শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একনেকে ৫১৮১ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

মসজিদ, মন্দির উন্নয়নে ৬৬৫ কোটি টাকা পেল এমপিরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে সারা দেশে মসজিদ, মন্দিরসহ সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের ৬৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিল সরকার। গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া এই টাকা দিয়ে সংসদ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ আসনের কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা, ঈদগাহ, খেলার মাঠ উন্নয়ন ও সংস্কারে খরচ করতে পারবেন। এমপিরা তাদের নিজ নিজ এলাকার মসজিদ, মন্দিরের তালিকা দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সে তালিকা ধরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। গতকালের একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিটি উপজেলায় এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাবে। সে হিসেবে কোনো এমপির আসনে যদি দুটি উপজেলা থাকে, তিনি পাবেন দুই কোটি টাকা, আবার কোনো এমপির আসনে যদি চারটি উপজেলা থাকে, তিনি পাবেন চার কোটি টাকা। এবারের বন্যায় যেসব স্কুল, মসজিদ, মন্দিরসহ অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় সেসব অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন।
এদিকে গতকালের একনেক সভায় ‘গোপালগঞ্জে বহুতলবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন’ শিরোনামের আলাদা একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১১তলা বিশিষ্ট ভবনটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পেছনে যুুক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা শহরে ৫৫টি সরকারি দপ্তর রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি দপ্তরের নিজস্ব ভবন না থাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন ভাড়া নিয়ে দাপ্তরিক কাজ পরিচালন করতে হচ্ছে। এই ১৬টি দপ্তরের জন্য প্রতিমাসের চার থেকে পাঁচ লাখ সরকারি কোষাগার থেকে ভাড়া বাবদ ব্যয় হচ্ছে। অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরেও একই চিত্র। এসব দপ্তরের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক ভবনের পরিবর্তে একই স্থানে পরিকল্পিতভাবে সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করলে দাপ্তরিক কাজের গতি দ্রæত ও সহজ হবে। গতবছর মার্চে ‘মাদারীপুরে সরকারি অফিসমূহের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব জেলা সদরে মাদারীপুরের মতো সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেন। তারই অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে বহুতলবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হলো।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় পাঁচ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে দশটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৪ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ২০ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসাবে ৬৯৯ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছে সরকার। চলমান রোহিঙ্গ সংকটের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
গতকালের একনেক সভায় নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তিনটি জোনে ৬০০ জন সুইপার ও ক্লিনার স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরু করে। যদিও তাদের উন্নত আবাসস্থল নেই। ৬০০টি পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সিটি কর্পোরেশনে বসবাস করে। তাদের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সুবিধা নেই। অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ৪টি ভবনে মোট ৫৪৯টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনের নিচ তলা শিশুদের পাঠদানের উদ্দেশে স্কুল হিসাবে ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত আবাসস্থল নির্মাণ, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা ও শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর টানবাজার, ইসদাইর ও রিশিপাড়া এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি।
৯৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে গতকাল একনেক সভায় বাংলাদেশের ‘২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা’ শিরোনামের আলাদা একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে ২৩টি পৌরসভার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবমান উন্নত করা হবে। একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো- এক হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ৯৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলায় খুদবান্দি, সিংড়াবাড়ী ও শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্প।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন