রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবার ভয় থেকে মিয়ানমারে চলছে মুসলিম গণহত্যা

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বার্মায় (মিয়ানমার) গত ৬৫ বছরের সামরিক শাসনে সেনাবাহিনী দেশের প্রায় প্রতিটি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠি শান, কারেন. কাচিন, কারেনি, মন, চিন ও বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু তাদের গণহত্যার শিকার হয়েছে শুধু রোহিঙ্গারা, সে গণহত্যা এখনো চলছে। মিয়ানমারের ৫ কোটি ১৪ লাখ জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে বর্মী জাতিগোষ্ঠি। সেখানকার অন্য সকল গ্রুপ স্বায়ত্ত শাসন না থাকায় বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহ করেছে। বস্তুত, একজন নির্বাচিত বেসামরিক নেতা একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন যেখানে সংখ্যালঘুদের তাদের নিজেদের ব্যাপারে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই ফেডারেল রাষ্ট্র গঠন বন্ধ করার জন্যই ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। তবে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বিষয়টি বিশেষ ব্যাপার, কারণ তারা প্রায় সবাই মুসলমান।
অন্য সংখ্যালঘুরা সবাই বৌদ্ধ, অন্তত তত্ত¡গত ভাবে। শুধু বিদ্রোহ দমন করতে সেনাবাহিনী প্রচুর সংখ্যায় তাদের হত্যা করে। রোহিঙ্গারা কখনো বিদ্রোহ করেনি। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের ভয়ে শংকিত ও নির্যাতিত। এখন বার্মার সেনাবাহিনীর দাবি যে রোহিঙ্গারা সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী , তাই তারা তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা ১৪ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে আসে এবং মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তাদের বৌদ্ধ প্রতিবেশীদের মতই ছিল দরিদ্র কৃষক। ১৯৬২ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পূর্ব পর্যন্ত তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্ত তখন থেকে তাদের বহিরাগত ও শত্রæ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উগ্র জাতীয়তাবাদী সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের উপর প্রথম প্রকাশ্য হামলা চালায় ১৯৭৮ সালে। তারা রোহিঙ্গাদের হত্যা করে, তাদের বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয় ও মসজিদ ভেঙ্গে বা পুড়িয়ে দেয়া হয়। সে সময় প্রতিবেশীরা তাদের উপর হামলা চালাতে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে।
১৯৮২ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। সরকারী অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ, জমির মালিকানা লাভ নিষিদ্ধ করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। নব বিবাহিত দম্পতিকে দু’টির বেশী সন্তান না নেয়ার অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করতে হয়। ১৯৯০-৯১ আরেক দফা সামরিক অভিযানে আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
এ সময় মিয়ানমারের শহরগুলোতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে গোলযোগের সূচনা ঘটে। এ মুসলমানদের সংখ্য প্রায় ১০ লাখ। তাদের অধিকাংশই মধ্য ১৯ শতকে ব্রিটিশরা বার্মা জয় করার পর ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে আসা অভিবাসীদের বংশধর।
মুসলমানদের সাথে বৌদ্ধদের এই শত্রুতার পিছনে আছে মনের ভেতরে বাসা বাঁধা ইসলাম ভীতি। তাদের ভয় যে এক সময় আফগানিস্তান থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের দেশগুলোর যে অবস্থা হয়েছে সে রকম ইসলামও মিয়ানমার থেকে বৌদ্ধ ধর্মকে বিতাড়িত করতে পারে। দ্রুত জন্মহারের কারণে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তারা মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। অথচ এ ভয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, কারণ সরকারী হিসাব মতেই মিয়ানমারে মুসলমানদের সংখ্য মাত্র ৪ শতাংশ।
রাখাইনের রোহিঙ্গা কৃষকদের সাথে মিয়ানমারের বড় শহরগুলোতে বাস করা মুসলিম বণিকদের সামান্যই মিল আছে। কিন্তু তারাই সেনাবাহিনীর ক্রোধের শিকার। এর কারণ সম্ভবত এই যে রাখাইনই হচ্ছে মিয়ানমারের একমাত্র প্রদেশ যেখানে মুসলমানরা ছিল সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
রোহিঙ্গাদের উপর হামলা, যাকে তাদের ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃসম্প্রদায় দাঙ্গা বলা হত, এ বছর সে হামলা বেড়েছে এবং তা সোজাসুজি জাতিগোষ্ঠিগত নিধনে পরিণত হয়েছে। বর্মী সেনারা রোহিঙ্গাদের সবাইকে মেরে ফেলতে চায় না, তারা বাকিদের সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে পাঠাতে চয়। কিন্তু তারা যা করছে তা গণহত্যা।
এখন তারা তাদের অভীষ্ট পূরণের পথে ভালোই এগিয়েছে। এর জন্য দায়ী বিভ্রান্ত তরুণ রোহিঙ্গাদের ছোট একটি দল যারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আমির্ (আরএসএ) নামে পরিচিতএকটি দুর্বল প্রতিরোধ গ্রুপ। তারা ২৫ আগস্ট রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে ১২ জন পুলিশ ও শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়।
আরএসএ-র অস্ত্র হচ্ছে ঘরে তৈরি গাদা বন্দুক ও তরবারি। কিন্তু বার্মা সরকার একে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করে এবং পাল্টা অভিযান শুরু করে যা স্থানীয়দের ভাষায় চূড়ান্ত পদক্ষেপ।
জাতিসংঘের মতে, গত দু’সপ্তাহে ৩ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তারা পিছনে ফেলে এসেছে অসংখ্য মৃত লাশ। যারা রয়ে গেছে তাদের সংখ্যা এখনো প্রায় পাঁচ লাখ। তাদের বেশির ভাগই আছে উদ্বাস্তু শিবিরে, বর্মী শাসকরা সতর্কতার সাথে সেগুলোকে বন্দী শিবির বলে না।
মিয়ানমারের আবাসিক সাধিকা অং সান সু কির খবর কি যিনি গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের কার্যত প্রধান (অবশ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সামরিক বাহিনী যার ব্যাপারে এখনো ভেটো দিতে পারে)? কোনো অন্যায় হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন