উপর্যুপুরি ২ দফার বন্যায় বিপর্যস্ততার মধ্যেই লড়ে যাচ্ছে, উত্তরের চাষীরা। বিশেষ করে আমন চাষীরাই রয়েছে লড়াইয়ের ফ্রন্ট লাইনে। সর্বত্র একই আলোচনা, শঙ্কা ভয়, শেষ পর্যন্ত আমন চাষের টার্গেট পূরণ হবেতো ? শঙ্কার কারণ, ৮৮’ ও ৯৮ এর পরে এতটা ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হতে হয়নি উত্তরের চাষীদের। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের বন্যার প্রকৃতির ধরনেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এবার ২য় বারের বন্যায় বেছে বেছে যেন আমনের এলাকা গুলোতেই আঘাত হেনেছে বন্যা। বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুর হাট ও দিনাজপুরের এমন কিছু এলাকায় হানা দিয়েছে বন্যা, যে গুলোকে মনে করা হতো বন্যামুক্ত অঞ্চল!
আমন ধানের জন্য বিখ্যাত বগুড়ায় সাধারণত প্রতি বছরই বর্ষা বা বিলম্বিত বর্ষায় যমুনার পুর্ব পাড়ের নির্দিষ্ট এলাকা কয়েক দিনের জন্য প্লাবিত হয় ফলে এই এলাকার চাষীরা এখানে বিলম্বিত জাতের গাইঞ্জা জাতের আমনের চাষ করে থাকে। তবে এবারের ২দফায় সৃষ্ট বাঙালী, করতোয়া ও নাগর নদীর বন্যায় অন্যান্য মওশুমি ফসলের সাথে আমনের ৩০ শতাংশ জমির আমনের ধান পচে নষ্ট হয়ে যায়। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলের দুপচাঁচিয়া , কাহালু ও আদমদীঘীর আংশিক আমনের জমির ধান বানের পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়।
এত কিছুর পরও চলছে , আমনের টার্গেট পুরণের শেষ প্রচেষ্টা। ব্যাপক চাহিদার কারণে আমনের চারার দাম হয়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়া দূর্মুল্য। শনিবার বগুড়ার বৃহত্তম (বগুড়া - রংপুর মহা সড়কের ) মহাস্থান হাটে বিভিন্ন জাতের আমনের চারা বিক্রি হয়েছে প্রতি পোন ৭শ থেকে ৮শ টাকা দরে। এই হাটের ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানালেন , ‘‘যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুন বেশি। ’’
শনিবার দুপুরে মহাস্থান হাটে প্রবেশের সময় দেখা গেল একটি পায়ে চালিত ভ্যানে একজন চালক এক পোন ( ৮০ টির গোছা ) ধানের চারা নিয়ে খুশি মনে বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছে। জিজ্ঞাসার ব্যাপারে ভ্যান চালক পুটু মিয়া জানালো , বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পীরগাছায় তার নিজের ২৮ শতাংশ জমিতে লাগানো আমনের অর্ধেকই নষ্ট হয় বানের পানিতে। ওই জমি থেকে পানি সরে যাওয়ায় তিনি এখন সেখানে শ্াঁইল্যা ( পোলাওয়ের সুগন্ধী ) জাতের ধান লাগাবেন। ৪শ’ টাকার চারা বাধ্য হয়ে কিনেছেন ৮শ টাকায়। তারপর ও এত বিলম্বে আমনের চারা পাওয়াটাকে তিনি মনে করছেন ভাগ্যের ব্যাপার।
মহাস্থান হাটের যে অংশে আমনের চারা বিক্রি করা হচ্ছে, সেখানে ক্রেতা হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলার ইউছুফ ও বগুড়া সদরের তেলিহারার আব্দুল করিম জানালেন , এই হাট থেকে বগুড়া ছাড়াও পাশ্ববর্তি গাইবান্ধা ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকেও চাষীরা এসে বীজ ধান ও চারা কিনে নিয়ে যায়। তারা সবাই বললেন , ‘‘১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগানো যাবে আমনের চারা।’’ বগুড়া ও জয়পুরহাটের কৃষি কর্মকর্তারা ও জানালেন, সরকারি বিভিন্ন প্রনোদনার প্যাকেজ সুবিধা ছাড়াও চাষী পর্যায়ে যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে , তাতে শেষ পর্যন্ত আমনের চাষ ও উৎপাদনের টার্গেট পুরণ হতে পারে বলে আশাবাদি কৃষি কর্মকর্তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন