বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনা উপকূলে বিনিয়োগের হাতছানি

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা অঞ্চলে এখন বিনিয়োগের হাতছানি। পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরবর্তী ৫ বছর সময়ের মধ্যে খুলনাঞ্চলের অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণ হবে। ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির ক্ষেত্রসমূহ বিন্যস্ত এবং সম্প্রসারিত হবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ খাত উন্মোচিত হবে। পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরবর্তী সুফল পেতে হলে পদ্মাসেতুর পশ্চাদভূমি হিসেবে বিবেচিত এ অঞ্চলের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিকাশে খুলনাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানসমূহের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তা Ñ এ অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের রোডম্যাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের অন্তত ১০ জেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি নানামুখী বিনিয়োগ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের বৃহৎ অনেক বিনিয়োগ প্রকল্প যেমন খানজাহানআলী বিমান বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন এবং রূপসা নদীতে রেলসেতু, আধুনিক রেলস্টেশন, পাইপলাইনে গ্যাস ইত্যাদি অন্যতম। সরকারের গৃহীত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্যই হলোÑখুলনা উপকূলরেখার অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বিকশিত করা। দীর্ঘকালের অর্থনৈতিক বৈষ্যমকে দূর করা। উপকূলের পোটেনসিয়ালিটিকে কাজে লাগানো। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে উপকূলের অবদানকে গ্রোথিত করা। সার্বিকভাবে, পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন-পরবর্তী সময়ে খুলনা উপকূলে বিনিয়োগের যে অবারিত ক্ষেত্র প্রসারিত হবে সে ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মূল্যকে জাতীয় আয়ে রূপান্তরিত করা।
ভবিষ্যৎ অর্থনীতির বিশ্লেষণে দেখা যায়, পদ্মাসেতুকে আবর্তিত করে বেসরকারি উদ্যোগও থেমে নেই। বরঞ্চ অনেকটা নীরবেই এই উদ্যোগ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মার এ পারের জেলাসমূহ শরিয়তপুর মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট ও খুলনার বুক চিরে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের উভয় পাশের ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, জমির মূল্য কমপক্ষে ২০ গুণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এই মহাসড়কের পাশে এখন আর খালি জমি নেই বললেই চলে। আর যা আছে তার দাম পদ্মাব্রিজপূর্ব সময়ের তুলনায় কমপক্ষে ২০ গুণ।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উল্লেখিত মহাসড়কের প্রান্তসীমার এ জমি ৮০ শতাংশই বেসরকারি মালিকানায় হাতবদল হয়েছে কোন না শিল্প, আবাসন, পর্যটন, কৃষি খাতভিত্তিক অথবা সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের সাথে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিস্থাপনের প্রেক্ষাপট রচনায় পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী জেলায়ও বিভিন্ন বিনিয়োগ উদ্যোগ কার্যক্রম শুরু করেছে।
মোটকথা, দীর্ঘকালের অবকাঠামোগত সুযোগের অভাবে স্থবির হয়ে পড়ে থাকা সম্ভাবনাময় খুলনা উপকূলরেখা এখন পদ্মাসেতুর মত মেগা যোগাযোগ অবকাঠামোকে নির্ভর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের আদর্শক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে। পদ্মাসেতুর পাশাপাশি খানজাহান আলী বিমান বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেলপথ এবং রূপসা নদীতে রেলসেতু, পাইপলাইনে গ্যাস, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, মোংলা ইপিজেড-এর মত শিল্প ও বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় থাকায় বিনিয়োগকারীরা এখন বিশ্বাস করছে যে, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের শিল্পজট, যানজট, জাহাজজট ও মানবজটের মত নানা প্রতিবন্ধকতার বাইরে খুলনা উপকূলই হতে পারে আগামীর জন্য প্রতিশ্রুত এবং সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের এবং প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলির এমনি মনোভাবের প্রেক্ষাপটে খুলনা উপকূলের সম্ভাব্য এই বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ড, বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংক ও অর্থলগ্নকারী প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানী, জয়েন্ট স্টক কোম্পানী, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, ভূমি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা), কাস্টম ও ভ্যাট, রাজস্ব বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের বিনিয়োগবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি বিনিয়োগের এই হাতছানিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে ভূমিকা রাখবে।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ৭০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখার প্রায় ৬০ শতাংশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলভাগের অন্তর্গত যে এলাকা মূলত পদ্মাসেতুর পশ্চাদভূমি হিসেবে বিবেচিত। খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের অর্ন্তগত এ উপকূলরেখা এখন পদ্মাসেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি ও সহজ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এখানে রয়েছে মংলা সমুদ্র বন্দর-যে বন্দরের মাধ্যমে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের বন্দরভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও নব্য প্রতিষ্ঠিত পায়রা সমুদ্র বন্দরও এ এলাকায় বন্দরভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এক অর্থে দেশি এবং বিদেশি শিল্প ও বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং সম্প্রসারণে মৌলিক যে অবকাঠামোগত সুবিধা প্রয়োজন হয় তা খুলনা দক্ষিণাঞ্চলে এখন সহজলভ্য হতে চলেছে। এ সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের কারণে মাইক্রো-ম্যাক্রো উভয় ধরনের বিনিয়োগ উদ্যোগই এখন উপকূলজুড়ে দৃশ্যমান। এ উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে খুলনাকে কার্যতভাবে একুশ শতকের উদীয়মান অর্থনীতির রাজধানী হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন