু থেকেই, সেই দলটি চট্টগ্রামে এসেই যেন উবে গেছে কর্পুরের মত। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে উইকেট, নাকি সেই রঙের ভেল্কিতে পড়ে নিজেরাই কুপোকাত নিজেদের জালে? এমনই সব প্রশ্নের ডালা সাজিয়ে শুরু হয়েছিলো চতুর্থ দিনটি। যার উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই নাথান লায়নের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানে।
দিনের শুরুটা ছিল স্বপ্নময়। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটের পতন ১১ বলেই। রান যোগ হয়নি একটিও। কে জানত, এরপরই অপেক্ষায় ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন! একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়ার মিছিল। প্রথম ইনিংসের ঘাটতি পোষানোর অনেক আগেই শেষ দ্বিতীয় ইনিংসের আধেক। এরপর ছোট দু-একটি জুটি আর খানিক লড়াইয়ে বাঁচল মান। তবে টিকল না আশা। ম্যাচের শেষ ইনিংসের আগেই অনেকটাই শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন।
লড়াইটা জমতে দেননি মূলত নাথান লায়ন। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচে ১৫৪ রানে ১৩ উইকেট, এই অফ স্পিনারের ম্যাচ সেরা বোলিং। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো বোলারের সেরা বোলিং। এশিয়ায় কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারের সেরা বোলিংও। আলাদা করে বলতে হবে প্যাট কামিন্সের কথাও। পেস-প্রতিকূল উইকেটে আবারও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। প্রথম স্পেলে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন, পরে ফিরে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিমের উইকেটও।
ব্যাটিং হতাশার মিছিলে শুরুটা ছিল সৌম্যকে দিয়ে। প্রথম ইনিংসের চোয়ালবদ্ধ সৌম্য এদিন উধাও। দারুণ দুটি শট খেলে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কামিন্সের গতি, বাউন্স ও লাইনের সামনে মনে হলো অসহায়। কামিন্সের সামনে এদিন খানিকটা নড়বড়ে ছিলেন তামিম। তবে ওই সময়টুকু পার করে উইকেট দিয়ে এলেন লায়নকে। আগের টেস্টে লায়নকে বেরিয়ে এসে খেলে বেশ সফল হয়েছিলেন। এদিনও একটি চার মেরে ইঙ্গিত দিলে একই পথে এগোনোর। তবে এবার জয় লায়নের। তামিমকে বাইরে টেনে এনে উপহার দিলেন স্টাম্পিং।
তখনও অনুমান করা যায়নি সামনে কী অপেক্ষায়। দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে বিদায় ইমরুল কায়েস। ত্রাতা হতে পারলেন না সাকিব আল হাসানও। বিস্ময়করভাবে চার নম্বরে উন্নীত নাসির হোসেন ব্যর্থ সুযোগ কাজে লাগাতে। ইনিংসের বয়স তখন ২০ ওভারও হয়নি। দলের রান ৫ উইকেটে ৪৩। বড় রান তুলে চ্যালেঞ্জ জানানো বহুদূর, ইনিংস পরাজয় এড়াতে তখনও চাই ২৯ রান! ষষ্ঠ উইকেট জুটি বাংলাদেশকে লিডে নিয়ে গেল। লাঞ্চ পর্যন্ত নিরাপদে কাটল। তবে দলের রান তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে সেই জুটিও শেষ। সাব্বির রহমানের (২৪) বিদায়ে ভাঙল ৫৪ রানের জুটি। সাব্বির যেভাবে খেলছিলেন, আউটটি যে কোনো সময় অবধারিতই মনে হচ্ছিলো। বিপর্যয়েও খেলছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সব শট। এমনি লাঞ্চের আগে ওভারেও পরপর দুই বলে খেললেন রিভার্স সুইপ। শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে এসে স্টাম্পড।
ক্যারিয়ার জুড়ে তিন-চারে খেলে যাওয়া মুমিনুল হকের দেখা মিলল আটে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে স্পিন ভালো খেলছিলেন দুজন। স্টিভেন স্মিথ ফিরিয়ে আনলেন পেস। ভাঙল এই প্রতিরোধও। কামিন্সের অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলে খোঁচা মারার লোভ সামলাতে পারলেন না মুশফিক। অধিনায়কের ১২৮ মিনিটের লড়াইয়ের সমাপ্তি ৩১ রানে। একটু পর একই পথের পথিক মুমিনুল (২৯)। দলকে টানার দায়িত্ব মাঠে ফেলে আসলেন সুইপ করতে গিয়ে। লায়ন পূর্ণ করলেন ম্যাচে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের। ছিল না তাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যটাকে নেওয়া গেল না তিন অঙ্কেও।
শেষ হলো আরোকটি স্বপ্নের। মিরপুরে সাড়ে তিন দিনে হারের জবাব চট্টগ্রামে চার দিনে জিতেই দিল অস্ট্রেলিয়া। বড় দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ের স্বাদটা বাংলাদেশের রইল অধরাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন